প্রশ্ন ১: আমি কাউকে কাউকে বলতে শুনেছি যে আহাদ হাদিস[১] দ্বারা আকিদাহ প্রমাণিত হয় না, কেননা এ ধরণের হাদিসের মাধ্যমে ধারণা অর্জিত হয়, দৃঢ় বিশ্বাস লাভ করা যায় না। এ বিষয়ে আপনাদের উত্তর কী?
উত্তর:
الحمد لله
এই যে একটা মত, যেখানে বলা হচ্ছে যে আহাদিসুল আহাদের মাধ্যমে আকিদাহ প্রমাণিত হয় না, কেননা তা দ্বারা কেবল ধারণাই অর্জিত হয়, আর ধারণার ওপর তো আকিদাহ বিনির্মিত হতে পারে না, এ বিষয়ে আমাদের জবাব হল- এই মতটি সঠিক নয়। কেননা এই মতটিই বেঠিক ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। এটা কয়েকভাবেই প্রমাণ করা যায়।
যেমন:
১) হাদিসে আহাদের মাধ্যমে কেবল ধারণাই অর্জিত হয়- এই কথাটা ব্যাপকভাবে প্রায়োগিক নয়। যদি কোনো আহাদ খবরের যথার্থতার ব্যাপারে অন্যান্য ইঙ্গিত বা লক্ষণ থাকে তাহলে তার মাধ্যমে ইয়াকীন বা দৃঢ় বিশ্বাস অর্জিত হতে পারে। যেমন উম্মাহ যদি কোনো হাদিসকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে গ্রহণ করে নেয় (তাল্লাকা বিল কবুল- তাহলে তা দ্বারা দৃঢ় বিশ্বাস অর্জিত হতে পারে) ।
যেমন ধরুন উমার ইবনুল খাত্তাব [রা.] বর্ণিত এই হাদিসটি-
إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ
“নিশ্চয় প্রত্যেক আমল নিয়্যতের ওপর নির্ভরশীল”[২]
এই হাদিসটি একটি খবরে আহাদ বর্ণনা। এর পরও আমরা দৃঢ়তার সাথেই জানি যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই কথাটা বলেছেন। এই কথাটা শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়াহ, ইবন হাজার আসকালানী [রাহ.] ও অন্যান্যরা অনুসন্ধানের মাধ্যমে প্রতিপাদন করেছেন।
২) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আকিদাহর মূল ভিত্তি অর্থাৎ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ-র সাক্ষ্য সমেত একক ব্যক্তিদের বিভিন্ন স্থানে প্রেরণ করেছেন। আর তাঁর এই প্রেরণকর্ম আবশ্যিক দলীলের মধ্যে পড়ে। যেমন তিনি মুআয [রা.] কে ইয়ামানে পাঠিয়েছিলেন। এই যে একক ব্যক্তিকে পাঠালেন সেটাকে আবশ্যিক দলীল হিসেবে মেনে নেয়া ইয়ামানবাসীর জন্য আবশ্যক ছিল।
৩) যদি আমরা এটা বলি যে আখবারুল আহাদ দ্বারা আকিদাহ সাব্যস্ত হবে না তাহলে সম্ভাবনা রয়েছে যে কেউ এটাও বলবে আমলী বিধিবিধানও আখবারুল আহাদ দ্বারা সাব্যস্ত হবে না। কেননা আমলী বিধিবিধানও আকিদার সাথী বটে, কেননা (আমল সাব্যস্ত করার মাধ্যমে এটা বিশ্বাস করতে হয় যে) আল্লাহ তাআলা এই কাজটি করতে আদেশ করেছেন কিংবা এই কাজটি করতে নিষেধ করেছেন।
আর এই কথাটা যদি মেনে নেয়া হয় তাহলে তো শরীআতের বহু আহকাম বাতিল হয়ে যাবে। আর যদি এই কথাটা প্রত্যাখ্যান করা হয় তাহলে এই কথাকেও প্রত্যাখ্যান করতে হবে যে- খবরে আহাদ দ্বারা আকিদাহ সাব্যস্ত হয় না। কেননা উভয়ের মাঝে আদতে কোনো পার্থক্য নেই[৩] ।
এই আলোচনা থেকে যা বোঝা গেল তা হল: যদি খবরে আহাদের যথার্থতার ব্যাপারে অন্যান্য কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায় তাহলে তা দ্বারা ইলম অর্জিত হয়, এর মাধ্যমে ইলমী ও আমলী বিধিবিধান সাব্যস্ত হয়। উভয় ক্ষেত্রকে আলাদা (ভাবে বিবেচনা) করার কোনো দলীল নেই।
কেউ কেউ যে কোনো কোনো ইমামের দিকে এই মতামত সংযুক্ত করার চেষ্টা করেন ( অর্থাৎ বলার চেষ্টা করেন যে অমুক ইমাম এই কথা বলেছেন) তার জন্য আবশ্যক কর্তব্য হল ঐ ইমাম পর্যন্ত এই মতকে সহিহ সনদে প্রমাণ করে দেখাক। সেটা করতে পারলে তখন এই মতকে সেই ইমামের দিকে সম্পৃক্ত করে বর্ণনা করা যেতে পারে।
৪) আকিদাহ বিষয়ক সবচাইতে বড় বিষয়গুলোর একটা হচ্ছে রিসালাত। কেউ যদি এ সম্পর্কে অজ্ঞ থাকে তাহলে আল্লাহ তাআলা তাকে এ বিষয়ক জ্ঞানার্জনের জন্য আহলে ইলমের কাছে যেতে নির্দেশ দিয়ে বলেছেন:
وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ إِلَاّ رِجَالاً نُوحِي إِلَيْهِمْ فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لا تَعْلَمُونَ * بِالْبَيِّنَاتِ وَالزُّبُرِ
“আর আপনার আগে আমরা ওহীসহ কেবল পুরুষদেরকেই পাঠিয়েছিলাম, সুতরাং তোমরা জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞেস কর যদি না জান। (অতীতের রসূলদেরকে পাঠিয়েছিলাম) স্পষ্ট প্রমাণাদি আর কিতাব দিয়ে[৪] ”
এই নির্দেশনার মাঝে একজন ও বহুজন উভয়েই অন্তর্ভুক্ত[৫] ।
উত্তর প্রদানে: শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল উসাইমিন [রাহ.]
অনুবাদ: মানযুরুল কারিম।
টীকা:
১)খবরুল ওয়াহিদ/আহাদিসুল আহাদ/খবরে আহাদ প্রভৃতি দ্বারা এমন হাদিসকে বোঝানো হয় যার মাঝে মুতাওয়াতির হবার শর্ত পাওয়া যায় না। এরকম হাদিসের বর্ণনাকারী বা রাবী একজন হতে পারে, একাধিকও হতে পারে, তবে মুতাওয়াতির হবার মত অত সংখ্যক হবে না- দেখুন শাইখ মুহাম্মাদ মুহাম্মাদ আবু যাহূ [রাহ.], আল হাদিস ওয়াল মুহাদ্দিসুন, পৃ: ২৫
২)ইমাম বুখারী (রাহ.), আস সহিহ, হা: ১
৩) আল্লাহ তাআলা সম্মানিত শাইখের প্রতি রহম করুন। তাঁর ফাতাওয়াদানের এতবছর পর আমরা এই কথার সত্যতা দেখছে পাচ্ছি। ২০২১ সালে সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছে, “a punishment must be applied only in the presence of a clear Qur’anic stipulation or a mutawātir hadith”। দেখুন https://www.oasiscenter.eu/en/saudi-vision2030-and-mutawatir-hadith-an-unexpected-combination, retrieved on 22nd February, 2023.
৪) সূরা আন নাহল :৪৩-৪৪
৫) শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল উসাইমিন (রাহ.), ফাতাওয়া আল আকিদাহ, পৃ: ১৮-১৯; দারুল জীল, বৈরুত, ১৯৯৩ ঈ.