মিশরীয় ভঙ্গিতে কিভাবে একজন ভালো স্ত্রী হওয়া যায়?
উস্তাযা উম্মে খালিদ
অনুবাদঃ তানভীর হায়দার
নিচের উদ্ধৃতাংশে উল্লেখিত পোস্টটি এক বছর বা তারও বেশি আগে আরবি ভাষায় সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছিল। আমি এটি নিজে লিখিনি, তবে মূল আরবি থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেছি মাত্র। একজন মিশরীয় মহিলা তাঁর সহকর্মী মহিলাদের উদ্দেশ্য করে পোস্টটি লিখেছিলেন। কিভাবে একজন ভাল স্ত্রী হওয়া যায় সে ব্যাপারে তিনি তাদেরকে পরামর্শ দেন। সেই পোস্টে তিনি
লেখেন,
❝ আপনার স্বামীর চেয়ে আধা ঘণ্টা আগে ঘুম থেকে উঠুন। আপনার মুখ ধুয়ে নিন, দাঁত ব্রাশ করুন এবং হালকা সাজগোজ করুন। নিজেকে গরিলার মত করে রাখবেন না। একটু কুরআন তিলাওয়াত করুন। চায়ের সাথে সকালের নাস্তা প্রস্তুত করুন: হতে পারে কিছু কেক, বা কুকিজ, বা পনির, বা ডিম, বা জুস—যা হাতে আছে তা দিয়েই করুন। মোটকথা স্বামীকে যেন ঘর থেকে নাস্তা না খেয়ে বের হতে হয়।
বাথরুম প্রস্তুত করুন। যেমন: তাঁর জামাকাপড় ও তোয়ালেতে আতর লাগান এবং আপনার হাতে সময় থাকলে বাথটবটি পানি দিয়ে পূর্ণ করুন। তারপর তাকে জাগিয়ে দিন, কিন্তু সতর্ক থাকবেন যাতে কোনো ধরনের উচ্চ শব্দ না হয়। তাঁর কপালে চুম্বন করুন এবং তাকে বলুন, ‘হাবিবি, বাতুতি, আমার হৃদয়, আমার ঘুমন্ত মধু’ (এলোমেলো মিশরীয় অপভাষা) এবং আলতো করে গায়ের উপরে লেপ্টে থাকা কাঁথাটি নিচে টানুন। যখন সে বাথরুমে যাবে তখন তাঁর কাপড়-চোপড় প্রস্তুত করে রাখুন।
তাঁর ফ্রেশ হওয়া শেষ হলে তাকে পোশাক পরতে সাহায্য করুন। পায়ে মোজা পরিয়ে সাহায্য করা ‘আয়ব’ (সামাজিকভাবে অগ্রহণযোগ্য/খারাপ) নয়। যদি আপনি তাকে তাঁর চুল আঁচড়াতে দেখে আঁচড়িয়ে দেন বা তাকে দেখান যে আপনি তার প্রতি মোহাচ্ছন্ন হয়ে আছেন বা আপনি যদি তাকে একটি সুন্দর কথা বলেন, তাহলে এই বিষয়গুলি আপনার সম্মান কমাবে না। আল্লাহর কসম! আপনি কিছুই হারাবেন না।
সালাত আদায়ের জন্য মেঝেতে জায়নামাজ বিছিয়ে দিন। আল্লাহর কসম! আপনি পুরস্কৃত হবেন। তিনি যখন প্রার্থনা করতে থাকবেন তখন সকালের নাস্তা টেবিলে রাখুন। তাঁর জুতা পরিষ্কার ও চকচকে কি না তা নিশ্চিত করুন। তারপর তাঁর সাথে সকালের নাস্তা খেয়ে তাকে দরজার দিকে নিয়ে যান। তাকে চুম্বন করুন এবং বুকে হাত দিয়ে চেপে ধরে তাঁর জন্য দোয়া করুন। তাকে বলুন, ‘আমি তোমাকে খুব মিস করব! আমার থেকে বেশিক্ষণ দূরে থেক না!’
আল্লাহর কসম! সে মানসিকভাবে সুখী ও সন্তুষ্ট হবে। সে স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করতে পারবে। তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করে বাড়িতে আসার জন্য তাঁর মনে অস্থিরতা কাজ করবে। কারণ, আপনার মায়ামোহ ও স্নিগ্ধতা তাঁর প্রয়োজন। তিনি চলে যাওয়ার পরে আপনি আবার ঘুমাতে যেতে পারেন কিংবা বিশ্রাম নিতে পারেন। তিনি বাড়িতে আসার আগে পর্যাপ্ত সময় নিয়ে বিশ্রাম করুন। ঘরটা একটু গুছিয়ে তাঁর জন্য খাবার রেডি করে রাখুন। সুন্দর পোশাক পরুন এবং নিজের চুল আঁচড়ান। শরীরে সুগন্ধি লাগান ও সাজগোজ করুন।
ঘরের কাজের চাপে ক্লান্ত হয়ে গেলেও তাকে হাসিমুখে বাড়িতে স্বাগত জানান। তাঁর বিশ্রামের মুহূর্ত না হওয়া পর্যন্ত তাকে আলিঙ্গন করে ধরে রাখুন। খাবারের টেবিল প্রস্তুত করুন এবং নিশ্চিত করুন যে উপস্থাপনা ভাল হয়েছে। ক্ষুধা বাড়িয়ে দেয় এমন খাবারের পাশে কিছু তাজা জুস রাখুন। কিছু কমলা, মানডারিন, আপেল, লেবু, স্ট্রবেরি, ক্যান্টালুপ, কিউই—যে কোনো ফল যা আপনি পেয়েছেন।
যদি তাকে চিন্তিত বা অসুস্থ মনে হয় তাহলে তাকে জিজ্ঞাসা করবেন না যে, ‘তোমার কি হয়েছে?’ প্রশ্ন না ছুঁড়ে আপনার অনুসন্ধিৎসু চোখের ইশারায় তাঁর দিকে তাকান। তাকে অনুভব করতে দিন যে আপনি তাঁর অসুস্থতা নিয়ে চিন্তিত। যখন তিনি আপনাকে উক্ত বিষয়টি সম্পর্কে বলবেন, তখন তাকে উত্তপ্ত বা বিরক্ত না করে তাঁর কথা শুনুন। তাঁর প্রতি মনোযোগী হন। সর্বদা মনে রাখবেন আপনার সৌন্দর্য শুধুমাত্র আপনার চোখের উপরে লেপ্টে থাকা আইলাইনার কতটা ভাল হয়েছে তা নয়। বরং আপনার সৌন্দর্য আপনার নির্মলতা, আপনার সদয়তা, আপনার পরিচ্ছন্নতা, আপনার ঘ্রাণ ইত্যাদি সব কিছু।
ঘরের সর্বোত্তম ব্যবহার করুন (আসবাবপত্র, সাজসজ্জা, ইত্যাদি গুছানোর ক্ষেত্রে) এবং অযথা খরচ ছাড়াই এটিকে আকর্ষণীয়ভাবে সাজান। আপনার স্পর্শ, আঙ্গুলের ছাপ, এমনকি আপনার মুখ থেকে বের হওয়া একটি শব্দকেও আকর্ষণীয় উপায়ে তাঁর কাছে উপস্থাপন করুন, যাতে সে এসব মনে রাখে। উদাহরণস্বরূপ, তাঁর সাথে মিষ্টি উপায়ে প্রেম করুন।
এবার অন্য দিকে মনোনিবেশ করি, কারণ এটিই আসল জিনিস! যখন সে আপনাকে রাগ দেখায়, বিরক্ত করে তখন তাকে কথায় কথায় উত্তর দেবেন না। পরিবর্তে তাঁর দিকে অভিমানের দৃষ্টিতে তাকাবেন। যদি সে আপনাকে বিরক্ত করে এবং পরে ভুল বুঝে ক্ষমা চাইতে আসে তবে তাকে ঘুরাবেন না। তাকে বলবেন, ‘ক্ষমা চাইবেন না প্লিজ! আপনি আমার কাঁধে হাত দিতে আসার সাথে সাথে আমার হৃদয় গলে যায়। আমি তো আপনার উপরে বেশিক্ষণ ক্ষিপ্ত থাকতে পারি না।’
আপনি যখন ঘুমাতে যাবেন তখন তাঁর মাথা আপনার বুকে নিয়ে মৃদুস্বরে কুরআন তেলাওয়াত করুন। কিন্তু দোয়া করার সময় তাকে শুনিয়ে দোয়া করুন। যাতে শুনে সে খুশি হয়। ঘরের ভিতরে হাতে একটি ব্রেসলেট পরুন, আপনার শরীরকে নানা ঢঙে সাজান। খোঁপায় ফুল গুঁজে দেন। সুন্দর অলংকার পরুন।
পরিশেষে, আপনার স্বামীর জন্য আপনার নারীত্ব বরকতময় হোক। সবসময় সালাত আদায়ের
পাশাপাশি কুরআন তেলাওয়াত করুন। আল্লাহ আপনার দাম্পত্য জীবনে বারাকাহ দান করুন এবং আপনার স্বামীকে সর্বদা আপনার জন্য নিয়ামত হিসেবে রাখুন। আমিন।❞