প্রথমত: আল্লাহর তাওহীদ সম্পর্কে তার আকীদা এবং শরীয়ত সম্মত উসীলার বর্ণনা ও বিদআতী উসীলা বাতিলকরণ:
ইমাম আবূ হানীফা রহ. বলেন, কারো জন্য উচিত নয় যে, সে আল্লাহকে তার নাম ছাড়া ডাকবে। আর আল্লাহকে ডাকার ক্ষেত্রে দো‘আর অনুমতি যেভাবে দেওয়া হয়েছে সেটিই নির্দেশিত যা তার বাণী থেকে গৃহিত:
আর আল্লাহর জন্যই রয়েছে সুন্দরতম নামসমূহ। সুতরাং তোমরা তাঁকে সেসব নামেই ডাক। আর তাদেরকে বর্জন কর যারা তাঁর নামে বিকৃতি ঘটায়। তারা যা করত অচিরেই তাদেরকে তার প্রতিফল দেয়া হবে।
আল আরাফ : ১৮০
ইমাম আবূ হানীফা বলেন, দু‘আকারীর জন্য এ কথা বলা মাকরূহ যে, (হে আল্লাহ!) আমি তোমার নিকট অমুকের উসীলায় কিংবা তোমার নবীগণ ও তোমার রাসূলদের উসিলায় ও তোমার কাবা ঘর ও মাশআরে হারাম (অর্থাৎ পবিত্র নিদর্শনাবলী) এর উসীলায় প্রার্থনা করছি।
ইমাম আবূ হানীফা বলেন, কারো জন্য উচিত নয় যে, সে আল্লাহকে তার নাম ছাড়া ডাকবে। আর আমি অপছন্দ করি তোমার ‘আরশের ইজ্জতের বন্ধনের উসিলায় অথবা তোমার সৃষ্টির অসীলায় বলা।
দ্বিতীয়ত: সিফাত সাব্যস্ত এবং জাহমিয়্যাদের প্রতিবাদ তার বাণী:
তিনি বলেন, আল্লাহকে মাখলুকের গুণে গুণান্বিত করা যাবে না। আর তাঁর রাগ ও খুশি তাঁর সিফাতসমূহ থেকে দুটি সিফাত নির্দিষ্ট ধরন ব্যতীত। এটি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের আকীদাহ। তিনি রাগ করেন ও খুশি হন। এমন বলা যাবে না যে, তার রাগ মানে তাঁর শাস্তি এবং তাঁর খুশি মানে তাঁর সাওয়াব। আমরা তাঁকে সেভাবেই গুণান্বিত করব যেভাবে তিনি তার নিজের সত্তাকে গুণান্বিত করেছেন। তিনি এক, অমুখাপেক্ষী, তিনি কাউকে জন্ম দেননি, তাকে কেউ জন্ম দেয়নি। তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই। তিনি চিরঞ্জীব, ক্ষমতাবান, সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা এবং প্রজ্ঞাবান। আল্লাহর হাত তাদের হাতের উপরে। তাঁর হাত মাখলুকের হাতের মতো নয় এবং তাঁর চেহারা সৃষ্টির চেহারার মতো নয়।
তিনি আরো বলেন, তার রয়েছে হাত, রয়েছে চেহারা ও নাফ্স, যেমনটি আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে উল্লেখ করেছেন। অতএব কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা যা উল্লেখ করেছেন, যেমন তাঁর চেহারা, হাত ও নাফসের উল্লেখ তা সব তাঁর সিফাত নির্দিষ্ট ধরন ছাড়াই। এমন বলা যাবে না যে, তাঁর হাত হলো তার কুদরত বা তার নি‘আমত। কারণ এতে সিফাতকে বাতিল করা হয়। আর এটিই কাদারিয়া ও মু‘তাযিলাদের কথা।
তিনি আরো বলেন, কারো জন্য আল্লাহর সত্তা সম্পর্কে কথা বলা উচিত নয়। বরং তিনি নিজেকে যে গুণাবলী দ্বারা গুণান্বিত করেছেন তাকে তা দ্বারাই গুণান্বিত করতে হবে নিজস্ব রায়ের উপর ভিত্তি করে তাঁর ব্যাপারে কিছু বলবে না। বিশ্বজাহানের রব আল্লাহ তা‘আলা সুমহান।
যখন তাকে নুযুলে ইলাহী সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলো তিনি বলেন, তিনি নাযিল হন কোনো ধরন ছাড়াই।
আবূ হানীফা বলেন, আল্লাহকে উপর থেকে ডাকা হবে নীচ থেকে নয়। কারণ, নীচ কোন ভাবেই রুবুবিয়্যাত ও উলুহিয়্যাতের গুণ হতে পারে না।
তিনি আরো বলেন, তিনি রাগ করেন ও সন্তুষ্ট হন। এ কথা বলা যাবে না যে, তার রাগ তার শাস্তি এবং তার সন্তুষ্টি তার সাওয়াব।
তিনি আরো বলেন, তিনি তাঁর কোনো সৃষ্টির মতো নন এবং তাঁর কোন মাখলুক তাঁর মতো নয়। তিনি তাঁর নাম ও সিফাতসমূহ দ্বারা সর্বদা গুণান্বিত রয়েছেন এবং সর্বদা থাকবেন।
তিনি আরো বলেন, তাঁর সিফাতসমূহ মাখলুকের সিফাতসমূহের বিপরীত। তিনি জানেন, তবে আমাদের জানার মতো নয়। তিনি ক্ষমতা রাখেন, তবে আমাদের ক্ষমতার মতো নয়, তিনি দেখেন তবে আমাদের দেখার মতো নয়। তিনি শোনেন তবে আমাদের শোনার মতো নয়। তিনি কথা বলেন তবে আমাদের কথার মতো নয়।
তিনি আরো বলেন, আল্লাহ তাআলাকে মাখলুকের গুণাবলী দ্বারা গুণান্বিত করা যাবে না।
তিনি আরো বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলাকে মানুষের কোনো গুণ দ্বারা গুণান্বিত করবে সে কুফরী করল।
তিনি আরো বলেন, আর তার সিফাতসমূহ সত্তাগত ও কর্মগত। সত্তাগত সিফাতগুলো হচ্ছে হায়াত, কুদরাত, ইলম, কালাম, শ্রবন, দর্শন এবং ইচ্ছা। আর কর্মগত সিফাতগুলো হচ্ছে, সৃষ্টি করা, রিযিক দেওয়া, আবিষ্কার করা, উদ্ভাবন করা, তৈরী করাসহ অন্যান্য কর্মগত সিফাত। তিনি তাঁর নামসমূহ ও সিফাতসমূহ দ্বারা আদিতে বিশেষিত ছিলেন এবং অনন্তেও থাকবেন।
তিনি আরো বলেন, তিনি তাঁর কর্মগত বিশেষণের মাধ্যমে সর্বদা কর্মরত। কর্ম করা তাঁর অনাদি সিফাত। আর আল্লাহ তাআলা হলেন কর্তা। আর কর্ম তাঁর অনাদি সিফাত। আর কর্মের ফলাফল মাখলুক, তবে আল্লাহ তাআলার কর্ম মাখলুক নয়।
তিনি আরো বলেন, যে বলে আমার রব আসমানে না যমীনে, আমি তা জানি না, সে কুফরী করল। অনুরূপভাবে সে ব্যক্তিও (কুফরী করল) যে বলে, তিনি আরশে, তবে আরশ যমীনে না আসমানে তা জানি না।
আর তিনি ঐ মহিলাকে বলেন, যে তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিল যে,তোমার ইলাহ কোথায় যার তুমি এবাদত কর? তিনি বললেন, আল্লাহ তা‘আলা আসমানে যমীনে নয়। ফলে তাঁকে এক ব্যক্তি বলল, আল্লাহর বাণীটি দেখেছেন ?আর তিনি তোমাদের সাথেই।আল হাদীদ : ৪তিনি বললেন, তা হলো যেমন তুমি কোন ব্যক্তিকে লিখ, আমি তোমার সাথেই আছি, অথচ তুমি তার থেকে অদৃশ্যে।
তিনি বলেন, অনুরূপভাবে আল্লাহর হাত তাদের হাতের উপরে, তবে তা তার মাখলুকের হাতসমূহের মতো নয়।
তিনি আরো বলেন, আল্লাহ আসমানে রয়েছেন যমীনে নয়। ফলে তাকে এক লোক বলল, আল্লাহ তাআলার বাণীটি দেখেছেন ? “আর তিনি তোমাদের সাথেই।” (আল হাদীদ : ৪) তিনি বললেন, তা হলো যেমন তুমি কোন ব্যক্তিকে লিখ, আমি তোমার সাথেই আছি অথচ তুমি তার থেকে অদৃশ্যে।
তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলা (মুসার সাথে) কথা বলেছেন; মূসা আলাইহিস সালাম (আল্লাহর সাথে) কথা বলেননি।
তিনি বলেন, তিনি নিজে কথা বলার কারণেই কথক (মুতাকাল্লিম) আর কালাম হলো একটি অনাদি সিফাত।
তিনি বলেন, আর তিনি কথা বলেন তবে আমাদের কথার মতো নয়।
তিনি বলেন, মূসা আলাইহিস সালাম আল্লাহর কথা শুনেছেন। যেমনটি আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, “আর আল্লাহ মূসার সাথে সুস্পষ্টভাবে কথা বলেছেন।” আন নিসা : ১৬৪
তিনি বলেন, কথা আল্লাহ তা‘আলাই বলেছেন; মূসা আলাইহিস সালাম কথা বলেননি।
তিনি বলেন, কুরআন আল্লাহর কালাম, মাসাহেফে লিপিবদ্ধ, অন্তরে সংরক্ষিত এবং যবানে পঠিত। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর নাযিলকৃত।
তিনি বলেন, কুরআন মাখলুক নয়।
ইমাম আবূ হানীফার বাণীসমূহ:তাকদীরের বিষয়ে
এক লোক ইমাম আবূ হানীফার এর নিকট তাকদীর—বিষয়ে বিতর্ক করার জন্যে আসল। তিনি তাকে বললেন, তুমি কি জান না যে, তাকদীরে দৃষ্টি দানকারী সূর্যের দুই চোখে দৃষ্টি দানকারীর মতো। যত বেশি দৃষ্টি দিবে তত বেশী হয়রানি বাড়বে।
ইমাম আবূ হানিফা বলেন, আল্লাহ তা‘আলা সকল সৃষ্টি সম্পর্কে তার সৃষ্টি হওয়ার পূর্বেই অবগত ছিলেন।
তিনি আরো বলেন, আল্লাহ তাআলা অস্তিত্বহীন বস্তুকে তার অস্তিত্বহীন অবস্থায় অস্তিত্বহীন হালতে জানেন। তিনি যখন তা সৃষ্টি করবেন কেমন হবে তাও তিনি জানেন। আল্লাহ তাআলা অস্তিত্বশীল বস্তুকে অস্তিত্বশীল অবস্থায় অস্তিত্বশীল হালতে জানেন এবং তার ধ্বংস কিভাবে হবে তাও তিনি জানেন।
ইমাম আবূ হানিফা বলেন, আর তার তাকদীর লাওহে মাহফুজে রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আর আমরা স্বীকার করি যে, আল্লাহ তাআলা কলমকে লিখার নির্দেশ দিয়েছেন, তখন কলম বলল, হে আমার রব! আমি কি লিখবো? তখন আল্লাহ তাআলা বললেন, কিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু হবে তা লিপিবদ্ধ করো। কারণ আল্লাহ তাআলা বলেন, “আর তারা যা করেছে, সব কিছুই ‘আমলনামায়’ রয়েছে।আর ছোট বড় সব কিছুই লিখিত আছে।” আল-কামার : ৫২,৫৩
ইমাম আবূ হানীফা বলেন, দুনিয়া ও আখিরাতে তাঁর চাওয়া ছাড়া কিছুই হয় না।
ইমাম আবূ হানীফা বলেন, আল্লাহ সমস্ত বস্তু সৃষ্টি করেছেন, তবে কোন বস্তু থেকে নয়।
তিনি আরো বলেন, আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি করার আগেই স্রষ্টা ছিলেন।
তিনি আরো বলেন, আমরা স্বীকার করি যে, বান্দা তার আমল, তার স্বীকারোক্তি ও তার জ্ঞানসহই মাখলুক। কর্তাই যখন মাখলুক তার কর্ম মাখলুক হওয়ার আরো বেশি উপযুক্ত।
তিনি বলেন, বান্দাদের সবকর্ম যেমন নড়চড় করা ও স্থীর থাকা তাদেরই উপার্জন, তবে আল্লাহ তাআলা তার স্রষ্টা। আর এ সবই তার চাওয়া, ইলম, ফায়সালা ও নির্ধারণ দ্বারা হয়।
ইমাম আবূ হানীফা আরো বলেন, বান্দাদের সবকর্ম যেমন নড়চড় করা ও স্থীর থাকা প্রকৃত পক্ষে তাদের উর্পাজন, আর তা সৃষ্টি করেছেন আল্লাহ। এ গুলো সবই তাঁর চাওয়া, ইলম, ফায়সালা ও নির্ধারণ অনুযায়ী হয়। নেক আমলসমূহ আল্লাহর আদেশ এবং তার মুহাব্বত, সন্তুষ্টি, ইলম, চাওয়া, ফয়সালা ও নির্ধারণ অনুযায়ী অবধারিত হয়েছে। আর পাপসমূহ তাঁর ইলম, ফায়সালা, নির্ধারণ ও চাওয়া অনুযায়ী হয়, তবে তাঁর মুহাব্বত, সন্তুষ্টি ও তাঁর নির্দেশে হয় না।
তিনি আরো বলেন, আল্লাহ তাআলা মাখলুককে কুফর ও ঈমান থেকে মুক্তাবস্থায় সৃষ্টি করেছেন। তারপর তিনি তাদেরকে সম্বোধন করেছেন, আদেশ দিয়েছেন ও নিষেধ করেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি কুফরী করলো আল্লাহ তাকে অপধস্থ করার কারণেই সে নিজের কর্ম, অস্বীকার ও তার সত্যকে প্রত্যাখ্যান করার দ্বারা কুফরী করলো। আর যে ব্যক্তি ঈমান আনয়ন করলো সে আল্লাহর তাওফীক ও সাহায্য প্রাপ্ত হয়েই নিজের কর্ম, স্বীকারোক্তি ও সত্যারোপ দ্বারা ঈমান আনয়ন করলো।
আর তিনি বলেন, আল্লাহ তা‘আলা আদম সন্তানদের তার মেরুদণ্ড থেকে পরমাণুর আকৃতিতে বের করেছেন, তারপর তাদের জ্ঞানবান করেছেন। তারপর তাদের সম্বোধন করেছেন ও ঈমান আনার নির্দেশ দিযেছেন এবং কুফর থেকে নিষেধ করেছেন, ফলে তারা তার রুবুবিয়্যাত স্বীকার করে। এটি ছিল তাদের ঈমান। তারা এ ফিতরাতের ওপর জন্ম গ্রহণ করে। তারপর যে কুফরী করল সে (ফিতরাত) পরিবর্তন ও বিকৃতি করল। আর যে ঈমান আনল ও বিশ্বাস করল সে তার ওপর অটুট থাকল ও স্থায়ী হল।
তিনি আরো বলেন, তিনিই সবকিছু নির্ধারণ ও ফায়সালা করেছেন। দুনিয়া ও আখিরাতে কোনো কিছুই হয় না তার চাওয়া, ইলম, ফায়সালা, নির্ধারণ ও লাওহে মাহফুযে তার লিখনি ছাড়া।
তিনি আরো বলেন, আল্লাহ তা‘আলা তার সৃষ্টির কাউকে কুফরের ওপর বাধ্য করেন নি আর না ঈমানের ওপর, তবে তিনি তাদেরকে অসংখ্য ব্যক্তিরূপে সৃষ্টি করেছেন। ঈমান ও কুফর বান্দাদের কর্ম। যে কুফরী করে তার কুফরী করা অবস্থায় আল্লাহ তাকে কাফির বলেই জানেন। তারপর যখন সে ঈমান আনে তিনি তাকে মুমিন হিসেবে জানেন এবং তার ইলমের কোনো পরিবর্তন ছাড়া তিনি তাকে ভালো বাসেন।
ইমাম আবূ হানীফা এর বাণীসমূহঈমান বিষয়ে
তিনি বলেন, ঈমান হলো স্বীকার করা ও বিশ্বাস করা
তিনি আরো বলেন, ঈমান হলো মুখে স্বীকার করা ও অন্তরে বিশ্বাস করা। শুধু মুখের স্বীকারোক্তির নাম ঈমান হয় না। এটিই বর্ণনা করেছেন ইমাম তাহাবী ইমাম আবূ হানীফা ও তার দু‘জন সাথী থেকে।
ঈমাম আবূ হানীফা বলেন, ঈমান বাড়ে না এবং কমেও না।
(সংকলক বলেন) আমি বলছি, ঈমান বৃদ্ধি না হওয়া ও না কমা মর্মে তার বাণী এবং ঈমানের নামকরণের ক্ষেত্রে তার আরেকটি বাণী যে, ঈমান হচ্ছে অন্তরের বিশ্বাস ও মুখে স্বীকার করা আর আমল ঈমানের হাকীকত থেকে বাইরের জিনিস। বস্তুত ঈমানের ক্ষেত্রে এ দু’টি বিষয়ই ইসলামের অন্যান্য ইমাম যেমন মালিক, শাফে‘ঈ, আহমাদ, ইসহাক, বুখারী প্রমুখের আকীদাহ ও ইমাম আবূ হানীফার আকীদাহর মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টিকারী। তবে হক তাদের সাথেই রয়েছে।
ঈমাম আবূ হানীফার কথা সত্যকে পাশ কাটিয়ে গেছে, তবে তিনি উভয় অবস্থায় সাওয়াব প্রাপ্ত হবেন। ইবনু আব্দুল বারর ও ইবনু আবীল ইয্য এর আলোচনা থেকে বুঝা যায় যে, আবূ হানীফা তার এ মত থেকে ফিরে এসেছেন। আল্লাহই সর্বাধিক জানেন।
ইমাম আবূ হানীফা এর বাণী সাহাবীদের বিষয়ে:
ইমাম আবূ হানীফা বলেন, আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কোনো সাহাবীর নাম সুনাম ছাড়া উল্লেখ করবো না।
তিনি আরো বলেন, রাসূলের সাহাবীদের কারো সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করবো না এবং কাউকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে বন্ধু বানাবো না।
এবং তিনি বলেন, রাসূলের সান্নিধ্যে তাদের সামান্য সময় অবস্থান করা আমাদের কারো সারা জীবনের আমল হতে উত্তম, যদিও তা দীর্ঘ হয়।
এবং তিনি বলেন, আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর এ উম্মতের সবচেয়ে উত্তম ব্যক্তি হলো আবূ বকর সিদ্দীক, তারপর উমার, তারপর উসমান তারপর আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুম আজমাঈন।
এবং তিনি বলেন, রাসূলের পর সবচেয়ে উত্তম ব্যক্তি আবূ বকর, উমার, উসমান এবং আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুম আজমাঈন। অতঃপর আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সব সাহাবীর ভালো আলোচনা ছাড়া সমালোচনা থেকে বিরত থাকবো।
ইলমুল কালাম ও দীনের বিষয়ে তর্কবিতর্ক করা থেকে তার নিষেধ করা
ইমাম আবূ হানীফা বলেন, প্রবৃত্তির অনুসারীরা বাসরাতে অনেক। আমি ইলমে কালামকে সবচেয়ে সম্মানি ইলম ধারণা করে তাতে বিশেবারের অধিক প্রবেশ করি; কখনো তাতে একবছর বা তার চেয়ে বেশি আবার কখনো কম সময় অবস্থান করি।
তিনি আরো বলেন, আমি ইলমু কালাম (তর্কশাস্ত্র) শিখে-শিখে সে স্তরে পৌঁছলাম যে স্তরে পৌঁছার কারণে আমার দিকে আঙ্গুলসমূহ দ্বারা ইঙ্গিত করা হয়। আর আমি হাম্মাদ ইবন আবূ সুলাইমানের মজলিসের নিকটেই বসতাম। একদা এক মহিলা এসে বলল, এক ব্যক্তির একজন বাঁদী স্ত্রী আছে, সে তাকে সুন্নাহ পদ্ধতিতে তালাক দিতে চায়, তাকে কয় তালাক দিবে?
আমি বুঝতে পারলাম না তাকে কি বলব, তাই আমি তাকে নির্দেশ দিলাম যেন হাম্মাদকে বিষয়টি জিজ্ঞাসা করে এবং ফিরে এসে যেন আমাকে জানায়। সে হাম্মাদকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, হায়েয এবং সহবাস থেকে মুক্ত পবিত্র অবস্থায় তাকে এক তালাক দেবে তারপর দুই হায়েয পর্যন্ত এ অবস্থায় রেখে দেবে। তারপর যখন সে গোসল করে পবিত্র হবে, তখন সে অন্যান্য স্বামীর জন্য হালাল হয়ে যাবে। মহিলাটি ফিরে এসে আমাকে বিষয়টি অবহিত করল। তখন আমি বললাম, ইলমুল কালামে আমার আর কোনো দরকার নেই। আমি আমার জুতা দুটো নিলাম এবং হাম্মাদের নিকট এসে বসলাম।
এবং তিনি বলেন, আমর ইবন উবাইদকে আল্লাহ লা‘নত করুক। কারণ, সে মানুষের জন্য ইলমে কালাম যে বিষয়ে কথা বলাতে মানুষের কোন উপকার হয় না তার পথ খুলেছে।
এক লোক তাকে জিজ্ঞাসা করল, জিসিম ও আরায (আল্লাহর শরীর ও সিফাত) সম্পর্কে তর্কশাস্ত্রে মানুষ যা আবিষ্কার করেছে সে সস্পর্কে আপনার মতামত কি? তিনি বললেন, এগুলো হচ্ছে দার্শনিকদের কথাবার্তা। তুমি আসার ও সালাফদের পথ গ্রহণ কর। আর তুমি প্রত্যেক নব আবিষ্কৃত বস্তু থেকে বেঁচে থাকো। কারণ এ গুলো সবই বিদ‘আত।
হাম্মাদ ইবন আবি হানীফা বলেন, আমার পিতা একদিন আমার নিকট প্রবেশ করলেন। তখন আমার নিকট কালামবিদদের কতক লোক উপস্থিত ছিল। আমরা তখন কোনো একটি বিষয় নিয়ে তর্কাতর্কি করছিলাম। এতে আমাদের আওয়াজ উঁচা হলো। আমি যখন বাড়ির ভিতরে তার আগমন শুনতে পারলাম তার নিকট গেলাম। তখন তিনি আমাকে বললেন, হে হাম্মাদ তোমার নিকট কারা? আমি বললাম অমুক অমুক। আমার নিকট যারা ছিল তাদের নাম উল্লেখ করলাম। তিনি বললেন, তোমরা কি নিয়ে আছো? আমি বললাম, (ইলমুল কালামের) অমুক অমুক অধ্যায়ে। তখন তিনি আমাকে বললেন, হে হাম্মাদ! তুমি কালাম বর্জন করো।
তিনি বলেন, আমি আমার পিতাকে কখনো এলোমেলো পাইনি এবং এমন লোকদের মধ্যেও নয় যে কোন বিষয়ে আদেশ দিয়ে তা থেকে আবার নিষেধ করে। আমি তাকে বললাম, হে আমার পিতা, তুমিই কি আমাকে তা শেখার নির্দেশ দাও নি? তিনি বললেন, অবশ্যই, হে আমার ছেলে। তবে আমি আজকে তোমাকে তার থেকে নিষেধ করছি। আমি বললাম কেন? তিনি বললেন, হে আমার ছেলে কালামের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখায় বিতর্ককারী এরা সবাই যাদেরকে তুমি দেখেছো এক কথা ও একই দীনের ওপর ছিল, অবশেষে শয়তান তাদের সম্পর্ক নষ্ট করল এবং তাদের মাঝে দুশমণি ও মতবিরোধ সৃষ্টি করে দিল ফলে তারা বিপরীত মুখী হয়ে পড়ল।
এবং আবূ হানীফা আবূ ইউসূফকে বলেন, তুমি জন সাধারণকে দীনের মৌলিক বিষয়ে কালাম সম্পর্কে কথা বলা থেকে বিরত থাকবে। কারণ তারা এমন লোক যারা তোমার অন্ধ অনুকরণ করবে, ফলে সেটা নিয়েই ব্যস্ত হয়ে যাবে।
এ হলো ইমাম আবূ হানীফা রাহিমাহুল্লাহ এর কিছু বাণী এবং দীনের মৌলিক বিষয়ে তিনি যা বিশ্বাস করতেন তার বর্ণনা এবং ইলমুল কালাম ও মুতাকাল্লিমীনের বিপক্ষে তার অবস্থান।
মূল: চার ঈমামের আকীদাহ
মুহাম্মাদ ইবন আব্দুর রাহমান আল-খামিস