শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. ও আহলুস সুন্নাহের আলেমদের অবস্থান

আব্দুল্লাহ বিন বশির হাফি.

ইসলামের সৌন্দর্যটা কী জানেন? 

ইবনে তাইমিয়া রহ. বিভিন্ন বাতিল ফিরকার খণ্ডন করতে গিয়ে কখনো আহলুস সুন্নাহের স্বীকৃত কিছু বিষয়কেও খুব শক্ত ভাষায় খণ্ডন করে ফেলেন। বিশেষত আকিদার কিছু মাসআলায়। যার জের ধরে ইবনে তাইমিয়ার একদল শাগরেদ ও ভক্তকূল হামলে পড়ে আকিদার মাসআলায় ‘আশয়ারী ও মাতুরিদি’ আলেমদের উপর। বাস, বিপরীত পক্ষের কিছু লোকেরাও চুপ থাকবে কেন, তারাও শুরু করে দেয়। একদিকে ইবনে তাইমিয়াকে শাইখুল ইসলাম, অপরদিকে ইবনে তাইমিয়াকে যিন্দিক ঘোষণা—চলতে থাকে সমানে সমানে। উত্তপ্ত পরিবেশে কে কার কথা শুনে!  

ইবনে তাইমিয়া রহ.-র কিছু বিচ্ছিন্ন বক্তব্য দিয়ে অতি উৎসাহিত সে ভক্তদল বিভিন্ন বিপরীত মতের বিভিন্ন আলেমদের গোমরাহ, বেদায়াতি ও ক্ষেত্র বিশেষ কাফের পর্যন্ত বলা হচ্ছিলো! ভক্ত নামক এই মূর্খদের সবচেয়ে বেশি ঘৃণিত আচরণের শিকার হয়েছেন আশয়ারী আলেমগণ। ফলে বিরক্ত হয়েছিলেন অনেকে ইবনে তাইমিয়ার উপর। বাধ্য হয়ে ইলমী খণ্ডন করেছেন ইবনে তাইমিয়ার নাম নিয়েই কেউ, কেউবা শুধু মতানৈক্যর জায়গাটুকু স্পষ্ট করেছেন। 

একেরপর এক যখন ইবনে তাইমিয়ার খণ্ডন আসা শুরু হলো, একদল স্বার্থবাজ আর ভণ্ডসুফী—যাদেরকে তুলোধোনা করে উম্মাহকে সবচেয়ে বেশি সতর্ক করেছেন ইবনে তাইমিয়া রহ., তারা মাঠ গরম করতে লাগলো। ফতোয়া দিতে থাকলো ইবনে তাইমিয়ার বিরুদ্ধে—যে ইবনে তাইমিয়াকে ‘শাইখুল ইসলাম’ বলবে সে কাফের এবং তার পিছনে নামাজ হবেনা। এহেন মুহূর্তে এই মুর্খ আর দলান্ধদের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম কলম ধরেছেন কারা জানেন? ঐসব আশয়ারী আলেমগণ যাদেরকে ইবনে তাইমিয়ার হাওয়ালায় গোমরাহ থেকে নিয়ে কাফের ফতোয়া দেওয়া হচ্ছিলো!

ইবনে নাসিরুদ্দিন দিমাশকী একজন শাফেয়ী আলেম এবং আশয়ারী আকিদার মানুষ। ইবনে তাইমিয়াকে নিয়ে এরকম জঘন্য আচরণ সহ্য করতে না পেরে একটি বই রচনা করেন, 

“الرد الوافر على من زعم بأن سمى ابن تيمية شيخ الإسلام الكافر”

অর্থাৎ, ইবনে তাইমিয়াকে শাইখুল ইসলাম বললে যারা কাফের ফতোয়া দেয় তাদের বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিবাদ। 

আর এই বইটিকে দুনিয়া ব্যাপি প্রসিদ্ধ করেছেন আরেক আশয়ারী আলেম ইবনে হাজার আসকালী রহ. শুরুতে একটি ‘তাকরিজ’ বা প্রশংসাবানী লিখে দিয়ে। সাথে ইমাম বুলকিনীসহ সে সময়কার অন্যান্য আশয়ারী আলেমগণ ‘তাকরিজ’ লেখে দিয়েছেন সে বইতে। এটাই আহলুস সুন্নাহ, এটাই ইলমী ইখতেলাফ এবং এটাই ইনসাফ। 

এই ধারা ইবনে তাইমিয়া রহ.-র সাথেই প্রথম এমন নয়, যখন আহলুস সুন্নাহের কোনো স্বীকৃত আলেমকে নিয়ে কোনো সুবিধাবাদী মহল অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে তখনই ভিন্নমতাদর্শী আলেমগণও শত ইখতেলাফ ভুলে সুবিধাবাদীদের মুখ বন্ধ করেছেন। ইমাম আবু হানিফা রহ.ও ছিলেন তাদের একজন। ‘মুরজিয়া’ আর ‘আহলুর রায়’ বলে যখন এই মহান ইমামের ইজ্জতের উপর একদল আক্রমণ করছিলো, হাদিস জানেনা বলে হেয় করছিলো তখন মালেকী ও শাফেয়ী মাজহাবের ইমামগণ আবু হানিফার মানাকিব ও ইলমি মর্যাদা নিয়ে কিতাব লেখা শুরু করলেন এবং অপপ্রচারকারীদের মুখে ছাই ছিটিয়ে এই সত্য প্রমাণ করে দেন যে, মহান এই ইমাম শুধু ফকিহই নন, বিদগ্ধ মুহাদ্দিস ও নিজ জামানার শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিদের একজন। ইবনে আব্দুল বার, ইমামা যাহাবী থেকে ইবনে হাজার হাইতামী ও সুয়ূতী রহ.-এর মত ভিন্ন মাজহাবের জগৎবিখ্যাত আলেমগণ লেখে গেছেন এই মহান ইমামের শানে সঠিক ও সত্য কথাগুলো। 

‘আর-রদ্দুল ওয়াফের লেখার প্রেক্ষাপট :  

ইবনে নাসিরুদ্দিন দিমাশকী রহ. ৭৭৭ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেন। অর্থাৎ ইবনে তাইমিয়া রহ.-এর মৃত্যুর প্রায় পঞ্চাশ বছর পর। তখন জামানাটা এমন ছিলো যে, ইবনে তাইমিয়া রহ.কে নিয়ে একদল যেমন করছিলো বাড়াবাড়ি, তেমনি আরেকদল বাড়াবাড়ি করে এমন পরিবেশ তৈরি করছিলো যে, যারা ইবনে তাইমিয়া রহ.কে ‘শাইখুল ইসলাম’ বলবে, তারা তাকফিরের শিকার হচ্ছিলো কিছু মূর্খ, বেদয়াতী থেকে। আর কিছু ঝোকের তালে পড়া অবুঝ আলেমদের থেকে। ইবনে নাসির আদ-দিমাশকী রহ. বড় আফসোস করে সে সময়ের চিত্রায়ণ করে বলেন, 

ولا فكرة لَهُ فِيما تطرق بِهِ إلى تَكْفِير خلق من الاعلام بِأن قالَ من سمى ابْن تَيْمِية شيخ الاسلام كانَ كافِرًا لا تصح الصَّلاة وراءه. 

অর্থাৎ, একদল বিজ্ঞ আলেমদের তাকফির পর্যন্ত করা হচ্ছিলো ইবনে তাইমিয়া রহ.কে ‘শাইখুল ইসলাম’ বলার অপরাধে। এবং ফতোয়া দেওয়া হচ্ছিলো, যারা ইবনে তাইমিয়াকে শাইখুল ইসলাম বলে তাদের পিছনে নামাজ হবেনা৷ (১)

ইবনে নাসিরুদ্দিন দিমাশকী রহ. বইটিতে ইবনে তাইমিয়া রহ.-এর সমকালীন ও তার পরবর্তী জামানার শ্রেষ্ঠ আলেম আর ফকিহদের উদ্ধৃতি উল্লেখ করেছেন, যারা ইবনে তাইমিয়ার শুধু প্রশংসাই করেনি, তাকে ‘শাইখুল ইসলাম’ উপাধি দিয়েছন বা উচ্চ প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন। 

শাইখুল ইসলাম’ উপাধী কাদের হয় :

নীচে উল্লেখিত ইমামদের বক্তব্য বুঝার জন্য ‘শাইখুল ইসলাম’ এই উপাধীর ভার কত বেশি তা বুঝে নেওয়াটা জরুরি। এবং এই উপাধি দ্বারা কী উদ্দেশ্য আর এই উপাধি কাদের শানে ব্যবহার হতো তা সংক্ষিপ্তভাবে জেনে নেওয়া যাক। 

ইবনে নাসির আদ-দিমাশকী রহ. বিস্তারিতভাবে ‘শাইখুল ইসলাম’ এই শব্দের পরিচয় দিয়েছেন৷ তিনি লেখেন, 

شيخ الاسلام أن مَعْناهُ المَعْرُوف عِنْد الجهابذة النقاد المَعْلُوم عِنْد أئِمَّة الاسناد أن مَشايِخ الاسلام والأئِمَّة الاعلام هم المتبعون لكتاب الله  المقتفون لسنة النَّبِي ﷺ الَّذين تقدمُوا بِمَعْرِفَة أحْكام القُرْآن ووجوه قراآته وأسْباب نُزُوله وناسخه ومنسوخه والأخْذ بِالآياتِ المحكمات والايمان بالمتشابهات قد أحكموا من لُغَة العَرَب ما أعانهم على علم ما تقدم وعَلمُوا السّنة نقلا وإسنادا وعَملا بِما يجب العَمَل بِهِ اعْتِمادًا وإيمانا بِما يلْزم من ذَلِك اعتقادا واستنباطا لِلْأُصُولِ والفُرُوع من الكتاب والسّنة قائِمين بِما فرض الله عَلَيْهِم مُتَمَسِّكِينَ بِما ساقه الله من ذَلِك إلَيْهِم متواضعين لله العَظِيم الشان خائِفين من عَثْرَة اللِّسان لا يدعونَ العِصْمَة ولا يفرحون بالتبجيل عالمين أن الَّذِي أُوتُوا من العلم قَلِيل فَمن كانَ بِهَذِهِ المنزلَة حكم بِأنَّهُ إمام واسْتحق أن يُقال لَهُ شيخ الاسلام. 

ইলমুল ইসনাদ ও ইলমুন নকদদের প্রাজ্ঞ আলেমদের মতে ‘শাইখুল ইসলাম’ বলা হয়, ওই সকল ব্যক্তিদের, যাঁরা কিতাবুল্লাহর পূর্ণ অনুসরণ করেন, এবং সুন্নাতে-নবির প্রতি দৃঢ়পদ থাকেন, এবং তাঁরা কুরআনের বিধি-বিধান সম্বলিত আয়াত, একাধিক কিরাআতের প্রকারভেদ, আয়াতসমূহ নাজিল হওয়ার প্রেক্ষাপট, নাসিখ-মানসুখের ইতিহাস, অকাট্য আয়াতসমূহের ব্যাখ্যা ও সামঞ্জস্যপূর্ণ আয়াতের প্রতি প্রবল-বিশ্বাস, ইত্যাদি ব্যাপারে অগ্রগণ্য অভিজ্ঞতা রাখেন

ওপরে যা বলেছি, আরবি ভাষাজ্ঞানও এ ব্যাপারে সাক্ষ্য দেয়। কারণ, আরবি-ভাষীগণ জানেন, সুন্নাহ আমাদের নিকট পৌঁছেছে, ‘বর্ণিত ও পরম্পরা’ সূত্রে। তাই তাঁরা কিতাব ও সুন্নাহর যা পালন করা অত্যবশ্যক, তা পালন করেন। যা দৃঢ়তার সাথে বিশ্বাস করার প্রয়োজন তা আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করেন।

এ দৃষ্টিকোণ থেকেই তাঁরা কিতাব-সুন্নাহ থেকে মৌলিক ও শাখাগত যেসব মাসায়েল উদ্ভাবন করা দরকার, তাও করেন। তাই আল্লাহ যা ফরজ হিসেবে দিয়েছেন, তা ফরজ হিসেবে রাখেন, এ বিশ্বাসের সাথে যে, আল্লাহ তাদের যেভাবে পরিচালিত করবেন, সেভাবে তারা চলবে, এবং আল্লাহর মর্যাদপূর্ণ সম্মানের সামনে নিজেদের সবকিছু বিলিয়ে দিবে। সাথে সাথে নিজেদের মুখের অসংযত বক্তব্যের ব্যাপারে ভীত থাকবে। নিজেদের ব্যাপারে নিষ্কলুষতার দাবি করবে না এবং কোথায় সফলতা লাভ করলে উলম্ফও করবে না। তাঁরা নিজেদের ব্যাপারে এ বিশ্বাস রাখে, তাঁদেরকে প্রকৃত-জ্ঞানের খুব স্বল্পই দেওয়া হয়েছে।

অতএব যে ব্যক্তি এ অবস্থানে পৌঁছুবে, তাঁর ব্যাপারেই বলা যায়, সে ইমাম ও নেতা, এবং তাঁকেই এ বলা শোভা পায় যে, সে ‘শাইখুল ইসলাম’। (২)

শায়খ আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ রহ. বলেন, 

وأطلقه العلماء السابقون على كل من حاز درجة كبيرة عالية في العلم بالكتاب والسنة، وفي الفضل والصلاح والقدوة، وكان مرجع المسلمين في العلم وشؤون الدين . وهو بهذا المعنى وارد في كتب المحدثين والمؤرخين والرجال والتراجم ، فاعرفه

পূর্ববর্তী ওলামায়ে কেরাম ‘শাইখুল ইসলাম’ উপাধিকে শুধু এমন কোনো মহান ব্যক্তির জন্যই ব্যবহার করতেন যারা কুরআন-সুন্নাহের জ্ঞানে ও ন্যায়নিষ্ঠা ও অনুসরণীয়তায় অনেক উঁচু স্থরে পৌঁছে যেতেন। সাথে সাথে তারা হতেন নিজ সময়ের আলেমদের দ্বীনি ও ইলমি বিষয়ের সমাধানের কেন্দ্র। মুহাদ্দিসিন, ইতিহাসবিদ ও রিজালের কিতাবসমূহে এই শব্দ যেখানে ব্যবহার হয়েছে এই অর্থেই হয়েছে।(৩)

ইবনে তাইমিয়া রহ. সম্পর্কে আহলুস সুন্নাহের আলেমের বক্তব্য : 

১. ইবনে দাকিকিলুল ঈদ রহ. (মৃত্যু ৭০২ হি.) 

উনাকে বলা হয় ফিকহে শাফেয়ী ও মালেকি উভয় মাজহাবের ইমাম। উনি উভয় মাজহাবে এত বেশি পান্ডিত্য অর্জন করেছেন যে, উভয় মাজহাবের সাধারণ মানুষ ও আলেমরা তার কাছে নিজ নিজ মাজহাবের সমাধানের জন্য আসতেন। 

তাতারিদের ফিতনার মোকাবেলায় ইবনে তাইমিয়া রহ.-এর সুদৃঢ় মনোবল আর সাহসী বক্তব্য শুনে ইবনে দাকিকুল ঈদ রহ. বলেছিলেন, আমার জানা ছিলো না আল্লাহর দুনিয়ায় এত সাহসী কোনো মানুষ এখনো আছে। অথচ তখনো ইবনে তাইমিয়াকে খুব ভালো করে চিনতেন না তিনি। পরবর্তীতে যখন উভয়ের সাক্ষাত হয়, ইবনে দাকিকুল ইদ রহ. বলেছিলেন,

لما اجْتمعت بِابْن تَيْمِية رَأيْت رجلا العُلُوم كلها بَين عَيْنَيْهِ يَأْخُذ مِنها ما يُرِيد ويدع ما يُرِيد.

যখনই আমি ইবনে তাইমিয়ার সাথে মিলিত হই তখন এমন একজন মানুষকে দেখতে পাই, যার চোখের সামনে পুরো কুরআন আর হাদিস রয়েছে। সেখান থেকে যা প্রয়োজন তিনি নেন আর যা প্রয়োজন নেই তা রেখে দেন।(৪)

২. ইবনুল হারীরী আল হানাফী রহ. (মৃত্যু ৭৫৭হি.) 

তাতারীদের ফিতনার সয়লাবে যে কটি মুসলিম ভূখণ্ড নিরাপদে ছিলো এবং তাতারীদের মহাপ্রলয়কে রুখে দিতে কিছুটা হলেও সচেষ্ট ছিলো তার মধ্যে সুবিশেষ উল্লেখ্য হলো মিশর ও শাম। সেখানের কাজিউল কুজাত (প্রধান বিচারপতি) ইবনুল হারীরী আল-হানাফী রহ. বলতেন,

الإمام قاضِي قُضاة مصر والشّام أبُو عبد الله مُحَمَّد ابْن الصفي عُثْمان ابْن الحريري الانصاري الحَنَفِيّ كانَ يَقُول إن لم يكن ابْن تَيْمِية شيخ الاسلام فَمن. 

যদি ইবনে তাইমিয়া শাইখুল ইসলাম না হয় তাহলে এই যোগ্যতার অধিকারী আর কে আছে?।(৫)

৩. ইমাম মিজ্জি রহ. (মৃত্যু ৭৪২হি.) 

ইমাম মিজ্জি রহ.-এর পরিচয় কোনো তালেবে ইলমকে দেওয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে করিনা। প্রসিদ্ধ হাদিসের ছয় কিতাব যাকে কুতুবে সিত্তাহ বলা হয়, তা পড়তে হলে এই মহান মানুষটির সাহায্য ছাড়া প্রায় অসম্ভব এখন আমাদের জন্য। যিনি হাফেজ যাহাবী ও ইবনে কাসির রহ.-র উস্তাদ ও ইবনে তাইমিয়া রহ.-র সমসাময়িক। নিজ সমসাময়িক একজন মানুষের ব্যাপারে মিজ্জি রহ. বলেন, 

ما رَأيْت مثله ولا رأى هُوَ مثل نَفسه، وما رَأيْت أحدا أعلم بِكِتاب الله وسنة رَسُول الله ﷺ ولا أتبع لَهما مِنهُ. 

আমি ইবনে তাইমিয়ার মত কোনো ব্যক্তি আর দেখিনি, এবং আমার বিশ্বাস সেও তার নিজের মত আর কাউকে দেখেনি। বর্তমানে তার থেকেও বড় কুরআন সুন্নাহের আলেম ও অনুসারী আছে বলে আমার জানা নেই।(৬)

৪. ইমাম যাহাবী রহ. (মৃত্যু ৭৪৮হি.)

ইমাম যাহাবী রহ. ছিলেন ইবনে তাইমিয়া রহ.-এর শাগরেদ। নিজ উস্তাদকে কাছ থেকে দেখেছেন। এবং অনেক বেশি ইস্তিফাদা করেছেন। ইমাম যাহাবীকে যারা চিনেন তারা জানেন, ব্যক্তি সম্পর্কে উনার মূল্যায়ন কতটা নির্মহ হয়। তিনি নিজ উস্তাদের কাছে ‘রফউল মালাম’ কিতাবটি পড়া শেষ করে লেখেন, 

 فَقالَ سمع هَذا الكتاب على مُؤَلفه شَيخنا الامام العالم العَلامَة الأوحد شيخ الاسلام مفتي الفرق قدوة الأمة أعجوبة الزَّمان بَحر العُلُوم حبر القُرْآن تَقِيّ الدّين سيد العباد أبي العَبّاس أحْمد بن عبد الحَلِيم بن عبد السَّلام ابْن تَيْمِية الحَرّانِي رَضِي الله

এই কিতাবটি আমি তার লেখক আমাদের উস্তাদ, আল্লামা, শাইখুল ইসলাম, বাহরুল উলুম ইবনে তাইমিয়া থেকে সরাসরি পাঠ গ্রহণ করেছি।(৭)

৫. কাজিউল কুজাত ইমাম বাহাউদ্দিন আস-সুবকী রহ. (মৃত্যু ৭৭৩হি.) 

ইমাম বাহাউদ্দিন আস-সুবকী আশশাফেয়ী রহ.-র সামনে কেউ কেউ ইবনে তাইমিয়া রহ. সম্পর্কে আজে-বাজে কথা বললে, তিনি গোস্বা হয়ে বললেন,

ولَقَد صدق العَلامَة الامام قاضِي قُضاة الاسلام بهاء الدّين أبو البَقاء مُحَمَّد بن عبد البر بن يحيى السُّبْكِيّ الشّافِعِي حَيْثُ يَقُول لبَعض من ذكر لَهُ الكَلام فِي ابْن تَيْمِية، فَقالَ: والله يا فلان! ما يبغض ابْن تَيْمِية إلّا جاهِل، أو صاحب هوى، فالجاهل لا يدْرِي ما يَقُول، وصاحب الهوى يصده هَواهُ عَن الحق بعد مَعْرفَته بِهِ انْتهى

ঐ বেটা! আল্লাহর কসম, ইবনে তাইমিয়া রহ.কে যারা ঘৃণা করে তারা হয়তো মুর্খ-জাহেল নাহলে সে প্রবৃত্তির অনুসারী। মুর্খের মুখ দিয়ে কী বের হয় সে জানেনা আর প্রবৃত্তি তার অনুসারীকে হক জানার পরেও তা গ্রহণ করা থেকে বিরত রাখে।(৮)

৬. হাফেজ ইরাকী রহ. (মৃত্যু ৮০৬হি.) 

হাফেজ ইরাকী রহ. কি ছিলেন তা বুঝার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট, উলুমুল হাদিসের মহান সমুদ্র ইবনে হাজার আর হাইসামী রহ.-এর মত মহান মানুষরা যার সামনে হাটু গেড়ে বসতে পারাকে নিজের জীবনের সৌভাগ্য মনে করতেন। 

ইরাকী রহ. আশুরা সংক্রান্ত একটি হাদিসের পর্যালোচনা কালে ইবনে তাইমিয়া রহ.র বক্তব্য দিয়ে দলিল পেশ করেছেন, যেখানে ইবনে তাইমিয়া রহ.-র উপাধী ব্যবহার করেছেন ‘ইমাম’।(৯)

৭. ইবনে হাজার আসকালানী রহ. (মৃত্যু ৮৫২হি.) 

হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহ. ফিকহে ছিলেন শাফেয়ী মাজহাবের ও আকিদায় আশয়ারী। কিন্তু ইলমি দুনিয়ায় আল্লাহর ফজলে করমে এত উচ্চতায় পৌঁছেছেন যে, পুরো দুনিয়ার মানুষ আজ উনার মুখাপেক্ষী। সহিহ বুখারীর সুবিসদ ও নির্ভরযোগ্য ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘ফতহুল বারী’-এর প্রণেতা। ইবনে হাজার রহ. ইবনে তাইমিয়া সম্পর্কে লেখেন,

فكيف لا ينكر على من أطلق:  أنه كافر؟ بل من أطلق على من سماه شيخ الإسلام : الكفر ، وليس في تسميته بذلك ما يقتضي ذلك، فإنه شيخ في الإسلام بلا ريب ، والمسائل التي أنكرت عليه ما كان يقولها بالتشهي، ولا يصر على القول بها بعد قيام الدليل عليه عنادا، وهذه تصانيفه طافحة بالرد على من يقول بالتجسيم والتبري منه، ومع ذلك فهو بشر يخطئ ويصيب، فالذي أصاب فيه، ومع الأكثر يستفاد منه ويترحم عليه بسببه، والذي أخطأ فيه لا يقلد فيه ، بل هو معذور، لأن أئمة عصره شهدوا له بأن أدوات الاجتهاد اجتمعت فيه. 

অর্থাৎ, যাকে শাইখুল ইসলাম উপাধী দেওয়া হয় তাকে আবার কাফের কিভাবে বলা হয়? এদুটো তো পরস্পর বিরোধী দুটো উপাধী! আর নিঃসন্দেহে ইবনে তাইমিয়া ছিলেন নিজ জামানার ‘শাইখুল ইসলাম’। আর যে মাসআলাগুলোতে তিনি একক মত গ্রহণ করেছেন তা প্রবৃত্তির তাড়না থেকে নয় বরং কোনো না কোনো দলিল উনার কাছে শক্তিশালী মনে হয়েছে বলেই তা গ্রহণ করেছেন। যারা তাকে এই কারণে মুজাসসিমা বা গোমরাহ বলে তাদের মুখে চপটাঘাত দেওয়ার জন্য ইবনে তাইমিয়ার লিখিত বইগুলোই যথেষ্ট।  

এতদা সত্ত্বেও এটাও মনে রাখতে হবে যে, তিনি মানুষ ছিলেন, আর মানুষের থেকে ভুল-সঠিক উভয় হতে পারে। তবে ইবনে তাইমিয়ার ভুল থেকে তার সঠিকটাই বেশি ছিলো। আর যেখানে উনার ভুল হয়েছে আমরা তাকে মাজুর মনে করি। কারণ তিনি ছিলেন তার জামানার একজন ইমাম এবং তার সমকালীন অনেক ওলামায়ে কেরাম এই সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, ইবনে তাইমিয়া রহ.-এর ভিতর ইজতেহাদের যোগ্যতা ছিলো।(১০)

.

হাফেজ মিজ্জি, যাহাবী, ইরাকী ও ইবনে হাজার রহ. এমন চারজন মহান ব্যক্তি ইবনে তাইমিয়া রহ.-এর সম্পর্কে এমন উচ্চবাক্যে প্রশংসা করছেন। যাদেরকে আল্লাহ তায়ালা হাদিস ও উলুমে হাদিসে এত উচ্চস্থান দান করেছেন যে, সুয়ুতি রহ. বলেন, 

إن المحدثين عيال الآن في الرجال وغيرها من فنون الحديث على أربعة: المزي والذهبي والعراقي وابن حجر

বর্তমান জামানার মুহাদ্দিসরা উলুমুল হাদিসের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখায় চারজন মানুষের মুখাপেক্ষী। ইমাম মিজ্জি, যাহাবী, ইরাকী ও ইবনে হাজার।(১১)

এই চারজন মহান ব্যক্তিদের বক্তব্যসহ অন্যান্য আয়িম্মাদের বক্তব্য সামনে রেখে আমরা ইবনে তাইমিয়া রহ.কে শাইখুল ইসলাম বলতে পেরে নিজেকেই সম্মানিত বোধ করি। আর মাসলাকবাজি আর মূর্খতাই যাদের স্বভাব তাদের থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখি। 

৮. মোল্লা আলী কারী রহ. (মৃত্যু ১০১৪ হি.) 

মোল্লা আলী কারী রহ. উম্মাহের সেই বিরল মানুষদের একজন যাদের উলুমে ইসলামিয়ার প্রায় সকল শাখায় দ্বীনের খেদমত করার তাওফিক হয়েছে। মহান এই মানুষটি জীবনের এই অল্প সময়ে উম্মাহের জন্য রেখে গেছেন ইলমের বিশাল সমুদ্র। ইবনে আবেদীন শামী রহ. মোল্লা আলী কারীর একটি কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘এথেকে বুঝা যায় উনি নিজ জামানার মুজাদ্দিদ। আর বিষয়টি এমনই। কোনো নষ্ট ও সংকীর্ণমনা লোক ছাড়া এই বিষয়টি কেউ অস্বীকার করবে না।(১২)

মোল্লা আলী কারী রহ. তার জগৎবিখ্যাত গ্রন্থ ‘মিরকাতুল মাফাতিহ’তে ইবনে তাইমিয়ার ব্যাপারে কিছু আলেমের আপত্তি, যারা ইবনে তাইমিয়াকে আহলুস সুন্নাহের বাহিরে মনে করেন, তাদের খণ্ডনে লেখেন,  

«مرقاة المفاتيح شرح مشكاة المصابيح» (7/ 2778):

«أقول: صانهما الله ‌عن ‌هذه ‌السمة الشنيعة والنسبة الفظيعة، ومن طالع شرح منازل السائرين لنديم الباري الشيخ عبد الله الأنصاري الحنبلي – قدس الله تعالى سره الجلي – وهو شيخ الإسلام عند الصوفية حال الإطلاق بالاتفاق، تبين له أنهما كانا من أهل السنة والجماعة، بل ومن أولياء هذه الأمة، ومما ذكر في الشرح المذكور ما نصه على وفق المسطور هو قوله على بعض صباة المنازل، وهذا الكلام من شيخ الإسلام يبين مرتبته من السنة، ومقداره في العلم، وأنه بريء مما رماه أعداؤه الجهمية من التشبيه والتمثيل على عاداتهم في رمي أهل الحديث والسنة بذلك، كرمي الرافضة لهم بأنهم نواصب، والنواصب بأنهم روافض، والمعتزلة بأنهم نوائب حشوية، وذلك ميراث من أعداء رسول الله – صلى الله عليه وسلم – في رميه ورمي أصحابه، بأنهم صراة قد ابتدعوا دينا محدثا، وهذا ميراث لأهل الحديث والميمنة من نبيهم بتلقيب أهل الباطل لهم بالألقاب المذمومة»

(সারকথা হলো) যে সকল আপত্তি ও খারাপ উপাধি ইবনে তাইমিয়ার ক্ষেত্রে ব্যাবহার করা হয় তা থেকে তিনি পবিত্র। সুফি আলেম আব্দুল্লাহ আনসারী আল হাম্বলি রহ. যিনি নিজ জামানার সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য ও সমাধৃত একজন ব্যাক্তি, তিনি স্পষ্টই করেই উল্লেখ করেছেন যে, ‘ইবনে তাইমিয়া শুধু আহলুস সুন্নাহেরই একজন নন, বরং এই উম্মাহের একজন ওলী’। মহান এই সূফি ইবনে তাইমিয়া রহ.-এর ব্যাপারে যা বলেছেন সঠিকই বলেছেন। জাহমিয়ারা শত্রুতা বশত ইবনে তাইমিয়াকে ‘দেহবাদি’ বলে যে অপবাদরোপ করে তা থেকে তিনি মুক্ত। আহলে হকগণ নবী থেকে মিরাস হিসেবে পেয়েছেন এই বিষয়টি যে, বিভিন্ন বাতেলরা তাদেরকে বিভিন্ন নিন্দিত উপাধী দিবে।(১৩)

উপমাহাদেশের আলেমদের অবস্থান : 

১. মুসনিদুল হিন্দ শাহ ওলিউল্লাহ মুহাদ্দেসে দেহলভি রহ. 

ইবনে তাইমিয়া রহ.কে নিয়ে ‘মুসনাদুল হিন্দ’খ্যাত উপমহাদেশের গর্ব শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভি রহ.-এর মন্তব্য উল্লেখ করা সমীচীন মনে করছি, যিনি ইবনে তাইমিয়া রহ.কে দীর্ঘদিন পড়েছেন। ইবনে তাইমিয়া রহ.-এর ব্যাপারে নিজের মন্তব্য এক শাগরেদের চিঠির জবাবে বলেছেন, 

وعلى هذا الاصل اعتقدنا في شيخ الاسلام ابن تيمية (رحمه الله) فانا قد تحققنا من حاله أنه عالم بكتاب الله ومعانيه اللغوية والشرعية و حافظ لسنة رسول الله صلى الله عليه وسلم وآثار السلف عارف لمذهب لمعانيهما اللغوية والشرعية، استاذ في النحو و اللغة محرر لمذهب الحنابلة فروعه واصوله، فائق في الذكاء ذو لسان وبلاغة في الذب عن عقيدة أهل السنة، لم يؤثر عنه فسق ولا بدعة، اللهم الا هذه الأمور التي ضيق عليه لاجلها وليس شيء منها الا  ومعه دليله الأمور التي ضيق عليه لاجلها وليس شيء منها الا من الكتاب والسنة وأثار السلف،  فمثل هذا الشيخ عزيز الوجود في العلم ومن يطيق ان يلحق شاؤه في تحريره و تقريره، والذين ضيقوا عليه ما بلغوا معشار ما اتاه الله تعالى وان كان تضييقه ذالك ماهي الا كمشاجرة الصحابة رضي الله تعالى عنهم فيما بينهم والواجب في ذالك كشف اللسان الا بخير،

এরই ভিত্তিতে আমরা শায়খুল ইসলাম ইবনে তায়মিয়া রহ.-এর উপর আকিদা রাখি। তার অবস্থাদি দ্বারা আমাদের নিকট প্রমাণিত হয়ে গেছে, তিনি আল্লাহর কিতাব কুরআনুল কারিমের একজন আলিম, এর আভিধানিক ও শরয়ী অর্থ সম্পর্কে খুবই ওয়াকিফহাল, আরবিব্যাকরণ ও অভিধানশাস্ত্র সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ, হাম্বলী মাযহাবের খুঁটিনাটি বিষয় ও উসুলের পরিষ্কার ও বিবাদ মীমাংসাকারী ও বিন্যস্ত কারী, একক মেধার অধিকারী, ভাষার উপর অপূর্ব দখল এবং আহলে সুন্নত ওয়ালজামাতের আকিদার সমর্থন ও প্রতিরক্ষায় অত্যন্ত বাগ্মী ও স্পষ্টভাষী। তার দ্বারা কোনো অন্যায় কিংবা বিদআত প্রমাণিত হয়নি। ব্যস, এই কয়েকটিমাত্র মাসআলার ক্ষেত্রে তার সঙ্গে কঠোরতা করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যেও এমন কোনো মাসআলা নেই, যে মাসআলা সম্পর্কে তার নিকট সুন্নাহ ও পূর্ববর্তী বুযুর্গদের অনুসৃত আদর্শের ভেতর কোনো দলিল ছিল না। জ্ঞানের জগতে এমন মনীষীর তুলনা মেলা ভার। কি লেখনী, কি বক্তৃতায় তার পর্যায়ে উপনীত হন এমন সাধ্য কার? আর যে সমস্ত লোক তার সঙ্গে কঠোরতা ও রূঢ় আচরণ করেছে। তার (ইবনে তায়মিয়া রহ.-এর) কামালিয়াত ও বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্কই ছিল না, যদিও এই কঠোরতা একটি ইজতেহাদী বিষয় ছিল। এতৎসম্পর্কে আলিমগণের ইখতিলাফ বা মতভেদ সাহাবীগণের পারস্পরিক মতবিরোধেরই অনুরূপ। অতএব এক্ষেত্রে সংযতবাক্য হওয়াই আমাদের পক্ষে সমীচীন এবং ভালো খারাপ কোনো কিছু আমাদের মুখ থেকে যেন বের না হয়।(১৪)

২. আবুল হাসান আলী নদবি রহ.

আবুল হাসান আলী নদবি রহ. শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভি রহ.-র  এই মন্তব্য উল্লেখ করে বলেন, “শাহ ওয়ালিউল্লাহ রহ.-এর সাফাই ও সাক্ষ্য এবং উল্লিখিত প্রশংসাসূচক মন্তব্যের পর কোনো আলিম কিংবা লেখকের আক্রমণাত্মক সমালোচনা—ইবনে তায়মিয়া রহ.-এর জ্ঞান ও চিন্তামার্গের কাছেধারে পৌছুবার যোগ্যতাও যাদের নেই–আদৌ কোনো জ্ঞানগত গুরুত্ব বহন করেন না। হাকিমুল ইসলাম শাহ ওয়ালিউল্লাহ রহ.-কে আল্লাহ তায়ালা গভীর পাণ্ডিত্য, বিচিত্র কামালিয়াত, মুজতাহিদী চিন্তা ও দৃষ্টি, মতভেদের ক্ষেত্রে ভারসাম্যের পথ ও উলামায়ে ইসলামের কার কী মর্যাদা সে সম্পর্কে পরিমাপ করার এক আশ্চর্য ক্ষমতা দিয়েছিলেন। তাই এ ব্যাপারে তার মতই চূড়ান্ত হিসাবে বিবেচনার দাবি রাখে।’’(১৫)

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.-এর ভুল ছিলো, আর সেই ভুলগুলো নিয়ে ওলামায়ে কেরাম যুগে যুগে, এমনকি উনার সময় থেকেই আলোচনা-সমালোচনা করেছেন। এবং সে ভুলগুলো পর্যালোচনা সত্ত্বেও যুগে যুগে আহলুস সুন্নাহের ওলামায়ে কেরাম শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়ার কিতাব থেকে উপকৃত হয়েছেন ভুলের অংশটুকু বাদ দিয়ে এবং উনার যথাযথ সম্মান বজায় রেখেই। ইবনে তাইমিয়া রহ.কে বেদয়াতি, দেহবাদি বা উনার শানে কোনোরকম বেয়াদবিমূলক শব্দচয়ন, কোনোটাই আহলুস সুন্নাহের আলেমদের মানহাজ নয়। 

সালাফদের বিভিন্ন বক্তব্যের আলোকে ইবনে তাইমিয়া রহ.কে নিয়ে সবচেয়ে ইনসাফপূর্ণ কথা আমার কাছে সেটাই মনে হয়েছে যা ইবনে হাজার রহ. বলেছেন, “এতদা সত্ত্বেও এটাও মনে রাখতে হবে যে, তিনি মানুষ ছিলেন, আর মানুষের থেকে ভুল-সঠিক উভয় হতে পারে। তবে ইবনে তাইমিয়ার ভুল থেকে তার সঠিকটাই বেশি ছিলো। আর যেখানে উনার ভুল হয়েছে আমরা তাকে মাজুর মনে করি।’’

কোনো অবস্থাতেই যেনো আমরা ইনসাফবীহিন না হয়ে যাই, সে দোয়া আল্লাহর কাছে সর্বদা করার তাওফিক চাই। আল্লাহ আমাদেরকে কিছুটা হলেও সালাফদের হক আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমীন। 

রেফারেন্সঃ

১.আর-রদ্দুল ওয়াফির পৃ.২১

২. আর-রদ্দুল ওয়াফির পৃ.২২ 

৩. আল-ওলামাউল উজ্জাবের টিকা পৃ.৩০

৪.

আর-রদ্দুল ওয়াফির পৃ.৫৯ 

ইবনে দাকিকুল ঈদ রহ.-এর মন্তব্য কোন পর্যায়ের তা বুঝার জন্য এতটুকু যথেষ্ঠ যে, উনি নিজের ব্যাপারে বলেন, 

«‌ما ‌تكلمت بكلمة، ولا فعلت فعلا، إلا أعددت لذلك جوابا بين يدي الله تعالى»

আমি জীবনে যত কথা ও কাজ করেছি, তার সবগুলোই এমন যে, আল্লাহ যদি আমাকে সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন তাহলে আমি সে সম্পর্কে উত্তর দিতে পারবো (অর্থাৎ কোনো অনর্থক কথা বা কাজ আমি কখনোই করেননি যা সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হলে কোনো জবাব উনার থাকবে না। )।-ফাতহুল মুগিস ১/১২৩  

৫. আর-রদ্দুল ওয়াফির পৃ. ২৫

৬. আর-রদ্দুল ওয়াফির পৃ. ১২৮

৭. আর-রদ্দুল ওয়াফির পৃ. ৩২

৮. আর-রদ্দুল ওয়াফির পৃ. ২৪

৯. আর-রদ্দুল ওয়াফির পৃ. ১০৮

১০. আর-রদ্দুল ওয়াফেরের শুরুতে ইবনে হাজার রহ.-র ইবনে তাইমিয়া রহ. সম্পর্কে প্রশংসাবানী ২৪৭ পৃ.

১১. জাইলু তাবকাতিল হুফফাজ, ইমাম সুয়ূতি রহ. ২৩৫ পৃ.

১২. রাসায়েলে ইবনে আবেদিন (তাম্বিহুল উলাতি ওয়াল হুক্কামআল আহকামি শাতিমি খাইরিল আনাম) ১/৫৬৩, দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ, প্রকাশকাল ১৪৩৫ হি.  

১৩. মিরকাতুল মাফাতিহ ৮/২১৬, কিতবুল লিবাস, আলফসলুস সানী, বর্ণনা নং ৪৩৪০, আল মাকতাবাতুল আশরাইয়্যাহ দেওবন্দ।

১৪. উদ্ধৃত অংশটি শাহ সাহেব রহ. লিখিত একটি আরবি চিঠির অংশ। চিঠিটি তিনি তারই সমসাময়িক মনীষী মখদুম মুঈনুদ্দীন ঠাঠোবী (সিন্ধু প্রদেশের অন্তর্গত ঠাঠের অধিবাসী) -কে তার একটি পাত্রের জবাবে লিখেছিলেন। উক্ত পত্রে তিনি শাহ সাহেব রহ.-কে ইমাম ইবনে তায়মিয়া রহ.-এর কোনো কোনো একক সিদ্ধান্ত ও তার বিরোধীদের মতভেদের উদ্ধৃতি প্রদান করে তার সম্পর্কে শাহ সাহেব রহ.-এর মতামত জানতে চেয়েছিলেন। এই পত্রসংকলনটি শাহ সাহেব সাহেব রহ.-এর প্রখ্যাত ছাত্র খাজা মুহাম্মদ আমিন কাশ্মিরী কর্তৃক সংকলিত। সংকলনটি مناقب أبي عبد الله محمد اسمعيل البهاري و فضيلة ابن تيمية  নামে মাতবায়ে আহমদী থেকে মুদ্রিত।  جلاء العينين  গ্রন্থেও এটি অবিকল উদ্ধৃত হয়েছে।-সংগ্রামী সাধকদের ইতিহাস ২/১৮৮

১৫.সংগ্রামী সাধকদের ইতিহাস ২/১৮৮ 

শেয়ার করুন:

সাম্প্রতিক ব্লগ

ট্যাগ

অশ্লীলতা6 আকিদাহ বিষয়ক প্রশ্নোত্তর2 আখলাক1 আনুগত্য1 আমল31 আমল কবুলের শর্ত1 আসমা ওয়াস সিফাত11 ইবনে তাইমিয়াহ রহি.17 ইবনে তায়্যিমিয়া রহি.1 ইমাম আহমাদ ইবনে হামবাল রহি.3 ইশকে রাসুল স.3 ঈমান17 ঈমাম শাফিঈ রহি.1 উলামাকথন18 উসুলুস সুন্নাহ1 কবর1 কিয়ামত1 কুফর1 ক্বুরআন10 গাইরত2 জান্নাত2 জাহান্নাম2 জুমু'আ5 তাওহীদ14 তাফসীর4 দরসগাহ ম্যাগাজিন ২6 দাম্পত্য1 নারীবাদ1 পুঁজিবাদ1 প্রবন্ধ4 বদর1 বারাকাহ1 বাংলায় মুসলিম শাসনের ইতিহাস0 বিচার ফয়সালা5 বিজ্ঞানবাদ1 বিবিধ প্রশ্নোত্তর1 বিশুদ্ধ তাওবাহ3 বিশ্বকাপ1 মাজমুঊল ফাতওয়া2 মানহাজ1 ম্যাগাজিন1 যাকাত1 রমাদান1 রামাদান হাদিস2 রোযা2 শয়তানের চক্রান্ত1 শাইখ আহমাদ মুসা জীবরিল হাফি.1 শাইখ উসাইমিন রহি.1 শায়েস্তা খান0 শাস্তি1 শিরক1 সমকামীতা1 সাওম3 সাম্প্রদায়িকতা1 সালাত1 সাহাবী1 সিয়াম2 সিরাত1 সূরা আন নাবা1 সূরা আল আনককবুত1 সূরা আল হাজ্জ1 সূরা মাউন1 সূরা হূদ1 হত্যা1 হদ1 হাদিসে কুদসী3 হামজা জর্জিস1 হাশর1

সাবস্ক্রাইব করুন