ডা. মুর্তজা শাহরিয়ার
আমার মনে হয় যতগুলো ডিফিকাল্টিস একজন wanna be প্র্যাক্টিসিং মুসলমানকে ফেস করতে হয় তার মধ্যে এই লোকে কি বলবে হলো সবচেয়ে বড় বাঁধা।
আপনি এতদিন ইয়ো ইয়ো কুল কিড ছিলেন। ক্লিন শেভড/ স্টাইলিশ বেয়ার্ড ছিলো আপনার। আপনি সারাদিন গান বাজনা শুনতেন/শেয়ার দিতেন, সিনেপ্লেক্সে গিয়ে ফার্স্ট দিনে মুভি দেখে এসে মুভি রিভিউ দিতেন, কুল বাডিজদেরকে নিয়ে ধুমধাম হ্যাং আউটে যেতেন। আজকে হটাৎ আপনি হুজুর হয়ে গেলেন। আপনাকে দেখে আপনার সার্কেলের সবাই অবাক। এই হটাৎ কি এমন হলো তোর? আপনি এখন তারা ছেলে মেয়ে মিলে হ্যাং আউটে গেলে ডাক দিলে আপনি যাবেন নাকি যাবেন না দ্বিধায় পড়ে যান, আপনাকে মুভি দেখতে যেতে বললে না বলবেন নাকি হ্যা বলবেন সেটা ভাবতে থাকেন। আপনি দাড়ি রাখতে গিয়ে ভাবেন, সবাই কি বলবে কি ভাববে! কে জঙ্গী বলে কে শিবির বলে! (সত্যি কথা হলো আমাকে এই কথা শোনা লেগেছে যে আমি হটাৎ ইসলামিক পোস্ট দিই,দাড়ি রাখি, এজন্য নাকি আমাকে কেউ শিবির ভাবতে পারে বলে উনাদের আশংকা হয়)। আজকে আপনি যখন ই ইসলাম কে পুরোপুরি মানতে যাবেন এরকম বহু বাঁধা আপনার সামনে চলে আসবে রিগার্ডিং লোকে কি ভাববে!
শুধু তাই না, আপনি নিজেও এই সময়ে দোটানায় থাকেন। ক্লাসে প্রক্সি দেওয়া নিয়ে, পরীক্ষায় দেখাদেখি / প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে, মিথ্যা বলা নিয়ে। আপনি চিন্তা করেন ইসলাম কে হুজুররা কঠিন বানায় ফেলে। ইসলাম সহজ। ক্লাসে প্রক্সি দেওয়া,পরীক্ষায় দেখাদেখি করা এগুলা আলাদা ব্যাপার অথবা নিজে মানতে চেলেও মনে প্রশ্ন জাগে।
দেখুন প্রথম কথা হলো আপনি ইসলামে দাখিল হচ্ছেন, হারামকে ছেড়ে দিচ্ছেন একমাত্র আল্লাহর জন্য, শুধু তাকে সন্তুষ্ট করার জন্য। আপনার ইবাদতের উদ্দেশ্য যদি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করা ব্যতীত অন্য কিছু হয় তবে সেটা শিরকের পর্যায়ে চলে যেতে পারে। এখন আপনি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করতে গিয়ে যদি আরেকজন বেজার হয় তবে আপনাকে সেটা ইগনোর করতে হবে।
হাশরের ময়দানে আপনাকে যে বাঁধা দিয়েছে, সেই লোকের নিজ কর্মের হিসাব আপনি দিবেন না। আপনার নিজের হিসাব ও তাকে দিতে হবে না। আপনার আজাব সে আপনার হয়ে মাথা পেতে নিবে না। আপনার পুরষ্কার আপনি তার সাথে শেয়ার ও করবেন না। কবরে মুনকার নাকীর যখন আপনাকে বজ্রকণ্ঠে জিজ্ঞাসা করবে মান দীনুকা, তোমার দ্বীন কি? তখন যার খোচা মারা কথা বা কে কি ভাববে সেই ভয়ে যদি দ্বীন পালন করতে ব্যর্থ হন, তখন কি উত্তর দিবেন? আমার দ্বীন মানুষ যা ভাবে তাই? মানুষ এর ভাবনা অনুযায়ী যেটুক মানতে পেরেছি সেটুক মেনেছি,বাকীটুক মানি নাই?
এই কথা বলে পার পাবেন?
যদি নাই পান, তবে কেন বিচলিত হচ্ছেন? কেউ যদি খারাপ ভাবে, কেউ যদি খোচা মারে, কেউ যদি আপনাকে নিয়ে হাসি তামাশা ট্রল করে যে দুই দিনের বৈরাগী,কাঠ মোল্লা তাতে কি আসে যায়?
তবে আপনি যদি এখানে ধৈর্য্য ধরতে পারেন তবে মহান রব যিনি আরশের মালিক, তিনি আপনার জন্য যে জান্নাত প্রস্তুত করে রেখেছেন সেটা কি আপনার জন্য উত্তম নয়?
আপনি আগে প্রতিদিন বুড়িগঙ্গার ঠিক যেই পয়েন্টে সুয়ারেজের লাইন ড্রেইন হয় সেখানে আগে বন্ধু বান্ধব নিয়ে গোসল করতেন। একদিন সুন্দর করে আপনাকে একজন গোসল করায় দিলো। আতর মাখায় দিলো। সাদা ধবধবে নতুন একটা জামাও কিনে দিলো। এখন আপনি কি আপনার সেই বন্ধুদের ডাকে আবার সেই পানিতে ঝাপ দিবেন? নাকি পরিষ্কার হওয়ার পর নিজে সেটা ধরে রাখার চেষ্টা করবেন?
আপনি দাড়ি রাখুন একমাত্র আল্লাহকে খুশি করার জন্য। আপনি হিজাব পড়ুন সেই রব কে সন্তুষ্ট করার জন্য। আপনি হারাম কে পরিত্যাগ করুন সেই আল্লাহর কাছে ক্ষমা লাভের আশায় যিনি বিচার দিবসের মালিক। আরেকজন মানুষ আপনাকে মুক্তি দিতে পারে না। অন্তরের দাসত্ব থেকে স্বাধীন হতে শিখুন। দাসত্ব করবেন একমাত্র আল্লাহর। নিজের নফস কিংবা আরেকজন মানুষের দাসত্ব কখনোই কাম্য নয়।
এখন আপনি একথা বলতে পারেন যে আপনি দ্বীন মানতে গেলে আপনার বন্ধু পরিবর্তন করা প্রয়োজন। ইসলাম আপনাকে একজন অমুসলিমের সাথে অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করে। আপনার বন্ধু আপনাকে ইসলাম মানতে বাধা দিচ্ছে (খোটা দেওয়া,ট্রল করা,ডিসকারেজ করা, হারামে ফিরে যেতে উৎসাহ দেওয়া, হারাম কাজে আহবান করা)। আপনি আপনার বন্ধুকে দাওয়াত দিন। যদি দাওয়াতে সে সাড়া না দেয় তো আপনি তাকে পরিত্যাগ করুন। কিন্তু ভুলেও আপনি আপনার রবের অবাধ্যতা করবেন না। ভুলেও না।
সূরা ইউনুস (يونس), আয়াত: ৬২
اَلَاۤ اِنَّ اَوْلِيَآءَ اللّٰهِ لَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُوْنَ ۖ ۚ
অর্থঃ মনে রেখো যারা আল্লাহর বন্ধু, তাদের না কোন ভয় ভীতি আছে, না তারা চিন্তান্বিত হবে।
সূরা আল জাসিয়াহ (الجاثية), আয়াত: ১৯
اِنَّهُمْ لَنْ يُّغْنُوْا عَنْكَ مِنَ اللّٰهِ شَيْــًٔـا ؕ وَ اِنَّ الظّٰلِمِيْنَ بَعْضُهُمْ اَوْلِيَآءُ بَعْضٍ ۚ وَاللّٰهُ وَلِىُّ الْمُتَّقِيْنَ
অর্থঃ আল্লাহর সামনে তারা আপনার কোন উপকারে আসবে না। যালেমরা একে অপরের বন্ধু। আর আল্লাহ পরহেযগারদের বন্ধু।
আপনার সবচেয়ে বড় বন্ধু হলেন আল্লাহ। আল্লাহ কে বন্ধু বানান। আর যেই বন্ধুর কথায় আপনি দ্বীন মানতে পারছেন না, তাকে দ্বীনের দাওয়াত দিন।
আজকে আপনি দ্বীন মানতে চান, কিন্তু আপনার জীবনে প্রতারণা জড়িত। হয় আপনি মিথ্যা বলা ছাড়তে পারেন নি, অথবা আপনি আপনার জীবনের বিভিন্ন যায়গায় এখনো প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। সেটা হতে পারে আপনি নিজে স্টুডেন্টশিপ শেষ হওয়ার পরেও বাসে স্টুডেন্ট ভাড়া দেন, সেটা হতে পারে আপনি ক্লাসে প্রক্সি দেন,প্রক্সি নেন, সেটা হতে পারে পরীক্ষায় আপনি অসুদপায় অবলম্বন করছেন,নকল করছেন। কেন করছেন? সামান্য দুনিয়ার প্রয়োজনে? আজকে এইটুক যদি রেজিস্ট করতে না পারেন, আজকে যদি ছাত্রাবস্থাতেই আপনি সৎ হতে না পারলেন তবে সামনের দিনে সততার বড় পরীক্ষা আসলে সেখানে কিভাবে পাশ করবেন?
যে ধোঁকা দেয় সে আমার উম্মত নয়!
____________________
.
একটি হাদীস দিয়ে শুরু করি: আবু হুরায়রা রা’দ্বিয়াল্লাহি ‘আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন স্ত্তপ করে রাখা শস্যের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি স্ত্তপের ভেতর হাত প্রবেশ করালে আঙ্গুলগুলো ভিজে গেল। স্ত্তপের মালিককে জিজ্ঞাসা করলেন-
ব্যাপার কী?
মালিক বললেন,
ইয়া রাসূলুল্লাহ! বৃষ্টির পানিতে তা ভিজে গিয়েছিল।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
তবে তা উপরে রাখলে না কেন, যেন মানুষ তা দেখতে পায়? যে ধোকা দেয় সে আমার দলভুক্ত নয়।
[সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১০২]
_________
হাদীসের শেষাংশে নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন “যে ধোঁকা দেয় সে আমার উম্মত নয়”।
নিজে প্রতারণার আশ্রয় নিতে গিয়ে কি হারাচ্ছেন খেয়াল করুন।
কেউ কেউ বলতে পারেন এইসব ছোটখাট ব্যাপারে এত স্ট্রিক্ট কেন? দুইটা দুই বিষয়!
এই কথাটা আপনি আল্লাহ যেদিন হাশরের ময়দানে বিচার করবেন সেদিন বলার সাহস করতে পারলে চালায় যান। আর যদি না থাকে তবে নিজেকে বিরত রাখুন। আত্নপ্রবঞ্চনাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হবেন না।
আরেক হাদীসে নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
“আমি হাসি-খুশি করি ঠিক কিন্তু সত্য ব্যতীত কখনো মিথ্যে বলি না”
[আত-ত্ববারানী, ১২/৩৯১]
আপনি কেন এই প্রতারণার অংশ নিচ্ছেন? আপনি দুনিয়ার ব্যাপারে ভয়ে থাকেন এজন্যেই তো?
পারসেন্টেজে আটকাবে,পরীক্ষায় নাম্বার কম পাবেন এই ভয়ে তো?
কালকে যদি অর্থকষ্টে থাকেন তখন কি তাহলে ভবিষ্যৎ এর চিন্তায় হারাম উপার্জন নিতে পিছপা হবেন না তাহলে? হারাম ইনকামে অর্জিত খাবার খেলে আপনার ইবাদত ই তো কবুল হবে না।
আপনি কেন আল্লাহর উপর ভরসা করতে পারেন না? আপনি কি আল্লাহর সম্পর্কে সুধারণা রাখতে পারেন না? যেই আল্লাহর জন্য আপনি হারাম কে ছেড়ে দিলেন সেই আল্লাহ কি আপনার জন্য একটা ব্যবস্থা করতে পারেন না? আল্লাহ আপনার রিজিকের মালিক। রিজিক মানে শুধু খাবার না। রিজিক মানে জীবনোপকরণ।
মনে করুন মূসা আলাইহিস সালামের সেই ঘটনা। তিনি তার কওম কে নিয়ে যখন লোহিত সাগরের সামনে দাড়িয়ে অন্যদিকে পেছন থেকে ফিরাউন তার বাহিনী নিয়ে ধেয়ে আসছে তখন কি আল্লাহ সমুদ্রকে দুই ভাগ করে দেন নি?
এটা একবার কল্পনা করুন তো! ধরুন আপনি তাদের একজন ছিলেন। তখন আপনার সামনে সাগর। পেছনে ফিরাউন। আপনার সামনে আর রাস্তা নেই। আপনি সাতার জানেন না। আপনার নৌকা নেই। আল্লাহ আপনার জন্য একটা আস্ত সাগর কে দ্বিখণ্ডিত করে দিলেন! সুবহানাল্লাহ।
স্মরণ করুন মা হাজেরার কথা। মরুভুমিতে তিনি আর তাঁর সন্তান ইসমাইল আলাইহিস সালাম একা। পানি নেই খাবার নেই। ৭ বার সাফা থেকে মারওয়া তে মা হাজেরা ছোটাছুটি করলেন। কোথাও কেউ নেই। হটাৎ আল্লাহর নির্দেশে হযরত জীবরাইল আলাইহিস সালাম এলেন। সূচনা হলো জমজম কূপের।
এই ঘটনাগুলো নিছক মনোরঞ্জনের জন্য আমাদের কে জানানো হয় নি। এখান থেকে শিক্ষা নিতে হবে। বিশ্বাসীদের জন্য এতে রয়েছে উপদেশ। এখন আপনাকে এটা ডিসাইড করতে হবে আপনি উপদেশ গ্রহণ করবেন নাকি আল্লাহর অবাধ্যতা আর গোমরাহীতে লিপ্ত থাকবেন।
অন্তরের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত আল্লাহর প্রতি সু-ধারণা পোষণ করা ও সর্বদা আল্লাহর রহমতের আশায় হৃদয়কে ভরপুর রাখা। রাসূলুল্লাহ বলেন: “আল্লাহর প্রতি সুধারণা পোষণ করা আল্লাহর সর্বোত্তম ইবাদতের অন্যতম।” (১)
যত কঠিন বিপদ বা সমস্যাই আসুক না কেন, মুমিনের হৃদয়ে অবিচল আস্থা থাকে যে, তার করুণাময় দয়াময় প্রতিপালক তাকে অবশ্যই সাহায্য করবেন এবং তার জন্য যা কল্যাণকর তারই ব্যবস্থা করবেন। আল্লাহর রহমতের প্রতি অবিচল আস্থার সামান্যতম ঘাটতি ঈমানেরই ঘাটতি। আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া, হতাশা বা অবসাদে আক্রান্ত হওয়া অবিশ্বাসেরই নামান্তর। কুরআন কারীমে আল্লাহ বলেন: “একমাত্র কাফির সম্প্রদায় ছাড়া কেউই আল্লাহর দয়া থেকে নিরাশ হয় না।” (২)
ভবিষ্যৎ নিয়ে হতাশা ও দুশ্চিন্তা শয়তানের বিদ্যালয়ের অন্যতম পাঠ্য। মহান করুণাময় আল্লাহ বলেন: “শয়তান তোমাদেরকে দারিদ্রের ভয় প্রদর্শন করে এবং তোমাদেরকে অশ্লীল কাজের নির্দেশ দেয়, আর আল্লাহ তোমাদেরকে তাঁর পক্ষ থেকে ক্ষমা ও বরকত-রহমতের অঙ্গীকার করেন।”(৩) সাম্ভাব্য বিপদের ক্ষেত্রে তো নয়ই, প্রকৃত বিপদের ক্ষেত্রেও মুমিন হতাশ হন না। তিনি বিশ্বাস করেন যে, এ বিপদের মধ্যে দুনিয়া-আখিরাতের কোনো না কোনো কল্যাণ রয়েছে।
আল্লাহ বলেন: “নিশ্চয় কষ্টের সাথেই স্বস্তি আছে। নিশ্চয় কষ্টের সাথেই স্বস্তি আছে।”(৪) এজন্য মুমিন বিপদ বা অসুবিধার মধ্যে নিপতিত হলে এ ভেবে খুশি হন যে, এ কষ্ট মূলত আগত স্বস্তিরই পূর্বাভাস মাত্র। মহান আল্লাহ আমাদের অন্তুরগুলো তাঁর রহমতের আশায় ভরে দিন এবং সকল হতাশা ও নৈরাশ্য থেকে মুক্ত রাখুন।
আপনি আল্লাহর প্রতি সুধারণা রাখুন। লোকে কি বলবে এটা ভুলে যান। নিজে সৎ হোন। তওবা করুন। ফিরে আসুন আল্লাহর দিকে।
عَنْ أبي هُرَيْرَةَ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- قال: قال رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : «إِنَّ اللَّهَ قَالَ: إِذَا تَلَقَّانِي عَبْدِي بِشِبْرٍ تَلَقَّيْتُهُ بِذِرَاعٍ، وَإِذَا تَلَقَّانِي بِذِرَاعٍ تَلَقَّيْتُهُ بِبَاعٍ، وَإِذَا تَلَقَّانِي بِبَاعٍ أَتَيْتُهُ بِأَسْرَعَ» . (م) صحيح
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “আল্লাহ বলেছেন: আমার বান্দা যখন এক বিঘত এগিয়ে আমার সাথে সাক্ষাত করে আমি তার সাথে সাক্ষাত করি একহাত এগিয়ে। যখন সে একহাত এগিয়ে আমার সাথে সাক্ষাত করে আমি একবাহু এগিয়ে তার সাথে সাক্ষাত করি। যখন সে আমার সাথে সাক্ষাত করে একবাহু এগিয়ে আমি তার নিকট আসি আরও দ্রুত পদক্ষেপে”। [মুসলিম]
عَنْ شُرَيْحٍ قَال: سَمِعْتُ رَجُلاً مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ: قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم : «قَالَ اللَّهُ تَعَالَى: يَا ابْنَ آدَمَ قُمْ إِلَيَّ أَمْشِ إِلَيْكَ وَامْشِ إِلَيَّ أُهَرْوِلْ إِلَيْكَ» . (حم) صحيح
শুরাইহ্ রাহিমাহুল্লাহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবিদের এক ব্যক্তিকে বলতে শুনেছি: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আল্লাহ তা‘আলা বলেন: হে বনি আদম, তুমি আমার দিকে দাঁড়াও আমি তোমার দিকে চলব, তুমি আমার দিকে চল আমি তোমার দিকে দ্রুত পদক্ষেপে যাব”। [আহমদ]
عن معقل بن يسار -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : “يقولُ ربُّكم تبارك وتعالى: يا ابنَ آدم تَفَرَّغْ لعبادتي أملأ قلبَك غنًى، وأملأ يديك رزقًا، يا ابن آدم لا تباعد مني فأمْلأ قَلبَك فقرًا، وأملأ يديك شُغْلاً». (ك) صحيح لغيره
মা‘কাল ইব্ন ইয়াসার থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “তোমাদের রব বলেন: হে বনি আদম, তুমি আমার ইবাদতের জন্য মনোনিবেশ করো, আমি তোমার অন্তরকে সচ্ছলতায় ভরে দেব, তোমার হাত রিজিক দ্বারা পূর্ণ করে দেব। হে বনি আদম, তুমি আমার থেকে দূরে যেয়ো না, ফলে আমি তোমার অন্তর অভাবে পূর্ণ করে দেব এবং তোমার দু’ হাতকে কর্মব্যস্ত করে দেব”। [হাকেম] হাদিসটি সহিহ লি গায়রিহি।
তাহলে আর বাঁধা রইলো কি?
শেষ করার আগে সূরা কাসাসের কিছু আয়াতের তরজমা পেশ করছি। বুদ্ধিমানের জন্য ইশারাই যথেষ্ট।
“আমি মূসা ও ফিরআউনের কাহিনী হতে কিছু তোমার কাছে সত্যিকারভাবে বিবৃত করছি বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের উদ্দেশে।”
“বস্তুতঃ ফেরাউন দেশে উদ্ধত হয়ে গিয়েছিল আর সেখানকার অধিবাসীদেরকে বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত করে তাদের একটি শ্রেণীকে দুর্বল করে রেখেছিল, তাদের পুত্রদেরকে সে হত্যা করত আর তাদের নারীদেরকে জীবিত রাখত; সে ছিল ফাসাদ সৃষ্টিকারী।”
“দেশে যাদেরকে দুর্বল করে রাখা হয়েছিল আমি তাদের প্রতি অনুগ্রহ করার ইচ্ছে করলাম, আর তাদেরকে নেতা ও উত্তরাধিকারী করার (ইচ্ছে করলাম), আর (ইচ্ছে করলাম) তাদেরকে দেশে প্রতিষ্ঠিত করতে, আর ফেরাউন, হামান ও তাদের সৈন্য বাহিনীকে দেখিয়ে দিতে যা তারা তাদের (অর্থাৎ মূসার সম্প্রদায়ের) থেকে আশঙ্কা করত।”
“আমি মূসার মায়ের প্রতি ওয়াহী করলাম যে, তাকে স্তন্য পান করাতে থাক। যখন তুমি তার সম্পর্কে আশঙ্কা করবে, তখন তুমি তাকে দরিয়ায় নিক্ষেপ করবে, আর তুমি ভয় করবে না, দুঃখও করবে না, আমি তাকে অবশ্যই তোমার কাছে ফিরিয়ে দেব আর তাকে রসূলদের একজন করব।”
“অতঃপর ফেরাউনের লোকজন তাকে উঠিয়ে নিল যাতে সে তাদের জন্য শত্রু হতে ও দুঃখের কারণ হতে পারে। ফেরাউন, হামান ও তাদের বাহিনীর লোকেরা তো ছিল অপরাধী।”
“ফেরাঊনের স্ত্রী বলল- ‘এ শিশু আমার ও তোমার চক্ষু শীতলকারী, তাকে হত্যা কর না, সে আমাদের উপকারে লাগতে পারে অথবা তাকে আমরা পুত্র হিসেবেও গ্রহণ করতে পারি আর তারা কিছুই বুঝতে পারল না (তাদের এ কাজের পরিণাম কী)।”
“মূসার মায়ের অন্তর বিচলিত হয়ে উঠল। সে তো তার পরিচয় প্রকাশ করেই ফেলত যদি না আমি তার চিত্তকে দৃঢ় করতাম যাতে সে আস্থাশীল হয়।”
“মূসার মা মূসার বোনকে বলল- ‘তার পিছনে পিছনে যাও।’ সে দূর থেকে তাকে দেখছিল কিন্তু তারা টের পায়নি।”
“আগে থেকে আমি তাকে ধাত্রী-স্তন্য পান থেকে বিরত রেখেছিলাম। মূসার বোন বলল- ‘আমি কি তোমাদেরকে এমন একটা পরিবারের খোঁজ দেব যারা তাকে তোমাদের পক্ষে লালন পালন করবে আর তারা হবে তার হিতাকাঙ্ক্ষী।’”
“এভাবে আমি তাকে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে আনলাম যাতে তার চোখ জুড়ায়, সে দুঃখ না করে আর জানতে পারে যে, আল্লাহর ও‘য়াদা সত্য; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না।”
সূরা কাসাস, আয়াত ৩-১৩
টিকা সমূহ
১. আবূ দাউদ, আস-সুনান ৪/২৯৮ইবনু হিব্বান, আস-সহীহ ২/৩৯৯; হাকিম, আল-মুসতাদরাক ৪/২৮৫; হাইসামী, মাওয়ারিদুয যামআন ৮/৩১। হাদীসটির সনদ গ্রহণযোগ্য।
২. সূরা ইউসূফ,আয়াত ৮৭।
৩. সূরা বাকারা, আয়াত ২৬৮।
৪. সূরা আল ইনশিরাহ, আয়াত ৫-৬।