পর্দা সম্পর্কে যা জানা খুবই প্রয়োজন

pink rose in front of brown concrete building during daytime

পর্দা
উস্তায : আম্মারুল হক

নোটঃ জেনেফা ফারজানা

পর্দা বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ একটি দারস নিয়েছেন উস্তায আম্মারুল হক। উক্ত দারস থেকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় একটি নোট আকারে শেয়ার করছি~

দারসে যে কয়েকটি বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে তা হলো-
১. পর্দার ফালসাফা ও হিকমাহ
২. পর্দা ও আধুনিকতাবাদ
৩. শরঈ পর্দা ও বাস্তবতা
৪. আযিমত ও রুখসত
৫. সমকালীন চ্যালেঞ্জ

আল্লাহ তা’য়ালা আমাদের জন্য পর্দার বিধান কেনো দিয়েছেন?

এখানে রেফারেন্স হিসেবে বেশ কয়েকটি আয়াত নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। যেমন:

১.সূরা আন নূর ৩১ নং আয়াত
২.সূরা আহযাব ৫৯ নং আয়াত
৩. সূরা আহযাব ৩২ নং আয়াত
৪. সূরা আহযাব ৫৩ নং আয়াত

এ আয়াতগুলোর মাধ্যমে পর্দা আমাদের জন্য কেনো ফরয করা হয়েছে এবং এর গুরুত্ব  সম্পর্কে আমরা ধারণা লাভ করতে পারি। পুরুষ-নারী উভয়ের জন্য এ বিধান লক্ষ্যণীয়। তবে স্পেশাল ভাবে নারীদের জন্য। দুটি বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তা হলো:

১. দৃষ্টি সংযত রাখা।
২. লজ্জাস্থানের হেফাজত করা

এছাড়া নারীদের জন্য মাহরাম ব্যাতিত সবার সামনে ই পর্দা কে ফরয করা হয়েছে। এমনকি নন-মাহরাম যদি অন্ধ ও হয় সেক্ষেত্রেও পর্দাকে ফরয করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে একটি হাদীসে বলা হয়েছে-

একদিন উম্মে-সালমা ও মায়মুনা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা উভয়েই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ছিলেন। হঠাৎ অন্ধ সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম তথায় আগমন করলেন। এই ঘটনার সময়-কাল ছিল পর্দার আয়াত নাযিল হওয়ার পর।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের উভয়কে পর্দা করতে আদেশ করলেন। উম্মে-সালমা বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল, সে তো অন্ধ, সে আমাদেরকে দেখতে পাবে না এবং আমাদেরকে চেনেও না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা তো অন্ধ নও, তোমরা তাকে দেখছি। [তিরমিযীঃ ২৭৭৮, আবু দাউদঃ ৪১১২]

নারীর জন্য আরো বেশ কিছু বিষয় স্পেশাল করা হয়েছে। সেগুলো হলো:

১. যে সমস্ত পুরুষের জন্য তাকে বৈধ করা হয়েছে বা তার জন্য মাহরাম নির্ধারণ করা হয়েছে, সে সমস্ত পুরুষ ব্যতীত কারো সামনে সে নিজের সৌন্দর্য প্রদর্শন করতে পারবে নাহ।

২. মাথায়, গলায়, বুকে সর্বপরি নিজেকে ওড়না দ্বারা আবৃত করে রাখবে।

৩. চেহারা ঢাকা, জিলবাব টানা, নিকাব পরা।

৪. নিজেদের স্বর কে অবনত রাখা, কন্ঠস্বর যেনো নন-মাহরাম দের কাছে না পৌঁছে।

**প্রাথমিক আলোচনায় দুইটি বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।
১. ব্যাপক ভাবে উভয়ের জন্য পর্দার বিধান।
২. মেয়েদের জন্য বিশেষায়িত পর্দা।

#পর্দার পেছনে হিকমাহ টা কি বা আল্লাহ তা’য়ালা কেনো পর্দাকে ফরয করেছেন?

সূরা আহযাবের ৩৩ নং আয়াত থেকে~

وَ قَرۡنَ فِیۡ بُیُوۡتِکُنَّ وَ لَا تَبَرَّجۡنَ تَبَرُّجَ الۡجَاهِلِیَّۃِ الۡاُوۡلٰی وَ اَقِمۡنَ الصَّلٰوۃَ وَ اٰتِیۡنَ الزَّکٰوۃَ وَ اَطِعۡنَ اللّٰهَ وَ رَسُوۡلَهٗ ؕ اِنَّمَا یُرِیۡدُ اللّٰهُ لِیُذۡهِبَ عَنۡکُمُ الرِّجۡسَ اَهۡلَ الۡبَیۡتِ وَ یُطَهِّرَکُمۡ تَطۡهِیۡرًا ﴿ۚ۳۳﴾و قرن فی بیوتکن و لا تبرجن تبرج الجاهلیۃ الاولی و اقمن الصلوۃ و اتین الزکوۃ و اطعن الله و رسولهٗ انما یرید الله لیذهب عنکم الرجس اهل البیت و یطهرکم تطهیرا ﴿ۚ۳۳﴾

তোমরা নিজ গৃহে অবস্থান করবে এবং প্রাক-জাহেলী যুগের মত সৌন্দর্য প্রদর্শন করো না। আর তোমরা সালাত কায়েম কর, যাকাত প্রদান কর এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর। হে নবী পরিবার, আল্লাহ তো কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতাকে দূরীভূত করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে।

অর্থাৎ প্রথম হিকমাহটি হলো পবিত্রতা ও আনুগত্য।

আনুগত্য সম্পর্কে :

যারা ইসলামের বিধিনিষেধ নিয়ে যে সকল প্রশ্ন উত্থাপন করে,তাদের পক্ষ থেকে বলা হয় যে, পর্দার মাধ্যমে ইসলাম নারীদের কে চাপিয়ে রেখেছে, তাদের ডমিনেট করে রেখেছে। এই প্রথম কন্সেপ্টটিই ভুল। কারণ~

১. তারা আল্লাহর বিধান মানছে না।
২. আল্লাহ তা’য়ালার আনুগত্য। পুরুষদের জন্য যেমন কিছু বিধান ফরয রয়েছে, যেগুলো তাদের মানতেই হয়, তেমনি নারীদের জন্য ও পর্দা একটি বিধান যা তাদের পালনের মাধ্যমে আল্লাহর আনুগত্য প্রকাশ পায়।

পবিত্রতা সম্পর্কে:

এ প্রসঙ্গে সূরা আহযাবের ৫৩ নং আয়াত নিয়ে আলোচনা করা হয়।

দ্বিতীয় হিকমাহ টি হলো অন্তরের রোগ দূরীকরণ।

অন্তরের রোগ উভয়ের মধ্যে যেনো না আসে এজন্য আল্লাহ তা’য়ালা আওয়াজ কে নম্র করতে নিষেধ করেছেন।

জিলবাব টানা।

জিলবাবের বিধান একটি নারীর লজ্জাসুলভ আচরণ প্রকাশ করে৷ যা নারীর হায়া প্রদর্শন করে৷ তবে এটি যদি হালকা করে শুরু করে এক পর্যায়ে বৃহৎ আকারে শুরু হয়।
উহারণস্বরূপ বলা হয়েছে-
মিশরে আমিনের সময়ে তিনি হিজাব ছাড়ার ১০০ বছর পূর্তি উদযাপন করেন। যার ফলে মিশরে আজ বৃহৎ পরিসরে হিজাব ছাড়ার বিষয়টি লক্ষ্যণীয়।

# শরয়ী বিধানের মধ্যে কি কি শর্ত বিদ্যমান?

১. অবশ্য ই জিলবাব পুরো শরীরকে আবৃত করে রাখবে।
২.শরীরের কোনো অংশকে ফুটিয়ে তুলবে না।
৩. সৌন্দর্যকে আড়াল করে রাখা।
৪. কাপড় যেনো অতি আটসাট না হয়। শরীরের কোনো অংশ যেনো বাইরে প্রদর্শীত না হয়।
৫. তার কাপড় যেনো সুগন্ধনীয় না হয়।
৬. পুরুষের পোশাকের সাথে সাদৃশ্য থাকা যাবেনা।
৭. এমন হওয়া যাবেনা যাতে অহংকার প্রদর্শীত হয়ে যায়।

৮. পাতলা কাপড় হওয়া যাবেনা।

শরীরকে আবৃত করার বিষয়ে দুইটি মত পাওয়া যায়। একটি হলো মুখ,হাত,পা আল্লাহ তা’য়ালা আলাদা করে বলেননি। অর্থাৎ কিছু ওয়ামায়ে কিরামের বক্তব্যে প্রথম মত হিজাবের পক্ষে আসে। যেখানে আলাদা করে হাত,পা এর কথা বলা হয়নি।
অপর পক্ষের মত পুরো জিলবাব সহ অর্থাৎ মুখ, হাত, পা এর মাঝে অন্তর্ভুক্ত।

এ পর্যায়ে মতানৈক্য দেখা দিলে, এর সমাধান হিসেবে কোরআনের কিছু আয়াতের দিকে লক্ষ্য করা যায় অর্থাৎ আল্লাহর দিকে। কোরআনে পবিত্রতার কথা বলা হয়েছে বা সৌন্দর্য ঢেকে রাখার কথা বলা হয়েছে। যা মুখের মধ্যমেই বেশি প্রদর্শীত হয়ে থাকে। অনেক সময় হাত এবং থেকেও হয়ে থাকে। হাদীসেও এ বিষয়টি লক্ষ্যনীয়।

মাযহাবের ইমামগণ যে রায় দিয়েছেন, সেটিও মুখ, হাত, পা এর মাঝে অন্তর্ভুক্ত।

রাসূল (সা.) ইহরাম অবস্থায় নিকাব এবং হাত মোজা পরতে নিষেধ করেছিলেন। তবুও এমন কারণ যদি উপস্থিত হয় যেমন নন-মাহরাম এসে যায় তখন মাথার উপর জিলবাব টেনে নিবেন এছাড়া খোলা রাখবেন। এ থেকে বোঝা যায় মুখ ঢেকে রাখা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি বৃদ্ধ কোনো মহিলা। যার মাধ্যমে কোনো সন্তান জন্মদান আর সম্ভব নয়, এমন মহিলার জন্য ও পর্দার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

শরীয়তের বিধিবিধানের সাথে পরিবেশের সম্পর্ক টা কি?

কেউ যখন এমন পরিবেশে বসবাস করে, যেখানে সম্পূর্ণ অশ্লীলতা বিদ্যমান, সম্পূর্ণ বেহায়াপনা বিদ্যমান, যেখানে পর্দার কোনো বালা ই নেই কিন্তু সেখানে যদি কেউ সামান্য এক টুকরো কাপড় জড়িয়ে নেয় তখন সেইটিই  ইসলাম বলে প্রচারিত হয়।
তবে সেই নামমাত্র হিজাব পরিহিতা যখন শরয়ী বিধান মেনে চলে এমন পরিবেশে অবস্থান করে, সেখানের জন্য এটিই ইসলামকে রিপ্রেজেন্ট করার জন্য যথেষ্ট নয় কারণ এটি আসলে পর্দা ই নয়।

আবার সালাত সবার জন্য ফরয করা হয়েছে৷ এখন কেউ যদি যেখানে পুরো সমাজের কেউ ই সালাত আদায় করে না এমন পরিবেশে গিয়ে, অযু ছাড়াই মসজিদে গিয়ে দুই সিজদাহ দিয়ে আসে তবে এইটি কখনোই সালাত বলে গণ্য হবেনা। এখানে কখনোই সে এইটা বলে পার পাবেনা যে সবার থেকে আলাদা হয়ে আমিই প্রথম সিজদাহ করেছি। কারণ সালাত এইজন্য ফরয করা হয়নি যে অন্যের থেকে নিজেকে পার্থক্য স্থাপন করবে, বরং এর কিছু আরকান, আহকাম, ওয়াজীব সুন্নাহ সবকিছু দেওয়া হয়েছে। এইসব কিছু যখন আদায় করা হবে তখন ই সালাত বলে গণ্য হবে।

ঠিক তেমনিভাবে পরিবেশের সাথে পার্থক্য নিরূপণ করার জন্য ই পর্দার বিধান দেওয়া হয়নি বরং এটি আল্লাহর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করা।

মূল কথা কোনো প্রশ্ন ছাড়া, কোনো লজিক ছাড়া, কোনো যুক্তি ছাড়াই আল্লাহ তা’য়ালা ফরয করেছেন, তার আনুগত্য প্রকাশ করতে নজরের হেফাজত, দৃষ্টিকে সংযত রাখার মাধ্যমে আমাদের পর্দা করতে হবে। হুকুমের প্রতি কোনো পরিস্থিতিতেই শিথিলতার সুযোগ দেওয়া যাবেনা। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা আমাদের সবাইকে এর উপর আমল করার তাওফিক দান করেন।(আমিন)

#দরসগাহ
#দরসগাহ_পর্দা

দরস লিংকঃ

https://youtu.be/_c8J0xJUt2

শেয়ার করুন:

সাম্প্রতিক ব্লগ

ট্যাগ

অশ্লীলতা6 আকিদাহ বিষয়ক প্রশ্নোত্তর2 আখলাক1 আনুগত্য1 আমল31 আমল কবুলের শর্ত1 আসমা ওয়াস সিফাত11 ইবনে তাইমিয়াহ রহি.17 ইবনে তায়্যিমিয়া রহি.1 ইমাম আহমাদ ইবনে হামবাল রহি.3 ইশকে রাসুল স.3 ঈমান17 ঈমাম শাফিঈ রহি.1 উলামাকথন18 উসুলুস সুন্নাহ1 কবর1 কিয়ামত1 কুফর1 ক্বুরআন10 গাইরত2 জান্নাত2 জাহান্নাম2 জুমু'আ5 তাওহীদ14 তাফসীর4 দরসগাহ ম্যাগাজিন ২6 দাম্পত্য1 নারীবাদ1 পুঁজিবাদ1 প্রবন্ধ4 বদর1 বারাকাহ1 বাংলায় মুসলিম শাসনের ইতিহাস0 বিচার ফয়সালা5 বিজ্ঞানবাদ1 বিবিধ প্রশ্নোত্তর1 বিশুদ্ধ তাওবাহ3 বিশ্বকাপ1 মাজমুঊল ফাতওয়া2 মানহাজ1 ম্যাগাজিন1 যাকাত1 রমাদান1 রামাদান হাদিস2 রোযা2 শয়তানের চক্রান্ত1 শাইখ আহমাদ মুসা জীবরিল হাফি.1 শাইখ উসাইমিন রহি.1 শায়েস্তা খান0 শাস্তি1 শিরক1 সমকামীতা1 সাওম3 সাম্প্রদায়িকতা1 সালাত1 সাহাবী1 সিয়াম2 সিরাত1 সূরা আন নাবা1 সূরা আল আনককবুত1 সূরা আল হাজ্জ1 সূরা মাউন1 সূরা হূদ1 হত্যা1 হদ1 হাদিসে কুদসী3 হামজা জর্জিস1 হাশর1

সাবস্ক্রাইব করুন