বনু কাইনুকার বাজার। স্বর্ণ, রৌপ্য আর যাবতীয় ধাতুর দোকানগুলোতে রমরমা ব্যবসা চলছে। মদীনার ইসলামি রাষ্ট্রের প্রধান স্বয়ং নবীজী (সা) কিছু দিন হল বদরের বিজয় অর্জন করেছেন মক্কার কুরাইশ মুশরিকদের বিরুদ্ধে। মুসলিমরা খুব আনন্দিত। এক পর্দানশীল মুসলিমা গেলেন ইহুদী গোত্র বনু কাইনুকার বাজরে। বনু কাইনুকা নবীজী (সা) এর সাথে চুক্তিবদ্ধ এবং মদীনার ইসলামী রাষ্ট্রের নাগরিক। মুসলিমরা কখনোই তাদের স্বাভাবিক জীবন-যাপনে বাধা দেয় নি। অথচ সেই দিন ঘটে গেল এক ঘটনা। পর্দানশীল মুসলিমা এক ইহুদী স্বর্ণাকারের দোকানে গেলেন গহনা দেখতে। এক পর্যায়ে ইহদী স্বর্ণাকারটি পর্দানশীল মুসলিমার নিকাবটি খুলে মুখ দেখাতে বলল। কিন্তু ওই মুসলিমা নিকাব খুলতে রাজি হলেন না।
.
.
এতে ইহদী বদমাশটি মনোক্ষুণ্য হল। যেভাবে এযামানায় কুফফার গোষ্ঠিগুলোর মুসলিমাদের নিকাব নিয়ে চুলকানী আছে, বুঝা গেল যে নবীজী (সা) এর যুগেও তেমন চুলকানী ছিল। কারণ যখন একজন মুসলিমা নিকাব করে, এবং কাফির-মুনাফিকেরা তার দিকে কোন কু-নযর দিতে পারে না, তখন তা কাফির-মুনাফিকদের অন্তরে জ্বালা-পোড়া সৃষ্টি করে। কু-নযরের বিষে তাদের হৃদয়েই বিষক্রিয়া হয়, মস্তিষ্ক আরো বিকৃত হয়ে যায়। যার প্রভাবে তাদের চুলকানীর সৃষ্টি হয়। এবং তারা বিভিন্ন ষড়যন্ত্র আর আঘাতের জন্য সর্বদা মুখিয়ে থাকে। কারণ একজন মুসলিমার সম্মান সারাবিশ্বের সকল ধন-সম্পদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ বলা যায়। আর এতে আঘাত আনতে পারা শয়তানের জন্য যথেষ্ঠ খুশির ব্যাপার।
.
.
তো সেই ইহুদীটিও কুবুদ্ধি আটলো। সেই বোনটি যখন চেয়ারে বসে ছিলেন, তখন সুযোগ বুঝে তার পোষাকে পেরেক মেরে দেয়া হল। তাই যখনই বোনটি উঠে দাড়লেন, তখন তার পোষাক ছিড়ে পর্দা নষ্ট হয়ে গেল । কত বড় স্পর্ধা সেই ইহুদীর!! স্বয়ং নবীজী (সা) এর যামানায়, সাহাবাদের তৈরী করা ইসলামী রাষ্ট্রে সকল নাগরিক সুবিধা ভোগ করার পরও সে একজন সম্মানিতা পর্দানশীল মুসলিমার সাথে এত বড় অনাচারটি করল। নূন্যতম ঈমানওয়লা কোন মুসলিমও এই অপমান মেনে নিতে পারে না। তাই যখন আমাদের বোনটি আত্মনার্দ করে উঠল, তখন সেই বাজারেই থাকা এক মুসলিম যুবক সাড়া দিল। তরবারী কোষমুক্ত করে এক কোপে ইহুদী স্বর্ণকারে মস্তক ধড় থেকে আলাদা করে ফেলা হল। কারণ, যারা মুসলিমাদের অসম্মানিত আকাঙ্ক্ষা রাখে তাদের জীবিত থাকার অধিকার নেই।
.
.
এরপর বাজারে থাকা সেই ইহুদী স্বর্ণাকারের ইহুদী মিত্ররা সেই মুসলিম যুবককে সেখানেই হত্যা করে ফেলল। কতই না সম্মানের এই মৃত্যু। যখন এই খবর নবীজী (সা) এর নিকট পৌছল, তিনি বনু কাইনুকাকে সেই হত্যাকান্ডে জড়িত থাকা ইহুদীদের রাষ্ট্রের হাতে তুলে দিতে বললেন, এবং রাষ্ট্র প্রধান হিসেবে বিচারের দায়িত্ব তার হাতেই ছেড়ে দিতে বললেন। কিন্তু বনু কাইনুকা তা করতে রাজি না হয়ে উল্টো চুক্তি ভঙ্গ করে বিদ্রোহ করল। মুসলিমরা ইহুদী বনু কাইনুকা গোত্রকে অবরোধ করলো। দুই সপ্তাহ অবরোধের পর তারা বাধ্য হয়ে আত্মসমর্পণ করলো। এরপর নবীজী (সা) তাদের শাস্তি হিসেবে তিনদিন সময় দিলেন মদীনা ছেড়ে চলে যাবার। এটাই ছিল মুসলিমদের সাথে ইহুদীদের প্রথম কোন সংঘর্ষ, যা শুরু হয়েছিল কুরুচিপূর্ণ ইহুদীর এক নিকাবী মুসলিমার চেহারা দেখতে চাওয়ার খায়িশ থেকে।