প্রশ্ন: আল্লাহ তাআলা কখন বান্দার আমলকে কবুল করেন? কোনো আমল আল্লাহর নিকট নেক ও গ্রহণযোগ্য আমল হওয়ার শর্তসমূহ কী কী?
উত্তর:
الحمد لله
وبعد: কোনো আমলে যতক্ষণ ২টি জিনিসের পূর্ণতা না থাকছে ততক্ষণ তা ইবাদাতে পরিণত হতে পারে না, এ দুটি হচ্ছে: আল্লাহর জন্য পরিপূর্ণ বশ্যতার পাশাপাশি আল্লাহর জন্য পরিপূর্ণ মুহাব্বত।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَٱلَّذِینَ ءَامَنُوۤا۟ أَشَدُّ حُبࣰّا لِّلَّهِۗ
“যারা ঈমান এনেছে তারা আল্লাহকে সর্বাধিক ভালবাসে”[১]
তিনি সুবহানাহ আরও বলেন,
إِنَّ ٱلَّذِینَ هُم مِّنۡ خَشۡیَةِ رَبِّهِم مُّشۡفِقُونَ
“নিশ্চয় যারা তাদের রবের ভয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত”[২]
আল্লাহ তাআলা উভয় বৈশিষ্ট্যকে এই আয়াতে একত্রে উল্লেখ করেছেন:
إِنَّهُمْ كَانُوا يُسَارِعُونَ فِي الْخَيْرَاتِ وَيَدْعُونَنَا رَغَباً وَرَهَباً وَكَانُوا لَنَا خَاشِعِينَ
“তারা সৎকর্মে প্রতিযোগিতা করত, তারা আশা ও ভীতির সাথে আমাকে ডাকত এবং তারা ছিল আমার নিকট বিনীত”[৩]
এটা জানার পর আপনি এটাও জেনে রাখুন যে কেবল একত্ববাদী মুসলিমের ইবাদাতই কবুল হয়।
আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَقَدِمْنَا إِلَى مَا عَمِلُوا مِنْ عَمَلٍ فَجَعَلْنَاهُ هَبَاءً مَنْثُوراً
“আমি ওদের কৃতকর্মগুলির প্রতি অভিমুখ করে সেগুলিকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণা (স্বরূপ নিষ্ফল) করে দেব”[৪]
সহিহ মুসলিমে আইশাহ [রা.] থেকে বর্ণিত আছে যে,
قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ ابْنُ جُدْعَانَ كَانَ فِي الْجَاهِلِيَّةِ يَصِلُ الرَّحِمَ وَيُطْعِمُ الْمِسْكِينَ فَهَلْ ذَاكَ نَافِعُهُ قَالَ لَا يَنْفَعُهُ إِنَّهُ لَمْ يَقُلْ يَوْمًا رَبِّ اغْفِرْ لِي خَطِيئَتِي يَوْمَ الدِّينِ”
“আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল, ইবন জুদআন[৫] তো জাহিলী যুগে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করত, মিসকীনদের খাওয়াতো, (আখিরাতে কি) এসব কর্ম তার কোনো উপকারে আসবে?
তিনি বললেন, না কোনো উপকারে আসবে না, (কেননা) সে একদিনও বলেনি যে, হে আল্লাহ রব, কিয়ামাতের দিন আমার অপরাধসমূহ ক্ষমা করে দিয়েন”[৬] ।
অর্থাৎ সে পুনরুত্থানে বিশ্বাসী ছিল না, এবং আল্লাহর সাথে সাক্ষাত্যের আশায় সে আমলও করেনি।
এরপর, কোনো মুসলিমের ইবাদাতও ততক্ষণ পর্যন্ত কবুলযোগ্য হয়না যতক্ষণনা এতে দুটি শর্ত নিশ্চিত করা যাচ্ছে:
প্রথমত, আল্লাহ তাআলার জন্য নিয়তের বিশুদ্ধতা তথা ইখলাস: অর্থাৎ সকল বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ কথা ও কর্মে বান্দার উদ্দেশ্য হবে কেবলই আল্লাহ তাআলার সন্তোষ অর্জন, অপর কারও নয়।
দ্বিতীয়ত, যে শরীআতের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিয়েছেন যে এই শরীআত ব্যতীত অপর কোনো পদ্ধতিতে ইবাদাত করবে না সেই শরীআত মোতাবেক হতে হবে, আর সেটাও হতে হবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা নিয়ে এসেছেন যার অনুগামী। তিনি যা নিয়ে এসেছেন তার বিপরীত বিষয়কে বর্জন করতে হবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে যা প্রমাণিত নয় এমন যে কোনো নতুন ইবাদাত উদ্ভাবন করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
এই দুই শর্তের দলীল হল আল্লাহ তাআলার বাণী:
فَمَنْ كَانَ يَرْجُوا لِقَاءَ رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلاً صَالِحاً وَلا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدا
“কাজেই যে তার রব-এর সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন সৎকাজ করে ও তার রব-এর ইবাদাতে কাউকেও শরীক না করে”[৭]
ইবন কাসির [রাহ.] এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন,
“(কাজেই যে তার রব-এর সাক্ষাত কামনা করে) অর্থাৎ তাঁর নেক পুরস্কার ও প্রতিদান চায়, (সে যেন সৎকাজ করে) অর্থাৎ শরীআতের অনুগামী নেক কাজ করে, (ও তার রব-এর ইবাদাতে কাউকেও শরীক না করে) অর্থাৎ সে তার আমলের মাধ্যমে কেবলই আল্লাহ তাআলার সন্তোষ কামনা করবে, তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না।
এই দুটি বিষয় হচ্ছে আমল কবুলযোগ্য হবার দুটি ভিত্তি, (অর্থাৎ) নিঃসন্দেহে (আমল) খালিসভাবে কেবল আল্লাহর জন্যই করা হবে, (আর) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শরীআতের মোতাবেক সিদ্ধ হবে”[৮] ।
উত্তর প্রদানে: শাইখ মুহাম্মাদ সালিহ আল মুনাজ্জিদ[৯] [হাফি.]
অনুবাদ: মানযুরুল কারিম
টীকা:
১)সূরা আল বাকারাহ : ১৬৫
২) সূরা আল মু’মিনুন: ৫৭
৩)সূরা আল আম্বিয়া: ৯০
৪)সূরা আল ফুরকান: ২৩
৫)ইবন জুদআনের মূল নাম আব্দুল্লাহ। যে কুরাইশের বনু তামীম বিন মুররাহ গোত্রের লোক ছিল, এবং কুরাইশদের প্রসিদ্ধ ব্যক্তিদের একজন ছিল। আইশাহ [রা.] এর আত্মীয় ছিল। – উস্তায ড. মূসা শাহীন লাশীন [রাহ.], ফাতহুল মুনঈম শারহু সাহিহ মুসলিম: ২/৫২ [অনুবাদক]
৬)ইমাম মুসলিম (রাহ.), আস সহিহ, হা: ২১৪
৭)সূরা কাহাফ: ১১০
৮)তাফসিরুল কুরআনিল আযীম: ৫/২০৫; দারু তায়্যিবাহ লিন নাশর, ২য় সংস্করণ, ১৯৯৯ ঈ. [অনুবাদক]
৯) মাউকা’ ইসলাম সুওয়াল ওয়া জাওয়াব: ১/১৪ , الكتاب مرقم آليا