উস্তাদ হুজাইফা আওয়াদ
কুরআনে কারিমে বিশেরও অধিক স্থানে ‘আতিউল্লাহা ওয়া আতিউর রাসুল’ (তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করো) বলা হয়েছে। অদ্ভুত ব্যাপার হলো, কোথাও শুধুমাত্র ‘আতিউল্লাহ’ (আল্লাহর আনুগত্য করো) বলেই থেমে যাওয়া হয় নি। সব স্থানেই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা নিজের সাথে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার আনুগত্যের কথাও একই ‘সিয়াকে’ বলেছেন। কিন্তু এর বিপরীতে শুধু মাত্র ‘আতিউর রাসুল’ (রাসুলের আনুগত্য করো) এতটুকু বলা হয়েছে। এমন আয়াত আছে ছয় কিংবা সাতটি। এসব আয়াতের বেশির ভাগের মর্ম হলো, যে ব্যক্তি রাসুলের আনুগত্য করলো, সে কেমন যেন আল্লাহরই আনুগত্য করলো।
এবার আরেকটা ব্যাপারে আসি, আল্লাহ তাআলা সুরা নিসার ৫৯ নং আয়াতে বলেছেন— ‘তোমরা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার আনুগত্য করো, রাসুলের আনুগত্য করো, এবং উলুল আমরদেরও’ (শাসক কিংবা উলামা)। এখানে দেখার বিষয় হলো, আল্লাহ এবং রাসুল শব্দের শুরুতে ‘আনুগত্য’ শব্দ স্বতন্ত্র
ব্যবহার হয়েছে, কিন্তু ‘উলুল আমরের’ শুরুতে আনুগত্য শব্দ ব্যবহার হয়নি, বরং বাক্যের পূর্ববর্তী অংশের উপরে রেখে দেওয়া হয়েছে। ইবনুল কায়্যিম রহ. বলেন— আয়াতের উদ্দেশ্য এ কথা বুঝানো যে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা যেমন শরিয়ার কোনো হুকুম দেওয়ার ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকেও আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা এই স্বতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্য দিয়েছেন। অর্থাৎ, কোনো হুকুম যদি রাসুলের হাদিসে পাওয়া যায়, অথচ কুরআনে সে সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট দিক নির্দেশনা নেই, তবুও এ অবস্থায় ‘তাশরি’ হিসেবে হাদিস এবং কুরআনে হুকুম সমান গুরুত্ব রাখে। বিপরীতে ‘উলুল আমরের’ শুরুতে ইতাআত শব্দ না আনার হেকমত হলো, উলুল আমর কোনো স্বতন্ত্র শরিয়া প্রণেতা নন, তারা যতক্ষণ আল্লাহ ও রাসুলের শরিয়ার মাঝে থাকবে, তাদেরকে মানতে হবে অন্যথায় না।
এবার অন্য এক আয়াতে যাই, সুরা বাকারাতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেছেন—’আপনি যে কিবলার উপরে ছিলেন, তা কেবল আমি এজন্য নির্ধারণ করেছিলাম, যেন আমি জানতে পারি—কে রাসুলের আনুগত্য করে, আর কে পশ্চাদগমন করে..’
এখানে মদিনায় যাওয়ার পরে সতের মাস
মুসলিমদের পরিবর্তিত কিবলা বাইতুল মুকাদ্দাসের কথা বলা হয়েছে। একটু খেয়াল করুন, আয়াতে কিন্তু বলা হচ্ছে ‘আমি সে কেবলা নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম’ অথচ আপনি কুরআনে কারিমের আদ্যোপান্ত ঘেঁটে ফেললেও বাইতুল মুকাদ্দাসের দিকে মুসলিমদের কেবলা পরিবর্তন করে দেওয়ার প্রথম বিধান খুজে পাবেন না। এটা ছিলো রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদেশ, কিংবা হাদিস। কিন্তু পরবর্তীতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা রাসুলের এই আদেশকেই এমন ভাবে উপস্থাপন করছেন, কেমন যেন এটা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার আদেশ।
সুরা হাশরে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন— ‘তোমরা যেসকল খেজুর গাছ কেটেছিলে, কিংবা না কেটে যেগুলোকে নিজ কাণ্ডের উপরে রেখে দিয়েছিলে, এসব ছিলো আল্লাহর হুকুমেই…।’
ঘটনা হলো, মুসলিমরা মদিনার প্রসিদ্ধ ইহুদি গোষ্ঠী বনু নাযিরের কেল্লা অবরুদ্ধকালে তাদেরকে হাতিয়ার নামিয়ে আত্মসমর্পণ করার ক্ষেত্রে জোর দেন, তারা মানছে না বিধায় কতক সাহাবি তাদের কেল্লার সামনের খেজুর গাছ কাটতে শুরু করেন। এটা নিয়ে ইহুদিরা পরবর্তীতে মুসলিমদের উপরে আপত্তি উঠায়। তাদের আপত্তির জবাবে এই আয়াত নাজিল হয়েছে। এখানে বলা হচ্ছে, তোমরা খেজুর গাছে কেটেছিলে, সেটা আমার হুকুমেই ছিলো। অথচ কেউ কুরআনে কারিমের কোন আয়াতে এই খেজুর গাছ কাটার অনুমতির ব্যাপারে কোনো হুকুম দেখাতে পারবে না। এটা ছিলো রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদেশ। তবুও আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা এমন ভাবে বলছেন, কেমন যেন রাসুলের আদেশ মানেই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার আদেশ।
আমাদের যে সকল ওরিয়েন্টালিস্ট(প্রাচ্যবিদ, যেমন: গোল্ড যেহের, উইলিয়াম ম্যুর, এ. যে. আরবেরি প্রমুখ) কিংবা তাদের দ্বারা প্রভাবিত কোনো লেখক (যেমন : ত্বহা হুসাইন, মুহাম্মাদ আল খুশত, এমনকি বাংলাদেশের নব্য বুদ্ধিজীবি তাজ হাশমী) হাদিসের উপরে আপত্তি উঠান, তাদের মৌলিক দাবি হলো, হাদিস ও কুরআনের মাঝে আকাশ-পাতাল পার্থক্য, হাদিস বলতে রাসুলের প্রাত্যহিক আলাপন মাত্র, পরবর্তী কালের জন্যও এটা কখনো অনুসরণীয় হওয়ার মত কোনো গুরুত্ব রাখে না। তাদের জন্য উপরের কথাগুলো বলা হলো যে, কুরআনের দৃষ্টিতে হাদিসের মর্যাদা কেমন।
এবার আসি, তারা এই দাবির পক্ষে দলিল হিসেবে কী উপস্থাপন করে থাকেন? এর আগে বলে রাখি, এদের মাঝে কয়েকটা গ্রুপ আছে। কেউ কেউ বিবেক কিংবা বিজ্ঞানের ভুল ব্যবহার করে আপত্তি করেন যে, কিছু হাদিস বিজ্ঞানসম্মত না, তাই সেগুলো তারা মানবেন না। আবার কেউ কেউ আপত্তি উঠান হাদিস সঙ্কলনের ইতিহাস নিয়ে, তাদের বক্তব্য হলো—হাদিস তৃতীয় শতকের পরে এসে সঙ্কলনের রূপ দেখেছে। তখনকার সময়ে যার সামনে যা কিছু কল্প কাহিনি কিংবা অলিক কথাবার্তা ছিলো, সেসবই আপন আপন সঙ্কলনে হাদিস হিসেবে তারা স্থান দিয়েছে। মোটকথা কুরআনের মত প্রথম শতকেই হাদিস লেখা হয়নি, বরং তিনশ বছর পরে লেখা হয়েছে, তাই এর উপরে মোটেও আস্থা রাখা যায় না।
আমাদের আজকের আলাপে থাকবেন, এই দ্বিতীয় যুক্তির দল, যারা সঙ্কলন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। প্রথম কথা হলো—তাদের এই ধারণার কারণ, গত এক শতাব্দী আগেও হাদিসের সব কিতাব আমাদের সামনে আসেনি। কমন কিছু কিতাব ও কুতুবে সিত্তাহ, এগুলোই সামনে ছিল। এর বাইরে হাদিসের শত শত কিতাব আছে, যার সন্ধান তেমন জানা ছিল না। যেমন: আর রিসালাতুল মুসতাতরফাতে হাদিসকেন্দ্রিক ১৪০০ কিতাবের নাম আছে। হাদিস, উলুমুল হাদিস মিলিয়ে। ওরিয়েন্টালিস্টদের এই প্রশ্নের কারণ তাদের সামনে পর্যাপ্ত মাসাদির ও উৎসগ্রন্থ ছিল না। তারা দেখেছে, কমন সব হাদিসের কিতাব দুই শতাব্দীর পর লেখা। এই ধরনের আপত্তি আমাদের সালাফি ভাইরাও করে থাকেন ফিকহ নিয়ে। তারা বলেন ফিকহের তাদবিন, উৎপত্তি ও বিকাশ চতুর্থ শতাব্দীর পর। এটাও ভুল। মাজহাবের সূচনা দ্বিতীয় শতাব্দীর ভেতরেই শেষ হয়ে গেছে।
এবার দেখি, তাদের দাবির যৌক্তিকতা আছে কিনা।
১। হাদিস সঙ্কলন নবিজির যুগেই শুরু হয়েছে। ইমাম বুখারিদের আগে বহু কিতাব লেখা হয়েছে।
২। বুখারিতে দেখবেন, তিনি হুমাইদি (আব্দুল্লাহ ইবনু যুবাইর-মৃত্যু -২১৯) থেকে অনেক হাদিস এনেছেন। হুমাইদি ইমাম বুখারির উস্তাদ। তাঁর কিতাব আছে মুসনাদুল হুমাইদি। এটি আগে পাণ্ডুলিপি আকারে ছিল, এখন বৈরুত থেকে ছেপে এসেছে। দেখুন, এটি বুখারির আগের কিতাব। মুসনাদুল হুমাইদি আসার কারণে এটা বলারও সুযোগ নেই ইমাম বুখারি হুমাইদির নামে হাদিস বানিয়ে চালিয়ে দিয়েছেন। বুখারিতে হাদিস যে শব্দে আছে, সে হাদিস মুসনাদে হুমাইদিতেও একই শব্দে আছে।
৩। মুসলিমে দেখবেন, ইমাম মুসলিম ১৫০০ এর বেশি রেওয়ায়েত এনেছেন আবু বকর ইবনু আবি শাইবা(মৃত্যু ২৩৪ হি.) থেকে। এখন তার ‘মুসান্নাফ’ কিতাব শায়খ আওয়ামার তাহকিকে ২৬ খণ্ডে ছেপে এসেছে, এটাও আগে প্রকাশিত রূপে ছিলো না। মুসলিম, ইবনে আবি শাইবা থেকে যা হাদিস এনেছেন, বেশিরভাগ তাঁর কিতাবে আছে।
৪। তিরমিজি খোলেন, সেখানে হান্নাদ ইবনু সারি থেকে বহু হাদিস আছে। হান্নাদ ইমাম তিরমিজির উস্তাদ
( মৃত্য -২৪৩হি.)। এখন তিন খণ্ডে ছেপে এসেছে
তার কিতাবুয যুহদ।
৫। আবু দাউদে আছে সাইদ ইবনু মানসুরের নাম। তার সুনানে সাইদ ইবনে মানসুর ছেপে এসেছে দুই খন্ডে।
যে কিতাব সম্পর্কে হাফেয যাহাবী বলেছেন-
‘من نظر في (سنن سعيد) عرف حِفْظَ الرجل وجلالته’
৬। ইমাম বুখারির দাদা উস্তাদ আবদুর রাজ্জাক। ২১১ হিজরিতে তাঁর ইন্তেকাল। তিনি ইমাম আবু হানিফার ছাত্র। এখন ছেপে এসেছে তার কিতাব মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক। দেখুন, ইমাম বুখারির দাদা উস্তাদই বিশাল কলেবরে হাদিস সঙ্কলন করে গেছেন। এখন কেউ যদি বলে বুখারি প্রথম এই কাজ করেছেন তা স্পষ্ট ভুল।
৭। আব্দুর রাজ্জাক আবার হাদিস এনেছেন তাঁর উস্তাদ মামার ইবনু রাশেদ থেকে। মামারের কিতাব ‘জামে মামার’ও এখন ছেপে এসেছে। মামার ইবনু রাশেদ ১৫১ হিজরিতে মারা যান। তারমানে দেড়শো হিজরির মধ্যে হাদিস সংকলিত হয়েছে সেটাও প্রমাণ পেলাম। ইমাম বুখারি আরো অনেক পরে যেসব হাদিস লিখেছেন তার অনেকগুলো মামারের এই কিতাবে হুবহুই আছে।
৮। আব্দুর রাযযাকের অপর একজন বরেণ্য উস্তায হলেন ইমাম আজম আবু হানিফা রহ., খোদ ইমাম আবু হানিফার সংকলিত হাদিসেরর কিতাবও আমাদের সামনে রয়েছে ‘কিতাবুল আসার’। এটি শুধু সাধারণ একটি সঙ্কলনই না, বরং হাদিসের ইতিহাসে অনুচ্ছেদ ও বিষয়ভিত্তিক সঙ্কলনের তালিকায় সর্ব প্রথম। হাম্মাদ ইবনু আবি হানিফা, কাযি আবু ইউসুফ, মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান শাইবানি, আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক, যুফার ইবনুল হুজাইলসহ বরেণ্য দশ বারোজন শাগরেদ তাঁর এ কিতাব বর্ণনা করেন। বলা বাহুল্য যে, এ কিতাবও একশ চল্লিশ থেকে পঞ্চাশের মাঝেই সংকলিত হয়েছে।
বিস্তারিত জানতে দেখুন—মুকাদ্দিমাতু কিতাবিল আসার -শায়খ আবব্দুর রশিদ নোমানি। মুসনাদুল ইমামিল আজমের ভূমিকা-শায়খ আব্দুল হাফিয মাক্কি। ইমাম ইবনে মাজা ওর ইলমে হাদিস।
৯। বিখ্যাত অনেক রাবি যেমন কুতাইবা ইবনু
সাইদ, মুহাম্মদ ইবনুল কাসেম এরা সবাই হাদিস এনেছেন ইমাম মালেক (মৃত্যু -১৭৯হি.) থেকে। তাঁর নিজেরও কিতাব আছে ‘মুয়াত্তা মালেক’। এটিও তিনি সঙ্কলন করেছেন দেড়শো হিজরির আগে। হাদিস ও আসার মিলে এগারোশর বেশি বর্ণনা আছে তাঁর এ কিতাবে।
এর অর্থ হলো, আমরা যতই পিছনে যাচ্ছি, প্রাচীন থেকে প্রাচীনতর হাদিসের সঙ্কলন পেয়ে যাচ্ছি।
১০। মামার ইবনু রাশিদের আলাপে আসা যাক। তিনি হাদিস বর্ননা করেছেন হাম্মাম ইবনু মুনাব্বিহ থেকে। তিনি সিনিয়র তাবেয়িদের অন্যতম, সরাসরি হাদিস নিয়েছেন আবু হুরাইরা রাযি. থেকে। তিনি আবু হুরাইরা রাযি. থেকে যা শুনতেন লিখে ফেলতেন। আবু হুরাইরা রাযি. থেকে সাড়ে পাচ হাজারের বেশি হাদিস বর্ণিত আছে বিভিন্ন হাদিসগ্রন্থে। হাম্মাম ইবনু মুনাব্বিহর একটা সহিফাহ ছিল, যা গত শতাব্দীর শেষ দিকে প্রফেসর ড. হামিদুল্লাহ রহ. এর তাহকিকে প্রকাশিত হয়। তাহলে দেখুন, আরো অনেক পিছনে পৌঁছে গেলাম আমরা। যিনি সরাসরি সাহাবি থেকে হাদিস শুনেছেন তার সঙ্কলনকৃত কিতাবও আজ আমাদের হাতে। সুতরাং তৃতীয় শতাব্দী থেকে হাদিস সঙ্কলন শুরু এটা যে অসার এবং স্পষ্ট ভুল তা প্রমাণ হলো। এখানে পঞ্চাশ খণ্ডে প্রকাশিত মুসনাদে আহমাদের কথাও মাথায় রাখতে হবে, তিনি কিন্তু কুতুবে সিত্তার প্রায় সবারই উস্তাদ ও উপরের স্তরেরর মানুষ।
১১। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একজন কনিষ্ঠ সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস রাযি., নবিজির যুগে তাঁর অনুমতিক্রমে হাদিস লিখতেন, এমন বর্ণনা সরাসরি আবু হুরাইরা থেকেও আছে। তার এ সহিফা ইতিহাসে ‘আস সাদাহিকাহ’ নামে পরিচিত। এই পাণ্ডুলিপিও আমাদের সামনে আছে। অতএব, আমরা সরাসরি নবি যুগে হাদিস সঙ্কলনের প্রমাণও পেলাম। এভাবে আমরা শুধুমাত্র বুখারি খুলেই যদি পিছনের দিকে যেতে থাকি, তাহলে দেখবো খোদ বুখারির সনদ তথা রাসুল পর্যন্ত পৌঁছার চেইনের মাঝে, অনেক রাবী এমন পাওয়া যাচ্ছে, যাদের প্রত্যেকেরই হাদিসের নিজস্ব সঙ্কলন ছিলো। যাদের কেউ দ্বিতীয় শতকের, কেউ প্রথম শতকের, কেউ আবার সাহাবীযুগের।
১২। সাহাবিদের অনেকের হাদিসের সহিফাহ ছিল। জাবের ইবনু আবদুল্লাহ, আনাস ইবনু মালেকসহ অনেক সাহাবির নিজস্ব সহিফাহ ছিল। প্রায় ৪৮ জন সাহাবির এমন সহিফাহ ছিল। তাদের ব্যাপারে বিস্তারিত লিখে দেখিয়েছেন প্রফেসর ড. মুস্তফা আযমি রহ. ‘কুত্তাবুন নাবি সা.’ এবং তার ঐতিহাসিক ‘দিরাসাত ফিল হাদিসিন নাবাওয়ি ওয়া তারিখু তাদবিনি’ -কিতাবে। অর্থাৎ, দেখা গেল, হাদিস সঙ্কলনের সময়কাল সম্পর্কে ওরিয়েন্টালিস্টদের বক্তব্য ও অবস্থান স্পষ্ট ভুল। এ বিষয়ে আরো জানতে ডক্টর মুস্তফা সিবাই, ড. আবু শাহাবা, ড. মুস্তফা আজমির কিতাব গুলো দেখা যেতে পারে।
মোটকথা, হাদিসের মত দুর্ভেদ্য শক্তিশালী একটা শেকড়কে যারা দু-চারটে ঠুনকো যুক্তি দিয়ে কাবু করে ফেলবেন ভাবেন, তাদের হয়তো জানার স্বল্পতা আছে, কিংবা জেনেও হঠকারিতা করে থাকেন। শুধু হাদিস নয়, রিজাল তথা ‘হাদিস বর্ণনাকারীদের জীবন চরিত’ শাস্ত্রের ব্যাপারেই দেখুন আজ থেকে দেড়শ বছর আগে ১৮৫০ সনে কত শক্তিশালী স্বীকারোক্তি দিয়ে গেছেন অস্ট্রিয়ান প্রাচ্যবিদ স্প্রেনজার( Aloys Sprenger) তিনি হাফেয ইবনে হাজার রহ. লিখিত ‘আল ইসাবা’ গ্রন্থটি নিজ তাহকিকে প্রকাশ করেন কলকাতা থেকে। ভূমিকায় লেখেন—(সারকথা) ‘হাদিস সঙ্কলনের ইতিহাস শুধু মুসলিমদের নয়, বরং গোটা মানোবেতিহাসের এক বিশাল অর্জন, কারণ বিশ্ব সভ্যতার সামনে মুসলিমরাই কেবল এমন এক জাতি, এক ব্যক্তি অর্থাৎ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কথা সঙ্কলন করতে যাদের সাড়ে পাঁচ লক্ষ মানুষ নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে দিয়েছেন, আজ আমরা চাইলেই এসকল মনীষীদের জীবনের আদ্যোপান্ত ইতিহাস বইয়ের পাতায় জ্বলজ্বল করতে দেখি।’
গ্রন্থপুঞ্জি
—————-
১. হুয্যিয়্যাতে হাদিস-মুফতি তাকি উসমানি।
২. আল হাদিস কা’বলাত তাদবিন।
৩. আস সুন্নাতুন নাবাবিয়্যাহ, হুজ্জিয়্যাতুহা ওয়া তাদবিনুহা- ড. আব্দুল মাজেদ গাওরি
৪. তাদবিনে হাদিস-বাশশার আওয়াদ তাহকিককৃত
মানাযির আহসান গিলানী
৫. ইলামুল মুওয়াক্কিয়িন-হাফেয ইবনুল কায়্যিম
৬. সুমুমুল ইসতিশরাক-মুহাম্মাদ আনওয়ার আল জিনদি
৭. মুকাদ্দিমাতু কিতাবিল আসার-মাওলানা আব্দুর রশিদ নোমানি।
৮. মুকাদ্দিমাতুল ইসাবাহ-স্প্রেনজার।