হাম্মাদ ইবন যাইদ বলেন,
“إنما يريدون يدورون على أن يقولوا ليس في السماء إله
জাহমিয়্যারা কেবল এ আশায় ঘুরে বেড়াচ্ছে যে, মানুষেরা যেন বলে, আসমানের উপর ইলাহ নেই।
আল আরশ, মুখতাছারুল উলু।
সালাফদের আকীদা হচ্ছে আল্লাহ তার আসমানের উপর আরশের উপরে সমস্ত মাখলুকাত থেকে পৃথক। আল্লাহ আরশের উপরে এই আকীদা আহলে সুন্নাহর মুহাদ্দিস, ফক্বীহ, ইমাম ও সূফিদের।
সব আলিমদের উক্তি ও আর দলিল উল্লেখ করা সম্ভব নয়।আগ্রহী পাঠকগন বিস্তারিতভাবে আলিমদের বক্তব্য ও দলিলগুলো জানতে ইমাম যাহাবীর আল উলু, আল আরশ, ইমাম বুখারীর খলকু আফ’আলিল ইবাদ, খাল্লালের আস সুন্নাহ, ইবনু কুদামার ইছবাতু সিফাতিল উলু, বায়হাকীর আসমাউস সিফাত, ইবনে বাত্তাহর আল ইবানা ইত্যাদি কিতাব দেখতে পারেন।
আল্লাহ আরশের উপরে, মাখলুকাতের উর্ধ্বে সমস্ত মাখলুকাত থেকে পৃথক এই ব্যাপারে কিছু আলোচনা করছি ইনশাআল্লাহ।
মহান আল্লাহর বানী,
ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ
অতঃপর তিনি আরশের উপর ইসতিওয়া করেন।
প্রসিদ্ধ তাবিয়ী মুফাস্সির ও ফকীহ ইমাম) মুজাহিদ (১০৪ হি) বলেন:
(استوى) علا (على العرش)
ইসতিওয়া’ করেছেন অর্থ আরশের ঊর্ধ্বে হয়েছেন।- সহীহ বুখারী।
ইমাম যাহাবী লিখেন,
وقال إسحاق بن راهويه: سمعت بشر بن عمر قال: سمعت غير واحد من المفسرين يقول: ” {الرَّحْمَنُ عَلَى الْعَرْشِ اسْتَوَى} أي ارتفع”.
ইসহাক ইবন রাহাওয়াইহ রহ. বলেন, আমি বিশর ইবন উমারাকে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেন, আমি একাধিক মুফাসসিরকে বলতে শুনেছি {রহমান আরশের উপর ইসতিওয়া করলেন}অর্থাৎ সমুন্নত হলেন।
وقال محمد بن جرير الطبري في قوله {ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ أي علا وارتفع”
ইবনু জারীর ত্বাবারী রহ. বলেন, আল্লাহর বানী রহমান আরশের উপর ইসতিওয়া করলেন এর ব্যাখ্যায় বলেন অর্থাৎ উর্ধ্বে হলেন ও সমুন্নত হলেন।
কিতাবুল আরশ।
মহান আল্লাহ বলেন,
اِلَیۡہِ یَصۡعَدُ الۡکَلِمُ الطَّیِّبُ
তারই দিকে আরোহন করে পবিত্র বাক্য।
-সূরা ফাতির, আয়াত ১০।
بَلۡ رَّفَعَہُ اللّٰہُ اِلَیۡہِ
বরং আল্লাহ তাকে তার দিকে তুলে নিয়েছেন।
–সূরা আন-নিসা, আয়াত ১৫৮।
যিনি আসমানে আছেন, তিনি তোমাদেরসহ জমিন ধসিয়ে দেওয়া থেকে কি তোমরা নিরাপদ হয়ে গেছ?
-সূরা মুলক, আয়াত ১৬।
وَ قَالَ فِرۡعَوۡنُ یٰہَامٰنُ ابۡنِ لِیۡ صَرۡحًا لَّعَلِّیۡۤ اَبۡلُغُ الۡاَسۡبَابَ ﴿ۙ۳۶﴾
اَسۡبَابَ السَّمٰوٰتِ فَاَطَّلِعَ اِلٰۤی اِلٰہِ مُوۡسٰی وَ اِنِّیۡ لَاَظُنُّہٗ کَاذِبًا
ফিরআউন আরও বলল, ‘হে হামান! আমার জন্য তুমি নির্মাণ কর এ সুউচ্চ প্রাসাদ যাতে আমি অবলম্বন পাই —
আসমানে আরোহণের অবলম্বন, যেন দেখতে পাই মূসার ইলাহকে; আর নিশ্চয় আমি তাকে মিথ্যাবাদী মনে করি।
–সূরা আল গাফির, আয়াত ৩৬-৩৭।
ইমাম যাহাবী এই আয়াত উল্লেখ করার পর লিখেন,
يعني: أظن موسى كاذباًَ أن إلهه في السماء، ولو لم يكن موسى عليه السلام يدعوه إلى إله في السماء لما قال هذا؛ إذ لو كان موسى قال له: إن الإله الذي أدعوك إليه، ليس في السماء، لكان هذا القول من فروعون عبثاً، ولكان بناؤه القصر جنوناً
অর্থাৎ ফিরআউন বলল, আমি মনে করি মুসা মিথ্যা কথা বলেছে যে, তার ইলাহ আসমানের উপরে।মুসা আলাইহিস সালাম যদি ফিরআউনকে আসমানের উপরের ইলাহের দাওয়াত না দিতেন তবে ফিরআউন এটা বলতো না।যদি মুসা তাকে বলতেন যে ইলাহের দাওয়াত আমি আপনাকে দিচ্ছি তিনি আসমানের উপরে নন তাহলে ফিরআউনের এমন বলা অনর্থক ছিল।আর তার অট্রালিকা বানানোও ছিল পাগলামী।
–আল আরশ, যাহাবী।
ইমাম আবুল হাসান আশআরী রহ. তার মাকালাতুল ইসলামিয়্যীন গ্রন্থে বলেন, আহলুস সুন্নাহ ও আহলুল হাদীসের মত হচ্ছে,
ليس بجسم، و لا يشبه الأشياء، و إنه على العرش،
তিনি দেহবিশিষ্ট নন, কোনো বস্তু তার সাদৃশ্য রাখেনা।তিনি আরশের উপরে।
ইমাম আবু দাউদ মাসাঈলে আহমাদে বলেন,
حَدَّثَنَا أَحْمَدُ، قَالَ: ثَنَا سُرَيْجُ بْنُ النُّعْمَانِ، قَالَ: ثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ نَافِعٍ، قَالَ: قَالَ مَالِكٌ «اللَّهُ فِي السَّمَاءِ، وَعِلْمُهُ فِي كُلِّ مَكَانٍ، لَا يَخْلُوُ مِنْ عِلْمِهِ مَكَانٌ» .
ইমাম মালিক রহ. বলেন, আল্লাহ আসমানে।আর তার ইলম সর্বত্র।কোনো স্থানই মহান আল্লাহর জ্ঞানের বাইরে নয়।
[أحمد بن حنبل ,مسائل الإمام أحمد رواية أبي داود السجستاني ,page 353]
তিনি আরো বলেন,
– ثَنَا أَحْمَدُ، قَالَ: ثَنَا نُوحُ بْنُ مَيْمُونٍ، قَالَ: ثَنَا بُكَيْرُ بْنُ مَعْرُوفٍ، عَنْ مُقَاتِلِ بْنِ حَيَّانَ، عَنِ الضَّحَاكِ ” فِي قَوْلِهِ: {مَا يَكُونُ مِنْ نَجْوَى ثَلاثَةٍ إِلا هُوَ رَابِعُهُمْ وَلا خَمْسَةٍ إِلا هُوَ سَادِسُهُمْ} [المجادلة: 7] ، قَالَ: هُوَ عَلَى الْعَرْشِ، وَعِلْمُهُ مَعَهُمْ
দ্বহহাক রহ. আল্লাহর বাণী { তিনজনের মধ্যে কোনো গোপন পরামর্শ হয় না, যাতে চতুর্থজন হিসেবে আল্লাহ থাকেন না}এর ব্যাখ্যায় বলেন,
هُوَ عَلَى الْعَرْشِ، وَعِلْمُهُ مَعَهُمْ
তিনি তাঁর আরশের উপরে এবং তাঁর ইলম তোমাদের সাথে।
আরশ সৃষ্টির পূর্বে এবং আরশ সৃষ্টির পরে মহান আল্লাহ একই অবস্থায় রয়েছেন; কোনোরুপ পরিবর্তন তাকে স্পর্শ করে নি, কোনো গণ্ডি বা সীমা তাকে সীমায়িত করতে পারে না।
নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে যখন জিজ্ঞাসা করা হলো, এ দুনিয়া সৃষ্টির আগে কী ছিল? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আল্লাহ্ তখন ছিলেন, তাঁর আগে আর কিছুই ছিল না। তাঁর আরশ তখন পানির ওপর ছিল। অতঃপর তিনি আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি করলেন। এবং লাওহে মাফফুযে সব বস্তু সম্পর্কে লিখে রাখলেন।-বুখারী, হাঃ ৭৪১৮
ইমাম আহমদের ছাত্র আবু বকর খাল্লাল আহমাদ ইবন মুহাম্মাদ(৩১০ হিজরি) বলেনঃ ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল বলতেন,
إن الله عز وجل مستو على العرش المجيد… وكان يقول في معنى الاستواء هو العلو والارتفاع ولم يزل الله تعالى عاليا رفيعا قبل أن يخلق عرشه فهو فوق كل شيء والعالي على كل شيء وإنما خص الله العرش لمعنى فيه مخالف لسائر الأشياء والعرش أفضل الأشياء وأرفعها فامتدح الله نفسه بأنه على العرش ٥٣ ب أستوى أي عليه علا ولا يجوز أن يقال أستوى بمماسة ولا بملاقاة تعالى الله عن ذلك علوا كبيرا والله تعالى لم يلحقه تغير ولا تبدل ولا تلحقه الحدود قبل خلق العرش ولا بعد خلق العرش
মহান আল্লাহ আরশের উপর সমুন্নত।…সমুন্নত হওয়ার অর্থ তিনি এর উর্ধে। মহান আল্লাহ আরশ সৃষ্টির পূর্ব থেকেই সবকিছুর উর্ধে। তিনি সকল কিছুর উর্ধে এবং সকল কিছুর উপরে। এখানে আরশকে উল্লেখ করার কারন আরশের মধ্যে এমন বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা অন্য কিছুর মধ্যে নেই। তা হলো আরশ সবচেয়ে মর্যাদাময় সৃষ্টি এবং সবকিছুর উর্ধে। মহান আল্লাহ নিজের প্রশংসা করে বলেছেন যে, তিনি আরশের উপর সমুন্নত, অর্থাৎ তিনি আরশের উর্ধে। আরশের উপর সমুন্নত এর অর্থ আরশ স্পর্শ করে অবস্থান করা নয়। মহান আল্লাহ এরুপ ধারনার অনেক উর্ধে। আরশ সৃষ্টির পূর্বে এবং আরশ সৃষ্টির পরে মহান আল্লাহ একই অবস্থায় রয়েছেন; কোনোরুপ পরিবর্তন তাকে স্পর্শ করে নি, কোনো গণ্ডি বা সীমা তাকে সীমায়িত করতে পারে না।
সংকলন:
মোঃ মুহসিন
মিশকাত জামাত
আল্লামা শামসুল হক রহ. মাদ্রাসা, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা