এম. আব্দুল মজিদ মারুফ
আনন্দ উল্লাস হাসি ঠাট্টার আড্ডায় সময় কাটাতে সকলের ভালো লাগে। বিনোদনে মনের প্রফুল্লতা আসে। কিন্তু আনন্দ-উল্লাসে এবং হাসি-ঠাট্টায় মেতে থাকার ব্যাপারে সাবধান হওয়া জরুরি। ইসলাম পরিপূর্ণ জীবন বিধান হিসেবে দৈনন্দিন জীবনে হাসি-তামাশা করাকে বৈধতা দিয়েছে শর্তসাপেক্ষে। হাসি তামাশার ক্ষেত্রে কিছু বিধিবদ্ধ নিয়ম কানুন মেনেই অগ্রসর হতে হবে, মেতে উঠতে হবে বিনোদনের জগতে। বিনোদনের মাত্রা নির্ধারণ করে দিয়ে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়াল কুরআনুল কারীমে বিভিন্ন জায়গায় সতর্কতা জারি করেছেন। আল্লাহ্ তা‘আলা কুরআনে বলেন-
إِنَّ اللّٰهَ لَا يُحِبُّ الْفَرِحِيْن
‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্ অধিক আনন্দকারীদের পছন্দ করেন না।’’ (সুরা ক্বাসাস, আয়াত: ৭৬)
যারা আনন্দে আত্মহারা হয়ে ওঠে, ভুলে যায় তাদের নৈতিক দায়িত্বের কথা, তাদেরকে আল্লাহ পছন্দ করেন না। তাদেরকে আল্লাহ কেন পছন্দ করেন না? যদি এটি জিজ্ঞেস করা হয় সেটি জিজ্ঞেস করার পূর্বেই ইসলাম তার বর্ণনা দিয়েছে। রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-
لا تكثروا الضحك فإن الضحك تميت القلب
‘‘অধিক হেসো না, কেননা (অধিক) হাসি অন্তরকে মেরে ফেলে।’’ (ইবনু মাজাহ, আস-সুনান: ৪১৯৩; সহিহুল জামি’: ৭৪৩৫)
অন্তর যখন জাগ্রত থাকবে সকল কাজে মজা পাওয়া যাবে, মনে বিষন্নতা স্থান করতে পারবে না। অধিক পরিমাণে হাসার ফলে মনে এক সময় বিষন্নতার স্থান করে নেয়। ছোটবেলায় যখন অধিক পরিমাণে হাসতাম আমাদের বলা হত বেশি হাসো না বেশি হাসলে কাঁদতে হয়। এই উক্তিটির সাথে হাদিসের কতইনা চমৎকার মিল। এজন্য হাসি ঠাট্টার মাত্রা নির্ধারণ করে দিয়ে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা কোরআনের অপর জায়গায় বর্ণনা করেছেন
فَلْیَضْحَكُوْا قَلِیْلًا وَّ لْیَبْكُوْا كَثِیْرًا
অতঃপর তাদের কম হাসা ও বেশী কাঁদা উচিত। (সূরা আত-তওবা,আয়াতঃ ৮২)।
ক্ষণস্থায়ী এই দুনিয়ায় সফলতার চেয়ে ব্যর্থতার মাত্রাটাই বেশি। আপনি যাকে সফল হিসেবে দেখছেন তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে দেখুন তিনি নিজেও হতাশ, তিনি নিজেকে ব্যর্থ হিসেবেই মনে করেন। পৃথিবীর ইতিহাসে এমনও দেখা গেছে যারা মানুষকে মোটিভেশন দিয়েছেন, সফলতার গল্প শুনিয়েছেন জীবনের শেষ পর্যায়ে তারা ডিপ্রেশনে আত্মহত্যা করেছেন। এই জীবনে প্রার্থীব দৃষ্টিতে যাদের সফল মনে হয় তারা কেউই সফল নয় কারণ পরিপূর্ণ সফলতা মৃত্যুর পর আল্লাহর কাছেই পাওয়া যায়। এজন্য আল্লাহর কাছে বেশি বেশি করে কাঁদতে বলা হয়েছে। একই আয়াতের পরবর্তী অংশে আল্লাহ তা’আলা বলেন
جَزَآءًۢ بِمَا كَانُوْا یَكْسِبُوْنَ
কারণ তারা যে গুনাহ উপার্জন করেছে তার প্রতিদান এ ধরনেরই হয়ে থাকে (যে, সেজন্য তাদের কাঁদা উচিত।) (সূরা আত-তওবা,আয়াতঃ ৮২)।
জীবনের গুনাহ গুলো স্মরণ করে নিজেদের ব্যর্থতা গুলোকে যখন আল্লাহর সামনে তুলে ধরে মানুষ আল্লাহর কাছে কান্না করে তখন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাদের জীবনের গুনাহ গুলো মাফ করে দেন এবং সফলতার পথ তাদের দেখিয়ে চিরস্থায়ী এবং পূর্ণ সফলতা দান করেন। এই ধরনের মানুষগুলোকে আল্লাহ তা’আলা ভালোবাসেন। এ ব্যাপারে সংক্ষিপ্ত কথায় বিশদ মর্মসহকারে রসুলের বর্ণনা পাওয়া যায়। হাদিসে এসেছে-
إن الله يحب كل قلب حزين
‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্ প্রত্যেক ব্যথিত ও চিন্তিত অন্তরকে ভালোবাসেন।’’ (বায়হাকি, শু‘আবুল ঈমান: ৮৬৬)
এজন্য আমাদের উচিত হাসি ঠাট্টায় মাত্রাতিরিক্ত না হওয়া। জীবনের সফলতার চেয়ে ব্যর্থতার গল্প অনেক বেশি। তাই আত্ম সমালোচনার মাধ্যমে প্রতিটি মুহূর্তে নিজেকে সংশোধনের প্রচেষ্টা করা। আল্লাহর কাছে বারবার ইস্তেগফার করা। জীবনের গুনাহ গুলো মাফ করে নেওয়ার চেষ্টা করা। আল্লাহর কাছে নিজেকে ক্ষুদ্র গোলাম হিসেবে তুলে ধরে বেশি বেশি কান্না করা।
আল্লাহ্ তায়ালা আমাদের সবাইকে বোঝার তাওফিক দান করুক। আমীন