~ তানভীর হায়দার
সাম্প্রতিককালে সম্ভাব্য “গর্ভপাত নিষেধাজ্ঞা” নিয়ে আমেরিকায় আবার উত্তপ্ত আলোচনা ও বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। এসবে গা ভাসিয়ে প্রপাগান্ডা ছড়াচ্ছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সহ অনেক নারীবাদী সংস্থাগুলো।
কুরআনে আল্লাহ তা’আলা ভ্রূণহত্যাকে শয়তানী কর্মকাণ্ড বলেছেন। তিনি বলেন, “এমনিভাবে অনেক মূর্তিপূজকদের দৃষ্টিতে তাদের উপাস্যরা (শয়তান) সন্তান হত্যাকে শোভনীয় করে দিয়েছে যেন তারা তাদেরকে বিনষ্ট করে দেয় এবং তাদের ধর্মমতকে তাদের কাছে বিভ্রান্ত করে দেয়। যদি আল্লাহ চাইতেন, তবে তারা এ কাজ করতো না। অতএব (হে! রাসুল) আপনি তাদেরকে এবং তাদের মনগড়া বুলিকে পরিত্যাগ করুন।”[১]
উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যাতে তাফসীরগণরা বলেন, “শয়তান মূর্তিপূজকদের আদেশ দিতো যে, তারা যেন তাদের সন্তানকে হত্যা করে। নতুবা তারা অভাবগ্রস্থ হয়ে পড়বে।”[২]
ভ্রুণহত্যা এবং শয়তানের মধ্যে যে একটি প্রাচীন সংযোগ রয়েছে সেটি পশ্চিমা অমুসলিমরাও স্বীকার করে।
•শয়তানবাদী বিপ্লব হিসেবে নারীবাদ:
পার ফ্যাক্সনেল্ড একজন সুইডিশ শিক্ষাবিদ যিনি ধর্মীয় ইতিহাস বিষয়ে বিশেষজ্ঞ এবং স্টকহোম বিশ্ববিদ্যালয়ে লেকচার প্রদান করেন। তিনি সেকুলার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ায় আমরা তাকে ‘ধর্মান্ধ’ হিশেবে অভিযুক্ত করতে পারি না এই বলে যে ‘লোকটা সবকিছুতেই শয়তানবাদ দেখে!’ তাই না?
যাই হোক ২০১৪ সালে তিনি একটি বই প্রকাশ করেন। বইটির নাম হলো “স্যাটানিক ফেমিনিজম: লুসিফার অ্যাজ দ্য লিবারেটর অফ উইমেন ইন নাইনটিনথ সেঞ্চুরি কালচার”। ৫০০ পৃষ্ঠার এই বইয়ে তিনি দেখিয়েছেন যে নারীবাদ আন্দোলনে শয়তানের উপস্থিতি কতটা সাধারণ হয়ে গেছে। বইয়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংশ :
.
উনিশ শতকের শেষের দিকে এবং বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে: শয়তানকে জ্ঞানার্জনের বাহক হিসেবে মনে করা বিশ্ব-নেতৃস্থানীয় এক মহিলা গুপ্ততত্ত্ববিদের লেখা বইয়ের প্রায় কয়েক হাজার কপি বিক্রি হয়।
.
ফ্রান্সে একজন লেসবিয়ান কবি একটি বই প্রকাশ করেছেন যেখানে তিনি শয়তানকে নারীজাতির স্রষ্টার পাশাপাশি নারীসুলভ কবিতা এবং নারীদের (মহিলা-মহিলা) মধ্যে প্রেমের অনুপ্রেরণাকারী হিসেবে প্রশংসা করেছেন।
.
মন্টানার এক বিশ বছর বয়সী মহিলা একটি বিতর্কিত আত্মজীবনী লেখার কারণে আমেরিকানরা হতবাক হয়ে যায়। যেখানে ওই মহিলা রক্ষণশীল সামাজিক প্রথা থেকে মুক্তির প্রতীক হিশেবে শয়তানকে আখ্যায়িত করে।
.
অপরদিকে নারীদের ভোটের অধিকার চাওয়া একজন বিশিষ্ট আমেরিকান ‘কালো জনগণকে‘ চিত্রিত করে যেভাবে মধ্যযুগীয় ডাইনিরা করত। তারা মনে করত ঈশ্বর এবং বাণী প্রচারকারীদের প্রতি নারীবাদীরা আনুগত্য পোষণ না করার কারণে তারা (ঈশ্বর..) নারীর অধিকারকে অস্বীকার করেছে।
.
একজন যুবতী ইংরেজ মহিলার একটি বিতর্কিত এবং বাণিজ্যিকভাবে সফল উপন্যাসে, একটি দয়ালু শয়তান প্রধান চরিত্রে থাকা মহিলাকে তার পুরুষ আত্মীয়দের রক্ষণশীল মনোভাব থেকে মুক্তি পেতে সহায়তা করে।
.
মার্কেস পদে অধিষ্ঠিত একজন ইতালীয় ধনী মহিলা, একজন বিশ্ব-বিখ্যাত মঞ্চ অভিনেত্রী এবং একজন প্রখ্যাত চলচ্চিত্র তারকা আইডেন্টিটি গেম খেলে যা শয়তানের ভূমিকা গ্রহণ করে বা এই সত্তার সাথে তারা মৈত্রীবদ্ধ হয়ে নিজেদেরকে চিত্রিত করে।
.
অসংখ্য ফরাসি মহিলা নিজেদেরকে গহনা দিয়ে সজ্জিত করে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্যভাবে শয়তানের সাথে ইভের (হাওয়া আ.) যোগসাজশ এবং তার নিষিদ্ধ ফল খাওয়াকে চিত্রিত করে।
উপরের অংশ গুলোকে বিশ্লেষণ করলে বুঝা যায় যে জনপ্রিয় লেখক, অভিনেত্রী ও অন্যান্য পাবলিক ফিগার্সরা শয়তানবাদী নারীবাদকে নর্মালাইজ করার চেষ্টা করছে। [৩]
টীকা:
[১] সূরা আন’আম, আয়াত:১৩৭
[২] তাফসীর ইবনে কাসির
[৩] মুসলিম স্কেপটিক ডটকম