মূলঃ শায়খ ইবনু নাসির
অনুবাদ: আম্মারুল হক
হুদায়বিয়ায় মুশরিকদের দূতদের সবাই ব্যর্থ হল। অতঃপর উরওয়াহ বিন মাসউদ তাদের কাছে এসে কুরাইশদের বললেন, “আলাসতুম বিল ওয়ালিদ ওয়ালাসতু বিল ওয়ালাদ? – তোমরা কি সেই ব্যক্তি নও যারা আমাকে জন্ম দিয়েছে এবং আমি কি তোমাদের সন্তান নই?”
উরওয়াহ বিন মাসউদ ছিলেন সাকিফ গোত্রের লোক। যিনি তায়েফ থেকে এসেছেন, কিন্তু তাঁর মা ছিলেন কুরাইশ বংশের এবং তিনি ছিলেন আরবের মহান ব্যক্তিদের একজন।
দূত হিসাবে প্রস্তাবিত নামগুলির মধ্যে তিনিও একজন ছিলেন। তিনি এতই সম্মানিত ছিলেন যে, মুশরিকরা বলেছিল, ‘কেন এই কুরআন দুটি শহরের [একটি] একজন মহান ব্যক্তির উপর নাযিল করা হয়নি?’ (সুরা যুখরুফ)
দুই শহরের একজন মহান ব্যক্তির উপর বলতে- তারা মক্কা এবং তায়েফের কথা উল্লেখ করছিল মুশরিকরা বলছিল, আল্লাহ কেন মুহাম্মদকে বেছে নিলেন? কেন তিনি ‘উরওয়াহ ইবনে মাসউদ’কে বেছে নেননি?
মোটকথা, তিনি একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তিনি কুরাইশদের কাছে এসে দেখলেন যে, এসব চেষ্টার কোনো সফলতা বের হচ্ছে না। তাই তিনি তাদের বললেন, “আমি তোমাদের ছেলে, তোমরা কি চাও যে আমি গিয়ে মুহাম্মাদের সাথে কথা বলে দেখি?” তারা বলল, হ্যাঁ। কিন্তু তারপর তিনি তাদের বললেন, “যারা তোমাদের জন্য দূত হয়ে গিয়েছিল, তোমরা তো তাদের ব্যর্থতার কারণে যে অপমান করেছো, আমি তার সবই দেখেছি।”
যখনই কেউ ফিরে ব্যর্থ হয়ে ফিরেছে, সে হুলাইস হোক বা বুদাইল বিন ওয়ারকা, তারা তাদেরকে অপমান করেছে। তারা এরপর যে কাউকে পাঠাবে এবং তারা যখন ফিরে আসবে তখন তারা তাদের অপমান করবে। কারণ, তারা যে উত্তর শুনতে চায় দূতরা তার চেয়ে ভিন্ন উত্তর নিয়ে ফিরে আসে। সুতরাং উরওয়াহ বিন মাসউদ চাইছিলেন না যে, তার সাথে একই ঘটনা ঘটুক। তারা বলল, “আমরা আপনাকে বিশ্বাস করি, আপনি গিয়ে তার সাথে কথা বলুন।”
উরওয়াহ বিন মাসউদ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গেলেন। বললেন, “হে মুহাম্মাদ, আপনি কি ভেবে দেখেননি যে আপনি নিজের লোকদের ধ্বংস করছেন? আপনি কি আপনার আগে এমন কোনো আরবের কথা শুনেছেন যে তার লোকদের ধ্বংস করেছে? এবং যদি তা না হয়, আমি শপথ করে বলছি আমি এখানে এমন কিছু মুখ দেখতে পাচ্ছি, যারা বিপদকালে পালাবে। তারা আপনাকে পরিত্যাগ করতে যথেষ্ট সক্ষম।”
উরওয়াহ বিন মাসউদ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে যে দুটি চিত্র দেখেছেন তা উল্লেখ করছেন; প্রথম চিত্রটি হল, আপনি নিজের লোকদের ধ্বংস করে জয়ী হবেন। আরেকটি কথা, যেটা তিনি তাঁকে বলেছিলেন, তা হলো, “আপনি কি কখনও এমন একজন আরব ব্যক্তিকে দেখেছেন যে তার নিজের গোত্রকে ধ্বংস করেছে?
তৎকালীন আরব ছিল একটি উপজাতীয় সমাজ। গোত্রই সবকিছু। উরওয়াহ বিষয়টা সেভাবেই দেখেছেন যে, মুহাম্মদ তার নিজের লোকদের আক্রমণ করছেন। তিনি তাকে বলার চেষ্টা করছেন যে, এটা একটা লজ্জাজনক কাজ। তাই রাসুল যেন তা না করেন।
অন্য চিত্রটি হল, মুহাম্মাদ সাঃ পরাজিত হবেন, এবং তিনি এটিকে একটি সম্ভাব্য চিত্র হিসাবে দেখেছেন। কারণ, তিনি বলেছিলেন,
‘এসব লোকেরা আপনাকে পরিত্যাগ করে চলে যাবে।’
তিনি যা উল্লেখ করছেন তা হল, সাহাবাগণ বিভিন্ন গোত্রের; তারা কুরাইশদের অন্তর্গত, তারা আউস, খাজরাজ, আসলাম, গিফার, ইত্যাদি। আসলাম এবং গিফারের মতো এই কয়েকটি গোত্রের জন্য উরওয়াহ বিন মাসউদ একথা বলেছিলেন। কারণ, এই গোত্রগুলি ছিলো, দ্বিতীয় শ্রেণীর উপজাতি। সাকিফ এবং কুরাইশরা ছিল আরবের প্রধান গোত্র। রাসুলের কাছে আসলাম এবং গিফারের মতো এই ছোট গোত্রগুলির লোকজন ছিলো। কুরাইশ ও সাকিফের মত বৃহত্তর গোত্রগুলি তাদের অহংকারের কারণে ইসলাম গ্রহণে ধীর ছিল এবং তারা অনুভব করেছিল যে ইসলাম তাদের অবস্থান কেড়ে নেবে। তবে ছোট গোত্রগুলি হকের দাওয়াত শুনতে বেশি ইচ্ছুক ছিল। কারণ, মান, সম্মান ও অহংকারের বাধা তাদের সামনে ছিল না। রাসুলুল্লাহ সাঃ একটি হাদিসে বলেছেন যে, এই গোত্রসমূহ বনু তামিম, বনু গাতফান এবং বনু আসাদের চেয়ে ভাল। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, কিয়ামতের দিন এই ছোট গোত্র যেমন নাজিন, জুহাইন, আসলাম, গিফার গোত্রসমূহ তামিম, আসাদ, গাতফানের তুলনায় পাল্লায় ভারী হবে।
কিন্তু উরওয়াহ বিন মাসউদ গোত্রীয় জাহিলিয়াতের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিষয়গুলো দেখছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি স্রেফ মানুষের এক বড়সড় ভিড়ই দেখতে পাচ্ছি। যখন পরিস্থিতি গুরুতর হয়ে যাবে তখন তারা আপনাকে একা রেখে পালিয়ে যাবে।’
আবু বকর যখন একথা শুনলেন, তিনি কথাটা বড় অপমান হিসাবে দেখলেন। তাই তিনি উরওয়াকে বললেন, “যাও, তোমার দেবতা লাতের ভগাঙ্কুর চুষে খাও! আমরা কি পালিয়ে গিয়ে রাসুলকে পরিত্যাগ করব?!”
এটা একটা বড় অপমান ছিল। আরবরা একে অপরকে গালি দিত ‘তোমার মায়ের ভগাঙ্কুর চুষো’ একথা বলে। এই শব্দব্যবহার করার জন্য আমাকে ক্ষমা করুন। আমরা সীরাহ গ্রন্থে যা উল্লেখ করা হয়েছে তা বর্ণনা করছি। দ্বীনের বিষয়ে লজ্জা নেই। আবু বকর এখানে মা না বলে লাত দিয়ে প্রতিস্থাপন করেছেন। লাত ছিল সাকিফ গোত্রের লোকদের প্রধান দেবতা। উরওয়া বিন মাসউদকে এই কথা বলা তার জন্য বড় অপমান ছিল। উরওয়া আবু বকরের দিকে তাকিয়ে বললেন, “যদি আমার প্রতি তোমার অনুগ্রহ না থাকত তবে আমি তোমার গালির জবাব দিতাম, কিন্তু আমি চুপ থাকব এবং এই চুপ থাকার দ্বারা আমি তোমার অনুগ্রহের প্রতিদান দিয়েছি।”
উরওয়া বিন মাসউদ এখানে একটি বিষয়ের কথা উল্লেখ করছিলেন যেচ একবার তিনি রক্তপণের দায়ে পড়েছিলেন। রক্তপণ হিসাবে একশত উট তার প্রয়োজন ছিল। তাই তিনি তার বন্ধুদের ডেকে তাকে সাহায্য করতে বলেছিলেন। লোকেরা তাকে এক দুটি উট দেয়। কিন্তু আবু বকর রাদ্বিঃ তাকে দশটি উট দিয়ে সাহায্য করেছিলেন। এই ঘটনা জাহিলিয়াতের সময় ঘটেছিল। আবু বকর রাদ্বিঃ খুব উদার মানুষ ছিলেন।
যাই হোক, এতবড় অপমানের পরও উরওয়া বিন মাসউদ তার অনুগ্রহের বিনিময়ে চুপ করে থেকে এবং তাকে জবাব না দিয়ে তাকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। যদিও দেবতা লাতের জন্য এই গালি বড় অভিশাপ ছিল। কিন্তু আবু বকর রাদ্বিঃ তার মেজাজ সামলাতে পারেননি উরওয়াহ বিন মাসউদের এমন মন্তব্যে যে, মুসলমানরা পলায়ন করতে যাচ্ছে এবং রাসুলুল্লাহকে একা রেখে যাচ্ছে।
ভাই ও বোনেরা, সাহাবায়ে কেরামের কাজ কাফেরদের কেমন ধারণা দেয়? যখন তারা মুসলমানদের একাত্মতা দেখে, তারা তাদের শক্তি দেখে এবং তারা রাসুলুল্লাহর জন্য আত্মত্যাগ করার ইচ্ছা দেখে? তারা দৃঢ়চিত্তে বলেছিলেন, আমরা যুদ্ধ করতে যাচ্ছি, কোনো অবস্থাতেই আমরা রাসুলকে একা ছেড়ে যাব না!
যখন উরওয়া বিন মাসউদ রাসুলুল্লাহর সাথে কথা বলছিলেনআ তখন তিনি তার দাড়ি ধরার জন্য হাত বাড়িয়ে দিচ্ছিলেন। এটা আরবের রেওয়াজ ছিল। কথা বলার সময় দাড়িতে হাত দেয়া। কিন্তু এখানে উরওয়া বিন মাসউদ কার সাথে কথা বলছেন? তিনি রাসুলুল্লাহর সাথে কথা বলছেন। তাই তিনি যখনই হাত বাড়ালেন, তখনই মুগীরা বিন শুবাহ যিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসে থাকা অবস্থায় তাকে পাহারা দেওয়ার জন্য তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, তিনি তার তরবারি দিয়ে উরওয়ার হাতে আঘাত করতেন। মুগীরা তার তরবারির হাতল দিয়ে আঘাত করে উরওয়াকে বলতেন, “রাসুলুল্লাহর দাড়ি থেকে আপনার হাত দূরে রাখুন, অন্যথায় এই হাত আপনার কাছে ফিরে আসবে না, আমি কেটে ফেলব।”
মুগীরা মাথা থেকে পা পর্যন্ত বর্মে আবৃত ছিলেন। কেবল তার চোখই দেখা যাচ্ছিল। তাই উরওয়ানজানতেন না যে এই ব্যক্তি কে। তিনি (এক বর্ণনায় আছে) রাসুলুল্লাহকে বলেছিলেন, আপনি কতটা রুক্ষ এবং অভদ্র!
অন্য বর্ণনায় তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেছিলেন, “আপনার সেনাবাহিনীতে এই লোকের চেয়ে খারাপ আর কোন লোক আছে বলে আমার মনে হয় না, তিনি কে?”
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুচকি হেসে বললেন, ইনি আপনার ভাতিজা আল মুগীরা বিন শুবাহ। মুগীরা ছিলেন উরওয়া বিন মাসউদের ভাতিজা; উরওয়া বিন মাসউদ যারপরনাই আশ্চর্য হলেন যে, তার সাথে সবচেয়ে রুক্ষ ব্যবহার করা লোকটি তার নিজের ভাতিজা!। তারপর ‘উরওয়া বললেন, “হে বিশ্বাসঘাতক লোক, আমি কি ইতিপূর্বে তোমার বিশ্বাসঘাতকতার মাশুল দিইনি?”
উরওয়াহ এখানে যা উল্লেখ করছেন, তা হলো, মুগীরা বিন শুবা জাহিলী যুগে তের জন মুশরিকের সাথে ভ্রমণ করার সময় তাদের সবাইকে হত্যা করে তাদের অর্থ চুরি করেছিলেন। তারপর মুসলিম হওয়ার জন্য মদীনায় পালিয়েছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, আমি তোমার কাছ থেকে ইসলাম গ্রহণ করব কিন্তু এই অর্থ গ্রহণ করব না। কারণ, এই মুসাফিরদের মধ্যে তোমার প্রতি আস্থা ছিল এবং তুমি তাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে তাদের টাকা নিয়েছো। তাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছিলেন, আমি এই অর্থ গ্রহণকরতে চাই না। রাসুলুল্লাহ যদিও মুশরিকদের কাছে তা ফেরত দেননি, তিনি মুশরিকদের কাছে ক্ষমা চাননি, কিন্তু একই সাথে তিনি তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছিলেন। কারণ, এই অর্থ যেভাবে নেওয়া হয়েছিল তার পন্থা সঠিক ছিল না। উরওয়া বিন মাসউদকে সেসব মুশরিকদের পরিবারকে চাচা হিসাবে এই অর্থ দিতে হয়েছিল।
প্রিয় ভাই ও বোনেরা! দেখতে পাচ্ছেন যে, ইসলাম কিভাবে এই লোকদের হৃদয় পরিবর্তন করেছে এবং কীভাবে তারা রাসুলুল্লাহর প্রতি তাদের ভালবাসাকে যেকোন ব্যক্তিগত প্রয়োজন বা ব্যক্তিগত [সম্পর্কের] আগে রেখেছে। দেখুন, এখানে মুগীরাকে তার চাচা সাহায্য করেছিলেন এবং অন্তত তার উচিত ছিল এর জন্য কৃতজ্ঞতা বোধ করা। কিন্তু রাসুলুল্লাহর প্রতি তাঁর ভালবাসা এতটাই মহান ছিল যে, তিনি উরওয়ার সাথে এমন ব্যবহার করেছিলেন। কারণ, তিনি তাকে রাসুলুল্লাহর সাথে অসম্মানজনক ব্যবহার করতে দেখেছিলেন। আবু বকরের বক্তব্য এবং মুগিরার কর্মে সাহাবায়ে কেরাম রাসুলুল্লাহকে কতটা ভালোবাসতেন তার একটি আশ্চর্য উদাহরণ আমরা দেখছি।
উরওয়াহ বিন মাসউদের জীবনে হুদায়বিয়ার অভিজ্ঞতা এই ছিল যে, তিনি কুরাইশদের কাছে ফিরে গিয়ে বললেন, “আমি রাজাদের কাছে গিয়েছি, সিজার, খসরু এবং নেগাসের সাথে আমার কথা হয়েছিল, এবং আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি, আমি কখনও কোন রাজার প্রজাদের তাকে এমনভাবে শ্রদ্ধা করতে দেখিনি যেভাবে মুহাম্মদের লোকেরা তাকে শ্রদ্ধা করে। আমি শপথ করে বলছি, যদি সে থুতু দেয়, তা সর্বদা তাদের একজনের তালুতে পড়ে এবং তারপর সে তা তার মুখে বা ত্বকে মেখে ফেলে। যদি সে তাদেরকে কোনো আদেশ দেয় তবে তারা তা পালন করতে তাড়াহুড়ো করে, যদি সে কথা বলে, তারা তাদের কণ্ঠস্বর নিচু করে। তার উপস্থিতিতে তারা কখনই তার মুখপানে সরাসরি তাকায় না। সে তোমাদেরকে একটি প্রস্তাব দিয়েছে, এটা তোমরা গ্রহণ করো।”
আয-যুহরীর মতে, তিনি বলেছিলেন, “আমি এমন এক লোককে দেখেছি যার অনুসারীগণ কোনো অবস্থাতেই তাকে পরিত্যাগ করবে না।”
তিনি কিছু ধারণা নিয়ে এসেছিলেন, কিন্তু যখন তিনি তার চোখের সামনে পরিস্থিতির বাস্তবতা দেখেছিলেন তখন সেগুলি পরিবর্তন হয়েছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ওযু করতেন তখন সাহাবায়ে কেরাম রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে নেমে আসা পানির ফোঁটা তুলতে ছুটে যেতেন এবং রাসুলুল্লাহর কাছ থেকে বরকত পাওয়ার জন্য তা ত্বকে ঘষতেন। একটি চুল পড়ে গেলে তারা তাও নিয়ে রাখতেন। তিনি থুথু দিলে তারা সেটা নিয়ে নিজেদের গায়ে ঘষতেন। তারা দেখতে পেতেন যে, যা কিছু রাসুলুল্লাহর সাথে সম্পর্কযুক্ত তার মধ্যে রাসুলুল্লাহর বরকত রয়েছে; এটাই ছিল রাসূলুল্লাহর প্রতি তাদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। উরওয়া বিন মাসউদ, এই ঝানু ব্যক্তি, তাঁর সমাজের এই নেতা, যে ব্যক্তি বিশ্ব ভ্রমণ করেছিলেন এবং রাজাদের সাথে দেখা করেছিলেন এবং সেই সময়ের সর্বশ্রেষ্ঠ রাজা, কায়সার এবং কিসরা এবং আন-নাজাশীর সাথে দেখা করেছিলেন, তিনি বলেছিলেন, হুদায়বিয়্যাতে যা দেখেছি সেরকম কিছু আর জীবনে দেখিনি। তিনি বিস্মিত হলেন, তিনি অবাক হলেন – পরে তিনি মুসলমান হয়েছিলেন। তিনি যা দেখলেন তাতে তিনি অবাক হয়ে গেলেন।
ভাই ও বোনেরা, এটাই হচ্ছে দাওয়াহর জীবন্ত উদাহরণ; কথার দাওয়াহ নয় বরং কর্মের দাওয়াহ। আমাদের কথার দাওয়াহ দরকার কিন্তু তা নিশ্চিত করার জন্য আমাদের কর্মের দাওয়াহ দরকার। উরওয়া শব্দের দাওয়াহ শুনেছেন, কিন্তু এখন নিজের চোখে দেখেছেন, ইসলামের দাওয়াহের মূর্ত রূপ চোখের সামনে দেখেছেন। তিনি কুরাইশদের বললেন, ‘মুহাম্মদ তোমাদের একটি প্রস্তাব দিয়েছেন; গ্রহন করে নাও। কারণ, এই মানুষদের পরাজিত করার কোনো উপায় তোমাদের নেই, আমি তোমাদের জন্য কোনো আশা দেখছি না।