স্বাধীনতার প্রকৃতি হচ্ছে, আল্লাহ ছাড়া অপর সকলের দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত থাকা। স্বাধীনতা দ্বারা যদি আল্লাহর আদেশ-নিষেধ থেকে বের হয়ে যাওয়া অনুধাবন করা হয়, তবে তা হবে আত্মার পৌত্তলিকতা ও প্রবৃত্তির দাসত্ব। আল্লাহ বলেন,
﴿أَفَرَءَيۡتَمَنِٱتَّخَذَإِلَٰهَهُۥهَوَىٰهُوَأَضَلَّهُٱللَّهُعَلَىٰعِلۡمٖوَخَتَمَعَلَىٰسَمۡعِهِۦوَقَلۡبِهِۦوَجَعَلَعَلَىٰبَصَرِهِۦغِشَٰوَةٗفَمَنيَهۡدِيهِمِنۢبَعۡدِٱللَّهِۚأَفَلَاتَذَكَّرُونَ٢٣﴾ [الجاثية: ٢٣]
“তবে কি আপনি লক্ষ্য করেছেন তাকে, যে তার প্রবৃত্তিকে নিজ ইলাহ বানিয়ে নিয়েছে? আর তার কাছে জ্ঞান আসার পর আল্লাহ তাকে বিভ্রান্ত করেছেন এবং তিনি তার কান ও হৃদয়ে মোহর করে দিয়েছেন।আর তিনি তার চোখের ওপর রেখেছেন আবরণ।অতএব আল্লাহর পরে কে তাকে হেদায়াত দিবে? তবুও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না?”
[সূরা আল-জাসিয়াহ, আয়াত: ২৩]
আর কেউ যদি মানুষের জন্য যা ইচ্ছা, যেভাবে ইচ্ছা, যখন ইচ্ছা করা বা বলার অনুমোদন দেয়, তবে সে তার প্রবৃত্তি ও শয়তানের দাসত্বেরই স্বীকৃতি দিল। কারণ, মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে দাস হিসেবে;সে যদি আল্লাহর দাসত্ব গ্রহণ না করে, তবে অন্যের দাসে পরিণত হবে- নিঃসন্দেহে!
আর যদি দুনিয়াতে শুধু একটি লোক থাকত, তাহলে আল্লাহ তার ওপর হত্যা, অপবাদ, ব্যভিচারের শাস্তি অবধারিত করে দিতেন না,অনুরূপভাবে তার ওপর নির্দেশনা থাকত না লজ্জাস্থানের দিকে তাকানো থেকে চোখ বন্ধ করার, তেমনি থাকত না মীরাসের বিধি-বিধান, তার ওপর হারাম করা হতো না ব্যভিচার, সূদ ইত্যাদি। আল্লাহ তো তখনই এ বিধি-বিধানগুলো দিয়েছেন, যখন সেখানে তারই জাতিভুক্ত অন্যরা রয়েছে। সংখ্যায় যখন অন্যরা বেশি হয়, তখনই জীবনে নিয়ম-শৃংখলা বেড়ে যায়। যদি আকাশে কেবল চাঁদই থাকত, তবে আল্লাহ তাকে এই নির্দিষ্ট কক্ষপথে নিয়ন্ত্রণ করতেন না, কিন্তু তিনি করলেনসূর্য, যমীন ও গ্রহ-নক্ষত্রের পরিভ্রমনের সাথে সঠিকভাবে চলার স্বার্থেই। অনুরূপভাবে জোতিষ্কের সংখ্যা যত বেড়ে যায়, ততই এগুলোর শৃঙ্খলাও বেড়ে যায়।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يُغۡشِيٱلَّيۡلَٱلنَّهَارَيَطۡلُبُهُۥحَثِيثٗاوَٱلشَّمۡسَوَٱلۡقَمَرَوَٱلنُّجُومَمُسَخَّرَٰتِۢبِأَمۡرِهِۦٓۗأَلَالَهُٱلۡخَلۡقُوَٱلۡأَمۡرُۗتَبَارَكَٱللَّهُرَبُّٱلۡعَٰلَمِينَ﴾ [الاعراف: ٥٤]
“তিনিই দিনকে রাত দিয়ে ঢেকে দেন, তাদের একে অন্যকে দ্রুত গতিতে অনুসরণ করে।আর সূর্য, চাঁদ ও নক্ষত্ররাজি, যা তাঁরই হুকুমের অনুগত, তা তিনিই সৃষ্টি করেছেন। জেনে রাখ, সৃজন ও আদেশ তাঁরই। সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহ কত বরকতময়!”
[সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৫৪]
তিনি আরও বলেন,
﴿لَاٱلشَّمۡسُيَنۢبَغِيلَهَآأَنتُدۡرِكَٱلۡقَمَرَوَلَاٱلَّيۡلُسَابِقُٱلنَّهَارِۚوَكُلّٞفِيفَلَكٖيَسۡبَحُونَ٤٠﴾ [يس: ٤٠]
“সূর্যের পক্ষে সম্ভব নয় চাঁদের নাগাল পাওয়া এবং রাতের পক্ষে সম্ভব নয় দিনকে অতিক্রমকারী হওয়া।আর প্রত্যেকে নিজ নিজ কক্ষপথে সাঁতার কাটে।”
[সূরা ইয়াসীন, আয়াত: ৪০]
প্রকৃতপক্ষে ইসলামের বিধি-বিধান দীন ও দুনিয়া উভয়টিকে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করে প্রণীত হয়েছে। সুতরাং যে কেউ আল্লাহর বিধান থেকে বের হতে চাইবে, সে তাঁর শাস্তির হকদার হবে।
ইসলামে প্রবেশ করা আবশ্যক,আর ইসলাম থেকে বের হয়ে যাওয়ার অর্থ মুরতাদ হওয়া-
﴿وَمَنيَرۡتَدِدۡمِنكُمۡعَندِينِهِۦفَيَمُتۡوَهُوَكَافِرٞفَأُوْلَٰٓئِكَحَبِطَتۡأَعۡمَٰلُهُمۡفِيٱلدُّنۡيَاوَٱلۡأٓخِرَةِۖوَأُوْلَٰٓئِكَأَصۡحَٰبُٱلنَّارِۖهُمۡفِيهَاخَٰلِدُونَ٢١٧﴾ [البقرة: ٢١٧]
“আর তোমাদের মধ্য থেকে যে কেউ নিজের দীন থেকে ফিরে যাবে এবং কাফির হয়ে মারা যাবে, দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের আমলসমূহ নিস্ফল হয়ে যাবে।আর এরাই আগুনের অধিবাসী, সেখানে তারা স্থায়ী হবে।”
[সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২১৭]
তাছাড়া সহীহ বুখারী ও অন্যান্য গ্রন্থে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«مَنْبَدَّلَدِينَهُفَاقْتُلُوهُ»
“যে কেউ তার দীন পরিবর্তন করবে তাকে তোমরা হত্যা করবে।”
বস্তুতঃআল্লাহর দাসত্ব হচ্ছেসৃষ্টি ও অস্তিত্বের মূল লক্ষ্য। যে ব্যক্তি এর থেকে বের হওয়া বৈধ মনে করবে, সে অস্তিত্বের মূল লক্ষ্যের প্রতি-ই ঈমান আনে নি। সে কিন্তু কোনো রাষ্ট্র বা আইন প্রভৃতি দুনিয়ার নিয়মনীতির বাইরে চলা বৈধ মনে করে না, অথচ আল্লাহর দাসত্ব থেকে বের হওয়া বৈধ মনে করে! এটা সৃষ্টির অস্তিত্বের মূল উদ্দেশ্যের প্রতি বিশ্বাসে দুর্বলতা অথবা অন্তর থেকে এ বিশ্বাস একেবারেই উধাও হয়ে যাওয়ার-ই গোপন স্বীকৃতি। অথচ আল্লাহ বলেন,
﴿وَمَاخَلَقۡتُٱلۡجِنَّوَٱلۡإِنسَإِلَّالِيَعۡبُدُونِ٥٦﴾ [الذاريات: ٥٦]
“আর আমি সৃষ্টি করেছি জিন্ন এবং মানুষকে এজন্যেই যে, তারা কেবল আমার ইবাদাত করবে।”
[সূরা আয-যারিয়াত, আয়াত: ৫৬]
যে সত্ত্বা মানুষ ও জিন্নকে দুনিয়াতে তাঁর ইবাদতের জন্য অস্তিত্বে এনেছেন, তিনি আখিরাতে তাদেরকে তাঁর হিসাব, সাওয়াব ও শাস্তির জন্য অস্তিত্বে নিয়ে আসবেন।
আল্লাহ আমাদের অবস্থা ও পরিণাম পরিশুদ্ধ করে দিন।আর আল্লাহ দুরূদ ও সালাম পাঠ করুন তার নাবীর ওপর ও তার অনুসারীদের ওপর।
মূলঃ আব্দুল আজিজ ইবন মারজুক আত ত্বরিফি