বরকত লাভের আমলসমূহ

মূল শব্দ হলো বারাকাহ। আরবী শব্দ। তার কয়েকটি অর্থ রয়েছে। বৃদ্ধি, আধিক্য, সৌভাগ্য, উন্নতি, কল্যান, সুখ ইত্যাদি। ইবনু আব্বাস রা. বলেন,

البركة: الكثرة من كل خير
বরকত হলো প্রতিটি কলানের বৃদ্ধি

সহিহ বুখারীরর সবচেয়ে সমৃদ্ধ ব্যাখ্যাকার ফাতহুল বারীর লেখক বলেন,

لأن الغالب من الناس لا يغرف البركة الا فى الشيء الكثير
অধিকাংশ মানুষ মনে করে বরকত মানেই অধিক বস্তু। বাস্তবে বিষয়টি এমন নয়। অল্প বস্তুতেও বরকত হতে পারে। 

ইবনুল কাইয়িম রহ. বলেন, 

বর্তমানে অনেকেই বলে থাকেন, যে আমরা অনেক আয় করছি। রাত দিন পরিশ্রম করছি। আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়ছি। কিন্তু এত পরিশ্রম করার পরও এটার বাহ্যিক কোনো প্রভাব আমরা লক্ষ করছি না। এটা আসলে বরকতশূন্যতার আলামত। রিজিকের মধ্যে বরকত মোনে হলো, যথেষ্ট করে দেয়া। 

যা কিছু উপকারী তাই বরকতময়। অধিক উপকারী বস্তু/বিষয়সমূহ অধিক বরকতময়। বরকত হলো কল্যানকর বস্তু, যা আল্লাহ তাআলা বিভিন্ন সৃষ্টজীবকে দিয়ে থাকেন।

যখন রিজিকে বরকত দেয়া হয়, তখন অল্প রিজিকও বেশীতে পরিণত হয়ে যায়। আর রিজিক যখন বরকত শূন্য হয়, তখন বেশী রিজিকও অল্পে পরিণত হয়ে যায়। যখন সময়ে বরকত দেয়া হয়, তখন অল্প সময়েও অনেক বেশী কাজ করা যায়। অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করা সহজ হয়ে যায়। আর যখন সময় থেকে বরকত তোলে দেয়া হয়, তখন খুব লম্বা সময় পেয়েও কিছুই করা যায় না।

বরকত লাভের ক্ষেত্রে কিছু প্রতিবন্ধকতা আছে। কয়েকটি তুলে ধরছি। 

 

গুনাহ

সকল গুনাহই বরকতের দরজা কে বন্ধ করে দেয়।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

وإن العبد ليحرم الرزق بالذنب يصيبه

নিশ্চয় বান্দা স্বীয় গোনাহের কারণে রিজিক থেকে বঞ্চিত হয়
(মুসনাদে আহমদ, ইবনু মাজাহ, সহিহ ইবনু হিব্বান, হাকিম)

বিশেষত, স্পেসিফিক কয়েকটা গোনাহের ব্যাপারে সরাসরি বলা হয়েছে এগুলোর কারণে বরকত তোলে নেয়া হয়।

হারাম পন্থায় সম্পদ অর্জন

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

فمَن يَأْخُذْ مَالًا بحَقِّهِ يُبَارَكْ له فِيهِ، وَمَن يَأْخُذْ مَالًا بغيرِ حَقِّهِ فَمَثَلُهُ، كَمَثَلِ الذي يَأْكُلُ وَلَا يَشْبَعُ

যে ব্যক্তি হালাল পন্থায় সম্পদ অর্জন করে, তাতে বরকত দেয়া হয়। আর যে ব্যক্তি হারাম পন্থায় সম্পদ অর্জন করে, সে ব্যক্তি হলো ঐ ব্যক্তির মত যে খাবার খায় কিন্তু তৃপ্ত হয় না। (সহিহ মুসলিম, ১০৫২)

আমরা জানি, কারো আয়ের উৎস যদি হারাম হয়, তাহলে তার দুআ, অন্যান্য ইবাদত কবুল হয় না।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

নিশ্চয় আল্লাহ পবিত্র। আর পবিত্র ছাড়া তিনি কিছুই নেন না। (সহিহ মুসলিম)

সুদ

এ বিষয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন,

يَمْحَقُ اللَّهُ الرِّبَا وَيُرْبِي الصَّدَقَاتِ

নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা সুদকে ধ্বংস করবেন, আর দানকে বাড়িয়ে দিবেন। (সুরা বাকারাহ)

প্রাপ্ত রিজিক এ সন্তুষ্ট না থাকা

إنَّ اللهَ تعالى يبتلِي العبدَ فيما أعطاهُ، فإنْ رضيَ بِما قسمَ اللهُ لهُ بوركَ لهُ فيهِ ووسَّعَهُ، وإنْ لمْ يرضَ لمْ يباركْ لهُ

নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা বান্দাকে প্রদত্ত জিনিষের মাধ্যমে পরীক্ষা করে থাকেন। আল্লাহ তার জন্য যা নির্ধারণ করেছেন, তাতে যদি সে সন্তুষ্ট থাকে, তাহেলে তাতে আল্লাহ তাআলা বরকত দিয়ে দেন। এবং প্রশস্ত করে দেন। আর যদি সন্তুষ্ট না থাকে, তাহলে তাতে বরকত দেন না। (সহিহুল জামে, ১৮৯৬, মুসনাদে আহমদ ২০২৭৯)

আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ হওয়া

আল্লাহ তাআলা বলেন,

যে ব্যক্তি আমার জিকির থেকে বিমুখ হয়ে যাবে,তার জন্যে জীবনে বাঁচার সামগ্রী সংকুচিত হয়ে যাবে। (সুরা ত্বহা, ১২৪) 

 

বরকত লাভের আমলসমূহ: 

ঈমান ও তাকওয়া

আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَلَو أَنَّ أَهلَ القُرى آمَنوا وَاتَّقَوا لَفَتَحنا عَلَيهِم بَرَكاتٍ مِنَ السَّماءِ وَالأَرضِ

যদি জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনতো ও তাকওয়া অবলম্বন করতো, তাহলে আমি তাদের উপর আকাশ ও যমিনের বরকতের দুয়ারসমূহ খুলে দিতাম। (সুরা আরাফ, ৯৬)।

কুরআন ধারণ করা

পুরা কুরআনটাই বরকতময়। আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَهَٰذَا كِتَٰبٌ أَنزَلۡنَٰهُ مُبَارَكٞ فَٱتَّبِعُوهُ وَٱتَّقُواْ لَعَلَّكُمۡ تُرۡحَمُونَ

আর এই কিতাব আমি নাজিল করেছি, যা বরকতময়। সুতরাং তোমরা তা অনুসরণ করো। আর আল্লাহকে ভয় করো। আশা করা যায় তোমাদের উপর অনুগ্রহ করা হবে। (সুরা আল আনআম, ১৫৫)

এভাবে চারটি আয়াতে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনকে বরকতময় বলেছেন।

কুরআন যে তিলাওয়াত করবে, যে তিলাওয়াত শুনবে, যে কুরআন শিক্ষা লাভ করবে, যে কুরআন শিক্ষা দিবে, যে কুরআন অধ্যয়ন তথা বুঝে বুঝে পড়বে,গবেষণা করবে, যে কুরআন প্রচার করবে, যে কুরআন প্রচারের কাজে সহযোগিতা করবে, যে নিজেদের ব্যক্তিগত জীবনে, পারিবারিক জীবনে, সমাজে রাষ্ট্রে কুরআন বাস্তবায়েনর চেষ্টা করবে মোটকথা কুরআনের সাথে যারা যেভাবে সম্পৃক্ত সবার জীবনে আল্লাহ তাআলা অনেক অনেক বরকত দান করবেন।

বিশেষত সুরা বাকারার সাথে বরকতের বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

اقْرَؤُوا البَقَرةَ؛ فإنَّ أخذَها بَرَكةٌ، وتَرْكَها حَسرَةٌ

তোমরা সুরা বাকারাহ তিলাওয়াত করো। কেননা সুরা বাকারাহ ধারন করার মধ্যে রয়েছে বারাকাহ। আর তা পরিত্যাগ করার রয়েছে ক্ষতি। (সহিহ মুসলিম)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

لا تَجعَلوا بُيوتَكم مَقابرَ؛ فإنَّ الشَّيطانَ يَفِرُّ مِن البَيتِ الَّذي تُقرَأُ فيه البَقَرةُ

তোমরা তোমাদের ঘরসমূহকে কবরে পরিণত করো না। কেননা, যে ঘরে সুরা বাকারাহ তিলাওয়াত করা হয় সেই ঘর থেকে শয়তান পালিয়ে যায়। (সহিহ মুসলিম)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

مَن قَرَأَ بالآيَتَيْنِ مِن آخِرِ سُورَةِ البَقَرَةِ في لَيْلَةٍ كَفَتاهُ

যে ব্যক্তি রাতের বেলা সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত তিলাওয়াত করবে, তার সকল প্রয়োজন পূরণের জন্য এই দুই আয়াতকে যথেষ্ট করে দেয়া হবে। (সহিহ বুখারী)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

مَن قَرَأ آيةَ الكُرْسيِّ دُبُرَ كلِّ صَلاةٍ، لم يَمنَعْه مِن دُخولِ الجنَّةِ إلّا الموتُ

পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ সালাত শেষে যে ব্যক্তি আয়াতুল কুরসি পড়বে, ঐ ব্যাক্তি আর জান্নাতের মধ্যখানে মৃত্যু ছাড়া কোনো বাঁধা থাকবেনা। (ইমাম নাসায়ী লিখিত আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলাহ, ১০০)

দান সাদাকাহ করা। 

আল্লাহ তাআলা বলেন,

يَمْحَقُ اللَّهُ الرِّبَا وَيُرْبِي الصَّدَقَاتِ

আল্লাহ সুদকে ধ্বংস করবেন আর দানকে বাড়িয়ে দিবেন। (সুরা বাকারাহ)

مَّن ذَا ٱلَّذِي يُقۡرِضُ ٱللَّهَ قَرۡضًا حَسَنٗا فَيُضَٰعِفَهُۥ لَهُۥٓ أَضۡعَافٗا كَثِيرَةٗۚ وَٱللَّهُ يَقۡبِضُ وَيَبۡصُۜطُ وَإِلَيۡهِ تُرۡجَعُون

আর কে এমন আছে ,যে আল্লাহ তাআলাকে করজে হাসানা , উত্তম ঋণ দিবে, আল্লাহ তাআলা তার ঋণের পরিমানটি তার জন্য বহুগুণে বাড়িয়ে দিবেন। আর আল্লাহ তাআলা কাউকে রিজিক বাড়িয়ে দেন কাউকে সংকোচিত করে দেন। আর সবাইকে তো তাঁর দিকেই ফিরে যেতে হবে। (সুরা বাকারাহ, ২৪৫)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

ما نقصَت صدقةٌ من مالٍ

দান করলে সম্পদ কমে না। (সহিহ মুসলিম)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

ما مِن يَومٍ يُصْبِحُ العِبادُ فِيهِ، إلّا مَلَكانِ يَنْزِلانِ، فيَقولُ أحَدُهُما: اللَّهُمَّ أعْطِ مُنْفِقًا خَلَفًا، ويقولُ الآخَرُ: اللَّهُمَّ أعْطِ مُمْسِكًا تَلَفًا

প্রতিদিন আকাশ থেকে দুইজন ফেরেশতা নেমে আসেন। একজন এসে বলেন আল্লাহ! আজকের দিনে যে দান করবে, তুমি তার সম্পদ বাড়িয়ে দাও। আরেকজন বলেন, আল্লাহ যে সামর্থ থাকা সত্বেও কিছুই দান করবে না, তুমি তার সম্পদ ধ্বংস করে দাও। (সহিহ বুখারী)

কৃতজ্ঞতা শুকরিয়া আদায় করা। 

মহান আল্লাহ বলেন,

لَئِن شَكَرۡتُمۡ لَأَزِيدَنَّكُمۡۖ وَلَئِن كَفَرۡتُمۡ إِنَّ عَذَابِي لَشَدِيدٞ

যদি তোমরা আমার শুকরিয়া আদায় করো, তাহলে অবশ্যই আমি তোমাদের বাড়িয়ে দেবো। আর যদি শুকরিয়া আদায় না করো, জেনে রাখো আমার আজাব বড় কঠোর। (সুরা ইবরাহীম, ৭)

যেকোনো নিয়ামত পাওয়ার পর আমরা অনেক সময় নিজের ক্রেডিট মনে করি। যা নিতান্তই ভুল।

এখানে আল্লাহ বলেছেন, আমি বাড়িয়ে দেবো। কতটুকু বাড়াবো তার কোনো পরিমান তিনি উল্লখ করেন নি। এটার তার শান মুওয়াফিক। তবে বাড়াবেন এটা নিশ্চত। কারণ লামতাকিদ, নুন তাকিদ ডাবল তাকিদ দিয়ে আল্লাহ বলেছেন বাড়াবেন।

রক্ত সম্পর্কীয় আত্নীয়তার বন্ধন রক্ষা করা। 

আনাস বিন মালিক রা. বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

من أحب أن يُبسطَ له في رزقه، ويُنسأَ له في أَثَره فليصِلْ رحِمَه

যে চায় তার রিজিক প্রশস্ত করে দেয়া হোক, আর তার হায়াতে বরকত দেয়া হোক, সে যেন তার রক্ত সম্পর্কীয় আত্নিয়দের সাথে সু সম্পর্ক বজায় রাখে। (সহিহ বুখারী, ৪২৯)

 

প্রতিটি কাজ বিসমিল্লাহ বলে করা। বিশেষত খাবার।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

فاجتمعوا على طعامكم، واذكروا اسمَ الله عليه، يُبارَكْ لكم فيه

তোমরা একত্রে খাবার খাও। আর শুরুতে আল্লাহর নাম নাও। তাহলে তোমাদেরকে বরকত দেয়া হবে।

(সহিহুল জামে, ৪৫০১)

আল্লাহর নাম বরকতময়। তিনি বলেন,

تَبَٰرَكَ ٱسۡمُ رَبِّكَ ذِي ٱلۡجَلَٰلِ وَٱلۡإِكۡرَامِ

বরকতময় তোমার রবের নাম। যিনি সম্মান মহত্বের অধিকারী। (সুরা আর রহমান, ৭৮)

রবের প্রতিটি নাম বরকতময় । সুতরাং আল্লাহর নামে যে কাজ শুরু করা হবে, সেই কাজে বরকত হবেই হবে।

ঘরে প্রবেশের সময় সালাম দিয়ে প্রবেশ করা

নাস বিন মালিক রা. কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপদেশ দিতে গিয়ে বলেছিলেন,

يا بُنَيَّ إذا دَخَلْتَ على أهلِكَ فَسَلِّمْ يَكُنْ بَركةً عليكَ وعلى أهلِ بَيتِكَ

হে আনাস, যখন তুমি ঘরে প্রবেশকরো,তখন সালাম দাও। এটি তোমার জন্য ও তোমার পরিবারের জন্য বরকতের কারণ হবে। (তিরমিযী)

তাছাড়া বেশী বেশী সালাম আদান প্রদান অনেক কল্যাণ নিয়ে আসে।

ক্রয় বিক্রয় এর সময় সত্য বলা

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

البيِّعان بالخيار ما لم يتفرَّقا؛ فإن صدقا وبيَّنا، بورك لهما في بيعهما، وإن كتما وكذبا، مُحقت بركةُ بيعهما

ক্রেতা বিক্রেতা যতক্ষন পরষ্পর বিচ্ছিন্ন না হয়, ততক্ষণ তাদের ইখতিয়ার থাকবে। (ক্রয় বিক্রয় সম্পন্ন করা কিংবা বাতিল করা।) লেনদেনের সময় ক্রেতা ও বিক্রেতা যদি সত্য বলে, তাহলে তাদের উভয়ের মাঝে বরকত দেয়া হয়। আর যদি মিথ্যাবলে ও দোষ গোপন করে, তাহলে এই লেনদেন থেকে বরকত উঠিয়ে নেয়া হয়। (সহিহ বুখারী)

ইসতেগফার 

আমরা ইতিপূর্বে আলোচনা করেছি, আমাদের গুনাহের কারণে রিজকের বরকত চলে যায়। কিন্তু আমরা তো মানুষ। গোনাহ হয়েই যায়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

كلُّ بني آدمَ خطّاءٌ، وخيرُ الخطائين التوابونَ

প্রতিটি আদম সন্তান গোনাহকারী। আর সবচয়ে উত্তম গোনাহকারী হলো যে গোনাহ হয়ে গেলে সাথে সাথে তাওবা করে ফেলে। (সহিহুল জামে)

অতএব সার্বক্ষনিক আমরা যখন তাওবা ও ইসতিগফারে লেগে থাকবো, তখন আমাদের গোনাহের কারণে আটকে থাকা রিজিকের জট খুলে দেয়া হবে।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَأَنِ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوبُوا إِلَيْهِ يُمَتِّعْكُمْ مَتَاعًا حَسَنًا إِلَى أَجَلٍ مُسَمًّى وَيُؤْتِ كُلَّ ذِي فَضْلٍ فَضْلَهُ

আর তোমরা যেন তোমাদের রবের নিকট তাওবা ও ইসতিগফার করো, তাহলে তিনি একটা সু নিদৃষ্ট সময় পর্যন্ত তোমাদের উত্তম জীবন সামগ্রী দান করবেন। আর প্রতিটি মর্যাদাবান ব্যক্তিকে তার মর্যাদা অনুযায়ী পাওনা আদায় করে দেবেন। (সুরা হুদ, ৩)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

إنِّي لَأستغفِرُ اللهَ وأتوبُ إليه في اليومِ أكثَرَ مِن سبعينَ مرَّةً

আমি প্রতিদিন সত্তুর বারেরও অধিক বলি আসতাগফিরুল্লাহা ওয়া আতুবু ইলাইহি। (সহিহ বুখারী)

কোনো বর্ণনায় আছে ১০০ বার। 

যে নবীর জীবনে কোনো পাপ নাই, তিনি যদি প্রতিদিন ১০০ ইসতিগফার করতে পারেন, তাহলে আমরা ২৪ ঘন্টা গোনাহের সাগরে ডুবন্ত আমাদের কতবার ইসতিগফার করা উচিৎ?

ইসতেখারা করা

যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার আগে ইসতিখারা করা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ইসতিখারা করার পর যে কাজ করবে, সে কখনো অনুতপ্ত হবে না। ইসতিখারা মানে আল্লাহর কাছে কল্যাণ চাওয়া করা। এটি নিজে করবেন। অন্য কাউকে দিয়ে করানোর দরকার নেই। বারবার করা যায়। খুবই সহজ।

অধিনস্থদের সালাতের নির্দেশ দেয়া

আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَأْمُرْ أَهْلَكَ بِٱلصَّلَوٰةِ وَٱصْطَبِرْ عَلَيْهَا ۖ لَا نَسْـَٔلُكَ رِزْقًا ۖ نَّحْنُ نَرْزُقُكَ ۗ

তুমি তোমার পরিবারকে সালাতের আদেশ দাও আর এর উপর নিজে অটল থাকো,আমার কাছে রিজিক চাওয়া লাগবে না। আমিই তোমাদের রিজিক দেবো। (সুরা মারইয়াম, ৫৫)

সকালের সময়ে বরকত রয়েছে। 

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুআ করেছেন,

بارِكْ لأُمَّتي في بُكورها

আল্লাহ আমার উম্মতের সকালের সময়ে বরকত দাও। (সুনান আবু দাউদ)

এটি খুবই পরীক্ষিত একটি সময়। আমি আমার জীবনে বহুবার এটার প্রমাণ পেয়েছি।

এখন যারা ফজর না পড়ে ঘুমান, তারা কীভাবে এই বরকত পাবেন? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম

من صلّى الصُّبحَ فَهوَ في ذمَّةِ اللَّهِ

যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ সময়মত আদায় করলো, সে সারাদিন আল্লাহ তাআলার জিম্মাদারিতে অবস্থান করবে। (সহিহ মুসলিম)

আবদুল্লাহ আল মনসুর
লেখক, কিতাবুল আদাব

শেয়ার করুন:

সাম্প্রতিক ব্লগ

ট্যাগ

অশ্লীলতা6 আকিদাহ বিষয়ক প্রশ্নোত্তর2 আখলাক1 আনুগত্য1 আমল31 আমল কবুলের শর্ত1 আসমা ওয়াস সিফাত11 ইবনে তাইমিয়াহ রহি.17 ইবনে তায়্যিমিয়া রহি.1 ইমাম আহমাদ ইবনে হামবাল রহি.3 ইশকে রাসুল স.3 ঈমান17 ঈমাম শাফিঈ রহি.1 উলামাকথন18 উসুলুস সুন্নাহ1 কবর1 কিয়ামত1 কুফর1 ক্বুরআন10 গাইরত2 জান্নাত2 জাহান্নাম2 জুমু'আ5 তাওহীদ14 তাফসীর4 দরসগাহ ম্যাগাজিন ২6 দাম্পত্য1 নারীবাদ1 পুঁজিবাদ1 প্রবন্ধ4 বদর1 বারাকাহ1 বাংলায় মুসলিম শাসনের ইতিহাস0 বিচার ফয়সালা5 বিজ্ঞানবাদ1 বিবিধ প্রশ্নোত্তর1 বিশুদ্ধ তাওবাহ3 বিশ্বকাপ1 মাজমুঊল ফাতওয়া2 মানহাজ1 ম্যাগাজিন1 যাকাত1 রমাদান1 রামাদান হাদিস2 রোযা2 শয়তানের চক্রান্ত1 শাইখ আহমাদ মুসা জীবরিল হাফি.1 শাইখ উসাইমিন রহি.1 শায়েস্তা খান0 শাস্তি1 শিরক1 সমকামীতা1 সাওম3 সাম্প্রদায়িকতা1 সালাত1 সাহাবী1 সিয়াম2 সিরাত1 সূরা আন নাবা1 সূরা আল আনককবুত1 সূরা আল হাজ্জ1 সূরা মাউন1 সূরা হূদ1 হত্যা1 হদ1 হাদিসে কুদসী3 হামজা জর্জিস1 হাশর1

সাবস্ক্রাইব করুন