আল্লাহর নাম ও সিফাতের ক্ষেত্রে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা’আতের তিনটি মূলনীতি রয়েছে। যথা-
প্রথম মূলনীতি :
সে সকল বিষয় আল্লাহ তা’আলার জন্য সাব্যস্ত করা যা কিছু স্বয়ং আল্লাহ তা’আলা নিজের জন্য সাব্যস্ত করেছেন এবং যা কিছু আল্লাহ তা‘আলার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাব্যস্ত করেছেন।
দ্বিতীয় মূলনীতি :
আল্লাহ তা’আলা সম্পর্কে সে সকল বিষয় অস্বীকার করা, যা কিছু আল্লাহ তা’আলা নিজের সম্পর্কে প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং যা কিছু আল্লাহ তা‘আলা সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যাখ্যান করেছেন।
তৃতীয় মূলনীতি :
আল্লাহ তা‘আলা সম্পর্কে কোনো কিছু সাব্যস্ত করার ক্ষেত্রে দলীল ব্যতীত এর কোনো ধরনের আকৃতি, প্রকৃতি নির্ধারণ কিংবা ব্যাখ্যা প্রদান করা অথবা অপব্যাখ্যা দেয়া যাবে না এবং কোনো কিছুর সাথে সাদৃশ্য কিংবা তুলনাও করা যাবে না।
কেননা আল্লাহ তা’আলা বলেন,
“কোনো কিছুই তাঁর মতো নয়। আর তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বস্রষ্টা”।
[সূরা আশ-শূরা : ১১]
উল্লিখিত মূলনীতির আলোকে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা’আহ বিশ্বাস করে
(১) আল্লাহ নিজের জন্য যে সকল নাম ও গণাবলী সাব্যস্ত করেছেন এবং
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর জন্য যে সকল নাম ও গুণাবলী সাব্যস্ত করেছেন সেগুলো কোনোরূপ পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও অপব্যাখ্যা ছাড়া আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করতে হবে।
যেমন- আল্লাহর নামের মধ্যে রয়েছে
আর-রহমান, আর-রহীম, আস-সামী’, আল-বাসীর, আল-‘আলীম, আল-
হাই, আল-কাদীর ইত্যাদি।
আবার আল্লাহর গুণাবলীর মধ্যে রয়েছে তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী, সর্বদ্রষ্টা, চিরঞ্জীব, সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান ইত্যাদি।
আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা’আহ বিশ্বাস করে যে, আল্লাহ খুশি হন, রাগান্বিত
হন, তিনি ভালোও বাসেন, আবার অপছন্দও করেন, যেমনটি তাঁর সাথে
সঙ্গতিপূর্ণ।
অনুরূপ আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা’আহ বিশ্বাস করে যে, আল্লাহ
ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তা’আলার মুখ, চোখ, হাত ও পা ইত্যাদিসহ তাঁর সত্তা সংশ্লিষ্ট সকল গুণাবলী সাব্যস্ত করেছেন। যেমনটি আল-কুরআন ও সহীহ সুন্নাহয় এসেছে। তবে এসব গুণাবলীর আকৃতি- প্রকৃতি নির্ধারণ কিংবা কোনোরূপ ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়নি। তাই আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আহ আল্লাহ তা’আলার এ সিফাতগুলোর প্রকৃত অর্থের প্রতি
কোনো ধরনের কাইফিয়্যাত বা সাদৃশ্য স্থাপন ব্যতিরেকে বিশ্বাস স্থাপন করে।
আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা’আহ বিশ্বাস করে যে, এক্ষেত্রে ওহীর নস তথা
ভাষ্যকে অবিকৃতভাবে বিশ্বাস করতে হবে। বিশুদ্ধ দলীল ব্যতীত তা রূপক অর্থে গ্রহণ করা অথবা এর অপব্যাখ্যা করা কিংবা এর কাইফিয়্যাত বা সাদৃশ্য স্থাপন করা যাবে না।
আবার মুখ, চোখ, হাত ও পা আছে বলে “হয়তোবা শরীর কিংবা অন্যান্য সুনির্দিষ্ট অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও আছে” এরূপ দলীলবিহীন বক্তব্য পেশ করা যাবে না। কেননা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা সাব্যস্ত করেননি।
২) আল্লাহ তা’আলা আসমানে আরশের উপর রয়েছেন। কেননা তা আল্লাহ ও
তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে সাব্যস্ত হয়েছে।
আল্লাহ তা’আলা বলেন,
“দয়াময় আল্লাহ আরশের উপর উঠেছেন”।
[সূরা ত্বহা : ৫]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“যারা যমীনে আছে তাদের প্রতি রহম করো, তাহলে যিনি আসমানে আছেন
(আল্লাহ) তিনি তোমাদের রহম করবেন”।
আল্লাহ আসমানে আছেন বলেই হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন।
চার ইমামসহ সকল ইমাম একমত যে, আল্লাহ তা’আলা আসমানে আরশের
উপর রয়েছেন।
আল্লাহ তা’আলা আরশের উপর কিভাবে আছেন কিংবা কিভাবে উঠেছেন তা কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত হয়নি। তাই এর কাইফিয়্যাত সম্পর্কে কোনো ধরনের কাল্পনিক ব্যাখ্যা দেয়া যাবে না এবং এ সম্পর্কে কোনো প্রশ্নও করা যাবে না।
এ সম্পর্কে ইমাম মালেক রাহিমাহুল্লাহ বলেন,
“ইস্তিওয়া তথা আরশের উপর উঠার বিষয়টি জানা আছে, তবে কিভাবে
তা জানা নেই। এ সম্পর্কে ঈমান পোষণ করা ওয়াজিব এবং প্রশ্ন করা বিদ‘আহ”।
তেমনিভাবে প্রতি রাতের শেষভাগে আল্লাহ তা’আলা পৃথিবীর নিকটবর্তী আসমানে নেমে আসেন। কিন্তু কিভাবে আসেন তা জানা নেই। অতএব এ সম্পর্কে কোনো ধারণা প্রসূত ব্যাখ্যা প্রদান কিংবা প্রশ্ন করা যাবে না।
৩) আল্লাহ তা’আলা তন্দ্রা ও ঘুম থেকে পবিত্র। কেননা আল্লাহ তা’আলা
আয়াতুল কুরসীতে নিজের সম্পর্কে তন্দ্রা ও ঘুম প্রত্যাখান করেছেন।
মূল: আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা’আতের আক্বীদা
ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী