অপারেশন মাইন্ডফ্রেম

হামজা জর্জিস

অপারেশন মাইন্ড ফ্রেম” বলতে আমরা কি বুঝি?

 “অপারেশন মাইন্ড ফ্রেম” হল ইসলামের উপর মতাদর্শিক আক্রমণ। আর এটা নিঃসন্দেহে ঘটছে।

সমাজবিজ্ঞানী  ও শিক্ষাবিদ তারিক মওদুদ তার বইয়ে ধর্ম এবং ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে একটি ভালো পয়েন্ট তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন যে, “একটা মুসলিম বিদ্বেষী হাওয়া সারা ইউরোপজুড়ে বইছে।” আর এই বিদ্বেষ যে শুধু ব্যাক্তি পর্যায়ে, এমনটা নয়। যদিও অনেকেই ব্যক্তিগতভাবে বর্ণবাদী বা কোন কিছুর প্রতি অন্ধবিশ্বাসী হয়ে ওঠে। কিন্তু উল্লেখযোগ্যভাবে এই বিদ্বেষ বা নেতিবাচকতা শুরু হয় মতাদর্শিক স্তর থেকে।

মতাদর্শ বলতে আমরা কি বুঝি?

মতাদর্শ বলতে আমরা বুঝি চিন্তাধারার একটি নির্দিষ্ট কাঠামো যেটি একজন মানুষকে একটি বিশেষ নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে পুরো বিশ্বকে দেখতে বা মোকাবেলা করতে শেখায়। এই মতাদর্শিক কাঠামো একজন মানুষের নৈতিকতা, মূল্যবোধ, রাজনৈতিক দর্শন, ব্যক্তিগত বা সামাজিক আচরণ – সবকিছুই গঠন করে দেয়। এটা একজন মানুষের একটি নির্দিষ্ট ওয়ার্ল্ড ভিউ বা পুরো বিশ্বের প্রতি নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করে দেয়। এই ওয়ার্ল্ড ভিউ অনেকটা চশমার মত। কেউ যদি লাল রঙের কাঁচওয়ালা চশমা পড়ে, তবে সবকিছু লাল দেখাবে। আবার যদি হলুদ বা সবুজ কাঁচওয়ালা চশমা পড়লে হলুদ বা সবুজ দেখাবে। ওয়ার্ল্ড ভিউও ঠিক এভাবে কাজ করে যার মাধ্যমে একজন মানুষ পুরো বিশ্বের সবকিছু দেখে।

এখন, কেন এই মতাদর্শিক আক্রমণ ?

যখন কোন আক্রমণ মতাদর্শিক স্তর থেকে আসে, তখন আসলে ভিন্নমতাদর্শের সাথে সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে পড়ে। কারণ প্রতিটা মতাদর্শই আপনা আপনি নিজেকে অন্য মতাদর্শ থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করে। হোক সে আক্রমণ ইসলামের উপর বা কমিউনিজমের উপর। ইতিহাসের বিভিন্ন সভ্যতার দন্দের মধ্যেও আমরা এমনটা দেখতে পাই। সেখানেও মতাদর্শিক আক্রমণ ছিল। আর সেক্যুলার লিবারেলিজম বা ধর্মনিরপেক্ষ উদারতার মত মতাদর্শগুলো এখন শুরু হয় প্রাতিষ্ঠানিক পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে। কোন নির্দিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা শিক্ষা ব্যবস্থা, বিভিন্ন সংগঠন এমনকি কোন রাষ্ট্রের মাধ্যমেও। পরবর্তীতে তা ব্যক্তি পর্যায়ে ছড়ায়। 

উদাহরণস্বরুপ ধরা যাক, চার্লস ডারউইনের বিবর্তনবাদ তত্ত্ব। নিঃসন্দেহে এই তত্ত্ব অন্ধবিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিত যার কোন ভিত্তি বা যৌক্তিকতা নেই। কিন্তু এই তত্ত্বকে ধর্মনিরপেক্ষ বা নাস্তিকরা সমর্থন করে। কারণ বিবর্তনবাদও ধর্মনিরপেক্ষতার দার্শনিক ভিত্তিকে সমর্থন করে যা সামাজিক বিষয়গুলি থেকে সৃষ্টিকর্তাকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এই বিবর্তনবাদ তত্ত্ব পশ্চিমা শিক্ষা ব্যবস্থায় ধর্মনিরপেক্ষতা বা নাস্তিকতার বীজ ছড়িয়ে দিতে মিরাকলের মত কাজ করেছে। এই তত্ত্ব প্রথমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষা দেয়া শুরু হয় এবং একজন সাত বছরের শিশুও তখন এই তত্ত্বের বিষয়টি আত্মস্থ করতে শুরু করে। পরবর্তীতে পশ্চিমা শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রত্যেক মানুষের মাঝে এই তত্ত্বের কারণে সৃষ্টিকর্তা নিয়ে সংশয় বা নাস্তিকতা ছড়িয়ে পড়ে। ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো ঠিক এভাবেই বিভিন্ন মত তাদের মাধ্যমে পুরো সমাজে ছড়িয়ে দেয়। বিবর্তনবাদ তত্ত্ব তার অন্যতম উদাহরণ।

ইংল্যান্ড বা অ্যামেরিকাতে এখনও এই তত্ত্বের বিকল্প নেই। এর ভিন্নমতের কোন মানুষকে সেঁকেলে ভাবা হয়, ভাবা হয় তদের কোন বুদ্ধিমত্তা নেই, তারা গবেষণা-অণুসন্ধান করতে জানে না, প্রকৃতির আন্তঃ সংযোগকারী নীতিগুলি নিয়ে তাদের কোন ধারণা নেই, তারা ধর্ম নিয়ে, অযৌক্তিক কাজ নিয়ে পড়ে আছে ইত্যাদি ইত্যাদি। এভাবেই মতাদর্শ মানুষের মধ্যে কাজ করে।

আবার ধরুন ফ্রীডম অব স্পীচ বা বাক স্বাধীনতা। এটিও একটি মতাদর্শিক হাতিয়ার। মুসলিমরাও বাক স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ বা নিষেধাজ্ঞা বিশ্বাস করেনা। কিন্তু আসলেই বাক স্বাধীনতা বলতে যা বোঝানো হয় তেমনটা কি হয়ে থাকে? বাক স্বাধীনতা সব সময়ই অন্যান্য কোন না কোন আইন দ্বারা অস্বীকৃত হয়। যেমন পশ্চিমা বিশ্বেই বাক স্বাধীনতার বিপরীতে মানহানি আইন, পণ্য আইন, বিদ্বেষমূলক বক্তৃতার বিরুদ্ধে আইন ইত্যাদি রয়েছে। সুতরাং তাদেরও কথা বলার বিধিনিষেধ আছে। ইসলামেও মুসলিমদের কথা বলার উপর বিধি নিষেধ রয়েছে। আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলা মিথ্যা কসম করতে নিষেধ করেছেন কুর’আনে। তিনি অশ্লীল কথা বা মন্দ কথার উচ্চারণ পছন্দ করেন না। তাই মুসলিমদের যেগুলো আইন রয়েছে,  সেগুলো আরো বেশি গভীর ও বাস্তবসম্মত। এখানে কিন্তু বিশেষভাবে বাক স্বাধীনতার কথা বলা হয়নি।

বাক স্বাধীনতার একটি আরো সুসংগত সংজ্ঞা তৈরি করা যাক। বাক স্বাধীনতা বলতে আসলে বোঝায় যে কোন ব্যক্তি কথা বলতে পারবে তার সমাজের প্রচলিত আইন এবং মূল্যবোধের ভিত্তিতে। আর সমাজও তার নিজস্ব মূল্যবোধের বিরুদ্ধে যায় এমন কিছু বলবে না। এখানে আলোচ্য বিষয় আসলে ফ্রীডম অব স্পীচ বা বাক স্বাধীনতায় আমরা বিশ্বাস করি কিনা এই নিয়ে হওয়া উচিত নয়। আলোচ্য বিষয় হওয়া উচিত কোন আইন এবং কোন মূল্যবোধের ভিত্তিতে বাক স্বাধীনতা নির্ধারণ করা হয়? কিন্তু এই আলোচনা কখনই হয় না। কেন হয় না? কারণ, তাদের একটা মতাদর্শিক প্রেক্ষাপট রয়েছে এর পেছনে। মুসলিমদের সাথে মতাদর্শিক মিল না থাকায় বাক স্বাধীনতাকে তারা মুসলিমদের অপমান করতে ব্যবহার করে। তারা নবী মুহাম্মাদ ﷺ , ঈসা (আঃ) এর ব্যঙ্গচিত্র আঁকাকে বাক স্বাধীনতা বলে। ইসলামকে অবজ্ঞা আর উপহাস করাকে তারা অধিকার মনে করে। মুসলিমরা বুদ্ধিবৃত্তিক মুক্ত আলোচনার পক্ষে। কিন্তু মতাদর্শিকভাবে সেক্যুলার লিবারেলিজম বা ধর্মনিরপেক্ষ উদারতার প্রেক্ষাপট থেকে এই আলোচনা কি আসলেই বুদ্ধিবৃত্তিক মুক্ত আলোচনা থাকে? নাকি আলোচনাও তার মতাদর্শের প্রভাবেই হয়। সেক্যুলার লিবারেলিজম সব সময়ই ধর্মকে একঘরে করে রাখতে চায়, ধর্মের যেন কোন কিছুই বলার নেই তাদের তথাকথিত বুদ্ধিবৃত্তিক পরিমণ্ডলে।

অ্যামেরিকা নিজেদের সফট সেক্যুলার কান্ট্রি হিসেবে দাবি করে। তারা বলে যে এখানে ধর্মের কথা বলার অধিকার আছে। কিন্তু বাস্তবে তা নেই। প্রকৃতপক্ষে সেখানে পুঁজিবাদ, নব্য-উদারতার অর্থনৈতিক নীতিগুলোর শুধু কথা বলার অধিকার আছে। এটা আসলে ফাঁকিবাজি বা চালাকি। এটা ধুম্রজাল। তাদের এই মতাদর্শিক হাতিয়ার – বাকস্বাধীনতা তথা অপমান করার স্বাধীনতা আসলে নিজেই বাক স্বাধীনতার মূল ও আসল উদ্দেশ্যের পরিপন্থী।

এখন দেখা যাক লিবারেলিজমের অন্যতম মুখপাত্র ইংরেজ দার্শনিক ও রাজনীতিবিদ জন স্টুয়ার্ট মিল যিনি নিজে সব সময় বাক স্বাধীনতা এবং নিজেকে প্রকাশ করার স্বাধীনতা নিয়ে সোচ্চার ছিলেন, তিনি এই বাক স্বাধীনতার উদ্দেশ্য নিয়ে কি বলেছেন? বাক স্বাধীনতার উদ্দেশ্য শুধুমাত্র স্বাধীন চর্চা নয়, এর উদ্দেশ্য হল সত্যকে খোঁজা, ব্যক্তিকে জবাবদিহিতা্র আওতাভুক্ত করা এবং সার্বিক উন্নতি সাধন। এটাই বাক স্বাধীনতার সর্বোচ্চ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। সংক্ষেপে সত্য, জবাবদিহিতা এবং অগ্রগতি। তাদের ভাষ্যমতে এসব অর্জন করতে স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকার থাকা প্রয়োজন। কিন্তু কাউকে অপমান করে কি এসব অর্জন করা সম্ভব? এটাই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।

ধরুন কাউকে আমরা কোয়ান্টাম ফিজিক্স শেখাতে যাচ্ছি। ক্লাসের শুরুতে তাকে আমরা তার মা-বাবা নিয়ে কোন খারাপ মন্তব্য করলাম কিংবা তার পোশাক-আশাক বা চেহারা নিয়ে কটুক্তি করলাম। আমরা কি সেই মানুষটাকে কোয়ান্টাম ফিজিক্স শেখাতে পারবো? অপমানমূলক কথাবার্তাগুলো কি কোন ভাবে তাকে কোয়ান্টাম ফিজিক্স শেখানোর যে আমাদের উদ্দেশ্য তার পক্ষে সহায়ক হবে? কখনই না!!! মনে করুন স্টিফেন হকিং মুসলিম ছাত্রদের একটি দলকে কোন পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন বের করে কোয়ান্টাম ফিজিক্স শেখাতে চাইল। আর সে শুরু করল খুব রাগান্বিত ভাবে মুসলিম সংস্কৃতিকে কটাক্ষ করে। তাহলে কতজন ছাত্র সেই প্রেজেন্টেশনে তাকে গুরুত্ব সহকারে নেবে? তার এই আচরণ কি শেখানোর কোন কার্যকরী পন্থা? না!! তাহলে এই বাক স্বাধীনতা তার অন্যতম উদ্দেশ্য অগ্রগতি বা উন্নতি সাধনে নতুন কিছু শেখার বিপরীতে যায়।

বাক স্বাধীনতার আরেক লক্ষ্য জবাবদিহিতা।

ধরুন, জর্জ বুশকে আমরা তার নৃশংসতার জন্য, ইরাকে হাজার হাজার নিষ্পাপ মানুষ হত্যার দায়ে জবাবদিহিতার জন্য বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করালাম। কিন্তু আমরা তার সাথে গালিগালাজ দিয়ে কথা শুরু করলাম, তাকে অপমান করলাম। এই আচরণ কি তাকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে সহায়ক হবে? এই ধরণের বাক স্বাধীনতা কি কোন কার্যকরী প্রক্রিয়া হতে পারে কাউকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে?

আবার আরেক উদ্দেশ্য হচ্ছে সত্য খোঁজা।

ধরুন কেউ ইসলামে নারীদের হিজাব পরিধান নিয়ে প্রশ্ন করবে মুসলিম কাউকে।

তাহলে সে বলতে পারে, ” তোমাদের ইসলাম ধর্মে হিজাব নিয়ে কি বলা হয়েছে? কেন তোমাদের নারীরা হিজাব পরে?” এটা খুবই সুন্দর ও ভদ্রভাবে জিজ্ঞাসার উদাহরণ। কিন্তু কেউ এসে যদি বলে, ” তোমরা তোমাদের নারীদের হিজাব পড়তে বাধ্য করো, তোমরা অসভ্য, বর্বর, মূর্খ। তোমরা তোমাদের নারীদের ঢেকে রাখো কারণ তারা সবাই দেখতে কুৎসিত”

এই ধরণের অপমানমূলক কথাবার্তা কি মুসলিমদের সংস্কৃতি জানতে ঐ ব্যক্তিকে সাহায্য করবে?

এই সব বাস্তব উদাহরণ থেকেই আমরা দেখতে পারি যে তাদের তথাকথিত বাক স্বাধীনতা যা আসলে অপমান করার স্বাধীনতা বাস্তবে বাক স্বাধীনতার উদ্দেশ্য -সত্য, জবাবদিহিতা এবং অগ্রগতির পরিপন্থী। তাহলে যারা শুধু শুধু বাক স্বাধীনতা দিতে হবে, দিতে হবে বলে চিৎকার করে, তাদের আসল উদ্দেশ্য কি? তাদের বাক স্বাধীনতা তাদেরই দেয়া বাক স্বাধীনতার সংজ্ঞার উল্টোদিকে যায়। বিশেষ করে পশ্চিমারা যখন সভ্যতার আলোচনা করে। তারা যখন ব্যঙ্গচিত্র এঁকে সভ্যতার পাঠ দিতে চায়। ব্যঙ্গচিত্র আঁকাই যেখানে একটা অসভ্য অভিব্যক্তি। তারা যদি ইসলামকে জানতে চায়, মুসলিমদের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে চায়, তাহলে অবশ্যই তাদের মুসলিমদের সাথে আলোচনায় বসতে হবে, কথা বলতে হবে। মুসলিমদের আদর্শিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে জানতে হবে। ইসলাম কিভাবে রাজনৈতিক সমস্যা কিংবা বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্যতা সমস্যার সমাধান দেয়? তারা কখনই মুসলিমদের সাথে এইসব ব্যাপারে আলোচনায় বসেনি। বরং তারা তাদের শিক্ষা বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে এবং বাক স্বাধীনতার মত বিভিন্ন মতবাদকে তীর্যকভাবে ব্যবহার করছে ধর্মকে বিশেষ করে ইসলামকে অপমান বা উপহাস করতে।

ফ্রান্সে একজন বিখ্যাত কার্টুনিস্ট ছিল। সে ফ্রান্সের বিখ্যাত ম্যাগাজিন – ল্যামবাস্টিং এ লেখালেখি করত। সে তৎকালীন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজির ছেলের টাকার বদলে বিয়ে করা নিয়ে লেখালেখির জন্য চাকরিচ্যুত হয়। আর এই ঘটনা প্রকাশ করাও হয় না। তাহলে দেখা যাচ্ছে রাজনৈতিক স্পর্শকাতর বিষয়ের জন্য বাক স্বাধীনতা নেই। এখানেই লক্ষ্য করুন তাদের ভন্ডামি আর দ্বিমুখিতা। আবার অন্যদিকে একবার কিছু সংবাদপত্র ইহুদী ঐতিহ্য, খ্রীস্টান ঐতিহ্য নিয়ে কিছু কার্টুন বানালো। কিন্তু তারা এটাকে নিষেধ করল। কেন? কারণ এই কার্টুন ইহুদী বা খ্রীস্টানদের অপমান বোধ করাবে। তাহলে এখানেও তাদের সেই বাক স্বাধীনতা কোথায় গেল? তাদের দ্বৈত আচরণের এরকম আরো অনেক উদাহরণ রয়েছে যেভাবে তারা এই বাকস্বাধীনতাকে তাদের মতাদর্শিক কাঠামোর পক্ষে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। কিন্তু বর্তমানে দুর্ভাগ্যজনক ভাবে কিছু নামমাত্র মুসলিমও কিছু না বুঝে এই বাক স্বাধীনতাকে সমর্থন করে। কোন আইন আর কোন মূল্যবোধের ভিত্তিতে এই বাক স্বাধীনতার কাঠামো দাঁড়ানো তা না খূঁজে আমাদের মানসিকতা যেন এমন হয়ে গেছে যে তাদের এইসব মতবাদের সাথেই আমাদের মানিয়ে চলতে হবে।

একইভাবে আরেক ধরণের আমাদের মুসলিম নারী রয়েছে, বিশেষ করে পশ্চিমা দেশ গুলোতে। যারা হিজাব নিয়ে কথা বলেন। তারা বলেন যে, “আমি হিজাব পড়ি, কারণ এটি আমার স্বাধীন ইচ্ছা”। এটাও এক ধরণের লিবারেলিজম বা উদারতাবাদ। কিন্তু আসলে স্পষ্টভাবেই মুসলিম নারীরা কি স্বাধীন ইচ্ছায় হিজাব পরিধান করে? যদিও তাদের স্বাধীন ইচ্ছা রয়েছে। না!! মুসলিম নারীরা হিজাব পরিধান করে আল্লাহ সুবহানাহু তা’লার আনুগত্য প্রকাশ করে, স্বাধীন ইচ্ছার কারণে নয়। দুটো ক্ষেত্রে বিশাল ভিন্নতা রয়েছে। এখন মুসলিমরা যদি উল্লেখিত বোনদের হিজাব পড়াকে ব্যক্তির স্বাধীন ইচ্ছা হিসেবে সম্মতি প্রদান করেন, তাহলে নারীদের ছোট পোশাক পড়াকে বা উলঙ্গ হয়ে বেড়ানোকে স্বাধীন ইচ্ছা হিসেবে সম্মতি প্রদান করতে হবে। খেয়াল করে দেখুন এটা কিন্তু খুবই সূক্ষ বিষয়।

আরেকটু ইতিবাচক উপায়ে দেখা যাক। স্বাধীনতা শব্দটির কথা যদি নাও বলা হত এখানে, তারপরও তাদের মতাদর্শিক প্রেক্ষাপট পুরোটাই মিথ্যা। ফ্রীডম বা স্বাধীনতা শব্দটাই একটা মতাদর্শিক শব্দ। লিবার্টি – ফ্রীডম, মুক্তি – স্বাধীনতা এগুলো খুব ভারী শব্দ পশ্চিমা বিশ্বে।

এখন আমাদের বুঝতে হবে এই ফ্রীডম বা স্বাধীনতা বলতে আমরা কি বুঝি? স্বাধীনতা বলতে যদি আল্লাহর অবাধ্যতা করা বুঝায়, তাহলে এটা কখনই স্বাধীনতা নয়, এটা দাসত্ব। মুসলিমদের জন্য স্বাধীনতার সঙ্গা আলাদা। কিন্তু আমাদেরকে তাদের দেয়া এই স্বাধীনতার সঙ্গাও বুঝতে হবে। বুঝতে হবে কিভাবে ধর্মনিরপেক্ষ উদারনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের রক্ষা করতে চায় এবং তাদের সূক্ষ সূক্ষ মতবাদ মুসলিম সমাজে ছড়িয়ে দেয়। এর জন্য তারা তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবহার করে। আমরা দেখেছি যে কিভাবে তারা বিবর্তনবাদ, বাক স্বাধীনতা ইত্যাদি মতবাদ তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এর মাধ্যমে ছড়িয়েছে। এখন আমরা যদি তাদেরকে আমাদের মুসলিমদের প্রেক্ষাপটে স্বাধীনতার সঙ্গা দেই?

ধরা যাক একজন মুসলিম বোন হিজাব পড়া নিয়ে স্বাধীন ইচ্ছার পরিবর্তে বলছেন ” আমি আল্লাহর আনুগত্য প্রকাশে হিজাব পড়ি। আর আমার সৃষ্টিকর্তার প্রতি আমার আনুগত্যই আমাকে মুক্তি দেয়,

দুর্ভাগ্যবশত তোমরা দাসত্বের মধ্যে আছো, আমি মুক্তি পেয়েছি।”

লক্ষ্য করুন আমরা কেউই নিজেদের ইচ্ছামত কোন জাতি বা দেশের মধ্যে জন্মগ্রহণ করি না। একবার এক অ্যামেরিকান লেখক বলেছিলেন, “জন্মের পর আমরা অপহৃত হই এবং দাসত্বের কাছে বিক্রি হয়ে যাই।” এই দাসত্ব হল জাতিগত দাসত্ব। কোন মানুষেরই নিজস্ব পছন্দ করার ক্ষমতা থাকে না যে সে বাংলাদেশি হবে, নাকি ভারতীয় হবে, আফ্রিকান হবে নাকি অ্যামেরিকান ? 

একই ভাবে জন্মের সময় কোন ব্যক্তি ছেলে না মেয়ে হবে, কিংবা তার গায়ের রঙ ফর্সা না কালো হবে এই ব্যাপারে তার স্বাধীনভাবে পছন্দ করার ক্ষমতা নেই। এটা অসম্ভব।

প্রাসঙ্গিকভাবে, ন্যাশনালিজম বা জাতীয়তাবাদও আরেকটি মতাদর্শিক হাতিয়ার।

জাতীয়তাবাদ মুসলিমদের মাঝে কিভাবে এসেছে? অমুসলিমরা যারা মুসলিম ঐতিহ্যের কিছুই জানত না, যারা মুসলিম ঐতিহ্যকে অসম্মান করত এবং মুসলিম ভূমি আক্রমণ করে আমাদের মুসলিম ভাই-বোনদের উপর গ্ণহত্যা চালাত, তারা একদিন মুসলিম ভূমি গুলো দখল করে মানচিত্রে কয়েকটি লাইন আঁকল। আর এই লাইনগুলো আমাদের মুসলিমদের বলে দেয় যে আমরা কে কোন জাতির? বাংলাদেশি না ভারতীয়, পাকিস্তানি নাকি সীরিয় ? লেবানিজ নাকি জর্ডানি?

ওয়াল্লাহি, আমরা মুসলিমরা মাঝে মাঝে কত বোকার মত আচরণ করি। এই প্রেক্ষাপটে যে  জাতীয়বাদকে বিশ্বাস করে, সে আসলেই বোকার স্বর্গে বাস করছে। জাতীয়বাদকে যদি কেউ ধর্মের উপর প্রাধান্য দেন, ওয়াল্লাহি তাহলে সে সত্যিই হারিয়ে গেছে। এ বিষয়ে একটি হাদীস রয়েছে যে ” জাতীয়তাবাদ হচ্ছে নিজের পিতার গোপন অঙ্গকে কামড়ে ধরার মত।” কিছু ওলামা এই হাদীসের উদ্ধৃতি দিতে নিষেধ করেন। কিন্তু এই প্রসঙ্গে আমাদের এটি উল্লেখ করা উচিত। কারণ জাতীয়তাবাদ একটি ভয়ানক রোগ যেটি উম্মাহকে ধ্বংস করে দিয়েছে। ৫২ টি জাতিতে আজকে মুসলিমরা ভাগ হয়ে গেছি আমরা।

এখন আমাদের ক্ষান্ত হওয়া উচিত এবং দেখা উচিত যে ইসলাম কি বলে?

“মুমিনরা একে অপরের জন্য আয়না স্বরূপ” । কিন্তু আমাদের ভিতরটাই আজ কলুষিত হয়ে গেছে। আমাদের মুসলিম জাতিকে বিভক্ত করা তাদের মতাদর্শিক আগ্রাসনেরই একটি অংশ। এটা একটা কৌতুকের মত যে কিছু মানুষ মুসলিম ভূখন্ড গুলোকে কিছু লাইন এঁকে বিভক্ত করে ফেললো, আর আমরা মুসলিমরা এটা জানি ই না।

নিজ জাতি নিয়ে গর্ববোধ করা খারাপ কিছু নয়। সাহাবারাও করেছিলেন। কিন্তু এই জাতীয়তানাদকে যদি আপনি ধর্মের উপর প্রাধান্য দেন, তাহলে এটা বিপজ্জনক। এটা হারাম। এটা সকলের জন্য একটা সতর্কবার্তা। আমাদের সত্যটা উম্মোচন করতে হবে। সত্য তুলে ধরতে আমাদের পিছপা হওয়া যাবে না। আমরা জান-মাল কিংবা রিজিক নিয়ে ভয় করি। কিন্তু নবী ﷺ এক হাদীসে আমাদের বলেছেন, “হক কথা বলা তোমাদের জীবনকে সংক্ষিপ্ত করে দিবে না এবং এটি তোমাদের রিজিককেও ছিনিয়ে নিবে না”

আবার আমরা স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনায় ফিরে যাই। আমরা আমাদের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটকে বাছাই করে নিতে পারি না। এই দিক থেকে আমরা সকলেই আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটের একজন দাস। একই ভাবে আমরা যদি আমাদের শারীরিক প্রবৃত্তি এবং আকাঙ্ক্ষার আনুগত্য করি, তাহলে আমরা শারীরিক প্রবৃত্তি এবং আকাঙ্ক্ষারও একজন দাসে পরিণত হবো। এছাড়াও আমাদের উপর আমাদের যার যার সমাজ ও সামাজিক সংস্কৃতির প্রভাব রয়েছে যেটি আমাদের সকল কর্মকান্ডকে প্রভাবিত করে। এটাকেই সামাজিক গঠন বা একটি সামাজিক আদর্শের বিকাশ বলা হয়, যেটি আমাদের স্বভাব-আচরণকে প্রভাবিত করে। হোক সেটা পোশাক-আশাক পড়ার ক্ষেত্রে অথবা যে কোন কাজের ক্ষেত্রে। এর কারণ মানুষের নিশ্চয়তার প্রয়োজন হয়। মানুষ যখন কোন বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারে না, তখন সে সমাজে সেই বিষয়ে নিশ্চয়তার অনুসন্ধান করে এবং সমাজকেই অনুকরণ করে। তাহলে এখানেও দেখা যাচ্ছে যে আমরা সামাজিক চাপের দাসত্ব করি। আমরা আমাদের সামাজিক প্রেক্ষাপট সমূহের দাস, আমরা আমাদের আকাঙ্ক্ষার দাস।

ঠিক এই কারণেই একজন মুসলিমা সত্যিকার অর্থে মুক্ত। সে যখন আল্লাহর আনুগত্য প্রকাশে হিজাব পরিধান করে, তার চেয়ে মুক্ত আর কেউ থাকে না। কারণ সামাজিক চাপের কারণে, অহংকারবশত কিংবা কারও বলার পর সে হিজাব পড়ে নি, সে এটা পড়েছে একমাত্র আল্লাহ আযযা ওয়াজালের জন্য। যেটি উল্লেখিত সব কিছুকে ছাপিয়ে তাকে সত্যিকারের স্বাধীনতা দেয়।

মজার ব্যাপার হল “রূহ” শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত মূল “রহা” শব্দটির সাথে মিল রয়েছে। আরবি রহা শব্দের অর্থ মুক্তি বা স্বাধীনতা। তাই রূহ সবসময়ই স্বাধীনতা পেতে চায়। এবং এই স্বাধীনতা সে একমাত্র আল্লাহর উপাসনার মাধ্যমেই পেতে পারে। চতুর্দশ শতাব্দীর বিখ্যাত আলেম ইবনুল কাইয়্যুম (রহঃ) বলেন, ” আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলার প্রতি দাসত্ব করার মাঝেই একমাত্র সতিকারের স্বাধীনতা নিহিত রয়েছে”। কারণ আল্লাহ আমাদের সম্বন্ধে আমাদের নিজেদের চাইতেও বেশি জানেন। তাই যখন আপনি আল্লাহর দাসত্বের মধ্যে থাকবেন, আপনি তখন সত্যিকারের স্বাধীনতা উপভোগ করতে পারবেন। এখন আপনি যদি বলেন আমি আমার ইচ্ছায় হিজাব পরিধান করি, এটা কখনই আল্লাহর দাসত্ব নয়। এটা নিজের নফসের দাসত্ব।  এসব কিছুই নির্ভর করে আপনার দৃষ্টিভঙ্গির উপর। কিভাবে কোন চশমা দিয়ে আপনি দেখছেন, তার উপর।আমরা আত্ম অহংকার করে, সামাজিক চাপে, কিংবা পরিস্থিতির শিকার হয়ে যা কিছুই করি না কেন, তা একটি নির্দিষ্ট গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ। কিন্তু আমরা যখন পবিত্র আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলার দাসত্ব করি, তখন এটা আমাদেরকে দুনিয়ার সকল কিছু থেকে মুক্তি দেয় এবং আমরা সত্যিকারের স্বাধীনতা লাভ করি। এটা খুবই গভীর একটা বিষয়।

আমরা দেখলাম যে মতাদর্শগুলো কিভাবে নিজেদেরকে রক্ষা করে।

অপারেশান মাইন্ডফ্রেম এর এই মতাদর্শগুলো জনসমর্থন পেতে শিক্ষা ব্যবস্থা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যম ইত্যাদিকে ব্যবহার করে। আর খুবই দুর্ভাগ্যজনক ভাবে তারা বর্তমানে ইসলাম ধর্মের নিন্দা করে। আর এটা এখন রাজনৈতিক মতাদর্শের বহিঃপ্রকাশ হয়ে গেছে। তারা ইসলামী শরীয়াহ আইনের নিন্দা করে। এমনকি কিছু তথাকথিত মুসলিমদের দলও আছে যারা ইসলামী শরীয়াহ আইনকে ছোট করে দেখে। লিবারেল মুসলিম ফোরাম, ব্রিটিশ মুসলিম ফর সেক্যুলার ডেমোক্রেসি ইত্যাদি নামে এরকম অনেক মুসলিম দল রয়েছে। তারাও পশ্চিমাদের সাথে সুর মিলিয়ে বলে যে শরীয়াহ আইন হচ্ছে সেঁকেলে, এই আইন আমাদের পিছিয়ে নিয়ে যাবে। এটা কিন্তু একটা মতাদর্শিক পদক্ষেপ। কারণ সেক্যুলারিজম বা ধর্মনিরপেক্ষতা শরীয়াহ আইনের বাস্তবায়ন চায় না, কেননা শরীয়াহ আইন ধর্মনিরপেক্ষতা বিরোধী। সেক্যুলারিজম কখনই চায় না যে সবকিছুর উপর আল্লাহর আইন ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা হোক।

মজার ব্যাপার হল তারা যখন শরীয়াহ আইনের কথা বলে তখন তারা শরীয়াহ বলতে শুধু হুদুদের কথাই বোঝায়। শরীয়াহ আইন অনগ্রসরদের জন্য, এ আইন বর্বর, তোমরা চুরির অপরাধে হাত কেটে দাও, তোমরা ব্যাভিচারীকে পাথর মেরে হত্যা করো, তোমরা বদমেজাজী ইত্যাদি ইত্যাদি। এসবই শরীয়াহ আইনের একটা অংশ –  হুদুদের অন্তর্ভুক্ত। তারা শরীয়াহ অন্যান্য বিষয়, যেমন – ইসলামিক অর্থনীতি, সামাজিক লেনদেন, যাকাত, দারিদ্রতার মোকাবেলা, প্রতিবেশির সাথে সদাচরণ বা আত্মীয় স্বজনদের দেখভাল করা, আধ্যাত্মিকতা এই সব কিছুই উপেক্ষা করে। শরীয়াহ আইন শুধু ঐ মুষ্টিমেয় শাস্তিগুলোই।

ওয়াল্লাহি, তাদের এই মতাদর্শিক প্রেক্ষাপট ও আক্রমণেরই অংশ হিসেবে পশ্চিমা বিশ্বে বিভিন্ন সময় তারা শরীয়াহ আইন নিয়ে ব্যঙ্গচিত্র বা কার্টুন বানিয়েছে। স্কাই নিউজ, ফক্স নিউজ, সি এন এন এর মত টিভি চ্যানেলগুলোতে তারা এসব সম্প্রচার করেছে। তারা একবার এরকম একটা কার্টুন বানিয়েছিল যেখানে দেখা যায় যে একটা সুপারমার্কেটের সামনে কালো থোব পড়া বিশাল দাঁড়ি ওয়ালা একজন মুসলিম পুরুষ দাঁড়িয়ে আছে। তার সাথে শুধু চোখ দেখা যাচ্ছে এমন নিকাব পড়া আরেকজন মুসলিম নারী দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ একটা গরীব ক্ষুধার্ত ছেলে সুপার মার্কেটের একটা কুকিজের দোকান থেকে একটা কুকি চুরি করে দৌড়ে পালাতে লাগল, তখনই সেই মুসলিম পুরুষ তাকে ধরে ফেলল এবং সাথে সাথে নিকাবী মহিলাটা তার বোরখার ভেতর থেকে তরবারী বের করে আল্লাহু আকবার বলে ছেলেটির হাত কেটে দিল। ওয়াল্লাহি, শরীয়াহ নিয়ে এরকম কার্টুন তারা তাদের গণমাধ্যম গুলোতে প্রকাশ করে। তারা কুর’আন এবং সুন্নাহর গভীর নিরপেক্ষ আইনি দর্শন নিয়ে এরকমভাবে ব্যঙ্গ করে।

প্রকৃতপক্ষে শরীয়াহ আইন, ইসলামের রাজনৈতিক এবং সামাজিক মতাদর্শ তাদের মতাদর্শগুলো থেকে অনেক অনেক বেশি গভীর ও বাস্তবসম্মত। এর অনেক গুলো কারণ রয়েছে। প্রথম কারণ হচ্ছে আধ্যাত্মিক দৃষ্টিকোণ থেকে আমাদের ভিত্তি, আক্বীদাহ, বুদ্ধিবৃত্তিক বুনিয়াদগুলো সত্য। অন্যদিকে ধর্মনিরপক্ষতা বা ধর্মনিরপেক্ষ উদারতার উত্থানই হয়েছে আপোস বা বোঝাপড়ার মাধ্যমে।  এর উত্থান কোন সত্য বা দার্শনিক ধারণা থেকে হয় নি। 

ষোড়শ শতাব্দীতে ক্যাথলিক চার্চগুলো তাদের ঐতিহ্য বা প্রথার বিরুদ্ধে যায় এমন যে কোন ধরণের মতাদর্শ, ধারণা, চিন্তাকে দমন করতে রাষ্ট্রের ব্যবহার করত। এক সময় চার্চের বিভিন্ন অপকর্ম, দুর্নীতি, ধর্মের অপব্যাখ্যা ও অপব্যবহারের ধারাবাহিকতায় মার্টিন্ লুথারের নেতৃত্বে ক্যাথলিক চার্চ বিরোধী প্রটেস্ট্যান্ট রিফরমেশানের সূচনা হয়। এর কিছু দিন পর থেকেই সেক্যুলারিজম বা ধর্মনিরপেক্ষতার দানা বাঁধা শুরু হয়। রিফরমেশানের পর থেকে ধর্ম নিয়ে জনমনে একটি নির্দিষ্ট ধারণা গড়ে উঠতে শুরু করে। কারণ এই সময়ে ধর্মীয় যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে তারা একে অপরকে হত্যা করছিল। তাই তখন তারা সবাই সমঝোতায় বসে এবং সিদ্ধান্ত নেয় যে ধর্মকে তারা ব্যক্তিগত পর্যায়ে শুধু পালন করবে এবং সমাজের অন্য সব জায়গা থেকে ধর্মকে সরিয়ে সেসব নিয়ে তারা ধর্মনিরপেক্ষ প্রেক্ষাপট থেকে নতুন করে আইন বানাবে। ধর্মকে রাজনীতি, অর্থনীতি, জন জীবন সবকিছু থেকে আলাদা করা হয়। এর ফলে সামাজিক জীবনে ধর্মের প্রভাব কমতে থাকে। এটাই ছিল সেই বোঝাপড়া। সুতরাং সেক্যুলারিজম খুবই দুর্বল ভিত্তির উপর দাঁড়ানো। 

রাজনৈতিক তত্ত্বের বিভিন্ন অধ্যাপকও এর ভিত্তিকে খুবই দুর্বল উল্লেখ করেছেন। অস্ট্রেলিয়ার কুইনসল্যান্ডের রাজনৈতিক তত্ত্বের একজন অধ্যাপক একবার বলেছিলেন, ” সেক্যুলার লিবারেলিজম বা ধর্মনিরপেক্ষ উদারতা এসেছে খুবই অগভীর, সীমিত দৃষ্টিকোণ এবং সীমিত ঐতিহাসিক অনুশীলন থেকে। তাহলে আমরা কিভাবে বলতে পারি যে এটি সকলের জন্য প্রযোজ্য?” সেক্যুলার লিবারেলিজম একটা ইউরোপীয় পণ্য। কারণ ইউরোপের ক্যাথলিক চার্চগুলো অন্য চিন্তা-চেতনার উপর সীলমোহর মেরে দিত। ইউরোপেই তার প্রেক্ষিতে প্রথম ধর্মনিরপেক্ষ উদারতার উৎপত্তি হয়। তাহলে কেন আমরা এমনটা ভাবি যে ধর্মনিরপেক্ষ উদারতা বিশ্বের অন্যান্য জায়গার জন্যও প্রযোজ্য হবে।

অপরদিকে ইসলাম কখনই একটা অগভীর ভিত্তি থেকে আসে নি। আমরা আমাদের সকল ভিত্তিকে বাস্তবে প্রমাণ করে দেখাতে পারবো। সত্য থেকে যা আসে তা সত্যই হয়। যেই গাছের মূল শক্তিশালী, সেই গাছের ফলও সুমিষ্ট সুন্দর হয়। আল্লাহর পক্ষ থেকে যা আসে, তা সবসময়ই সত্য। হযরত মুহাম্মাদ ﷺ একজন সত্য নবী এবং তার উপর অবতীর্ণ কুর’আন একটি মিরাকল বা অলৌকিক বই। আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলা সূরা বাকারার ২৩ তম আয়াতে বলেন,

“আর আমি আমার বান্দার প্রতি যা অবতীর্ণ করেছি সে সম্পর্কে যদি তোমরা সন্দেহে থাক, তাহলে এর মত একটি সূরা তৈরি কর এবং আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের সাহায্যকারীদের ডাক, যদি তোমরা যা বল তা সত্য।”

মানবজাতির জন্য এটা একটা বুদ্ধিবৃত্তিক চ্যালেঞ্জ।

আমরা আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলার অস্তিত্ব সম্পর্কে জানি। আমরা মহাবিশ্বের সূচনা সুম্পর্কে, এর অনন্ত কারণ এবং নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানি, যেগুলো ইসলামে বর্ণিত স্রষ্টা বা সৃষ্টির ধারণার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। তাহলে আল্লাহ সুবহানাহু যদি সত্য হন, তার রসুল মুহাম্মাদ ﷺ যদি একজন সত্য নবী হন, তার অবতীর্ণ পবিত্র গ্রন্থ কুর’আন যদি সত্য হয় তবে তাহলে তাদের থেকে নির্গত সব কিছুই সত্য হবে। সত্যের উপর ভিত্তি করে কোন কিছু গড়ে উঠলে সেই জিনিসও সত্য হবে। এই ধারণা এমনকি পশ্চিমা দর্শনেও পরিচিত, যাকে জ্ঞানমূলক ভিত্তি বলা হয়। 

তাই আধ্যাত্মিকভাবে আমরা প্রমাণ করতে পারি যে, শরীয়াহ আইন সেক্যুলার যে কোন আইনের চেয়ে উত্তম। এমনকি আমাদের আইনে কি বলা আছে তা নিয়ে আলোচনারও প্রয়োজন নেই, কারণ আমরা জানি এই আইন কোথা থেকে এসেছে।

এছাড়াও ইসলামিক রাজনীতি এবং শরীয়াহ আইন নিয়ে আমাদের মুসলিমদের প্রকৃত দর্শন ও দৃষ্টিভঙ্গিকে আরো স্পষ্ট করা উচিত। কারণ তারা শরীয়াহর হুদুদ বাস্তবায়নকে বর্বর, অমানবিক হিসেবে তুলে ধরে। এর পেছনেও আসলে অনেক বড় হিকমাহ রয়েছে। 

শরীয়াহ আইনে মুসলিম সমাজের সবকিছুর জন্যই একটি বিস্তারিত সামাজিক মডেল রয়েছে। 

উদাহরণস্বরূপ, মুসলিম সমাজের প্রথম ভিত্তি হচ্ছে যে মুসলিমদের সমন্বিত মূল্যবোধ রয়েছে। একটি উদার ধর্মনিরপেক্ষ সমাজে যার কোন অস্তিত্ব নেই। বিখ্যাত কানাডিয়ান দার্শনিক ও অধ্যাপক উইল কিমলিকা, চার্লস টেইলর প্রমুখের বই এ তারা উল্লেখ করেছেন যে, “উদার ধর্মনিরপেক্ষ সমাজে ভালোভাবে জীবন যাপনের কোন ধারণা আপনি পোষন করতে পারবেন না। আপনি ভালো মূল্যবোধ প্রচার করতে পারবেন না।” কারণ তারা মনে করে যে, মানুষ এই সুযোগ পেলে বাজারের মত একটি জায়গায় একত্রিত হবে এবং আলোচনায় বসবে যে তাদের কোন মূল্যবোধগুলো অনুসরণ করা উচিত, আর কোনগুলো করা উচিত নয়।

ধর্মনিরপেক্ষ উদার সমাজের সমস্যাটা হল এর পুঁজিবাদী মনোভাব। পুঁজিবাদী মনোভাবের কারণে আত্মকেন্দ্রিকতা বা অত্যধিক লোভী হওয়ার মত সূক্ষ বিধ্বংসী মূল্যবোধগুলি আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতা করা বেড়ে যায় অন্যান্য মূল্যবোধগুলোকে গুরুত্ব দেয়ার চেয়ে। এখানে সবচেয়ে ধনী পুঁজিবাদী ব্যক্তি আপনার মূল্যবোধকে ঠিক করে দেয়। এই জন্যই সরকার সুন্দর ও উত্তমভাবে জীবন যাপনের ধারণা সম্বন্ধে আপনাকে কিছু বলে না।

অপরদিকে ইসলাম আপনাকে সমন্বিত মূল্যবোধের কথা, সুন্দরভাবে জীবন যাপনের বিষয়গুলো স্পষ্ট করে বলে। একমাত্র ইসলামেই জোর দিয়ে ন্যায় বিচার, ক্ষমা, দয়া, সহনশীলতা ইত্যাদির কথা বলা হয়। এবং ইসলামেই এই মূল্যবোধগুলোর প্রচার করা হয়। রাজনৈতিক তত্ত্ব গবেষণায়ও দেখা যায় যে ধর্মনিরুপেক্ষতা এবং উদারতা আপনাকে শুধুই নৈতিক শূণ্যতা উপহার দিবে। জো বাইডেন, ট্রুডো, বরিস জনসন, ম্যাক্রন বা অন্যান্য পশ্চিমা নেতাদের শেষ কবে ন্যায় বিচার, ক্ষমা, দয়া, সমন্বয়, সহিষ্ণুতা ইত্যাদি নিয়ে কথা বলতে শুনেছেন? তারা সবসময় তাদের মতাদর্শিক স্তর থেকে কথা বলে। তাদের মতাদর্শিক মূল্যবোধ যেমন – মুক্তি, স্বাধীনতা, সুখের সাধনা এই সব নিয়ে কথা বলে। এর উপর ভিত্তি করেই তাদের পুরো প্রচারণা।

মুসলিম সমাজে অন্যায় প্রতিরোধ করার ব্যবস্থা আছে। কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষ উদার সমাজে আপনি প্রায় যা খুশি তাই করতে পারবেন যতক্ষণ না আপনি অন্য কাউকে আপনার কর্মকান্ড দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ করছেন। এটি খুবই নীচু ও ঘৃণ্য দর্শন। আপনি কিভাবে বলতে পারেন যে আপনার কুৎসিত অহংকারী মনোভাব কাউকে ক্ষতিগ্রস্থ বা প্রভাবিত করছে না?

মুসলিম সমাজের আইন অনুযায়ী মুসলিম কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই সমাজের সকলের খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থান সুনিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু পশ্চিমা বিশ্বে এর বিপরীত চিত্র দেখা যায়। সেখানে অনেক গৃহহীন ক্ষুধার্ত মানুষ রয়েছে, বিশেষ করে যদি তারা রক্ষণশীল হয়। তাহলে মুসলিম সমাজে কর্তৃপক্ষের দ্বারা যদি সকলের খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থান সুনিশ্চিত হয়, তবে কেউ খাবারের জন্য চুরি করবে না।

আবার পশ্চিমা বিশ্বের বিজ্ঞাপনের কথা ধরা যাক। তারা তাদের বিজ্ঞাপনগুলোতে অবাধে নারীদের ব্যবহার করে থাকে। নারী দের আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করে বিভিন্ন পণ্যের বিজ্ঞাপনে। বিভিন্ন ম্যাগাজিনে নারীদের ফটোশপে পরিবর্তিত নিঁখুত ছবি উপস্থাপন করা হয়। এখন সাধারণ একজন নারী এই ছবি দেখে প্রভাবিত হয় এবং নিজেও এমন হওয়ার চেষ্টা করে, বাস্তবে যা সম্ভব নয়। আমাদের মুসলিম সমাজও এখন বিজ্ঞাপন ও ম্যাগাজিনের গ্ল্যামার দ্বারা প্রভাবিত। বিশেষ করে এশিয়ায়। ব্রিটিশ উপনিবেশ বর্তমানে না থাকলেও মানসিকভাবে আমরা এখনও উপনিবেশবাদ দ্বারা শাসিত। বিয়ে করতে গেলে এখানকার মানুষেরা ম্যাগাজিনের নকল ছবির গ্ল্যামারের সাথে মিল খুঁজে ফর্সা মেয়ে খুঁজে। ফেয়ার অ্যান্ড লাভলীর মত নাম নিয়ে ধোঁকাবাজি করা বিভিন্ন তথাকথিত ত্বক ফর্সা করা ফেয়ারনেস ক্রীম এর মার্কেটিং এবং জনপ্রিয়তা সেজন্য এই এশিয়াতেই শুধু সম্ভব হয়। ইসলামে এমন ধোঁকাবাজি করা হারাম। কোন জিনিসকে রঙ চং মাখিয়ে মানুষের সামনে তুলে ধরা, কোন পণ্যকে চালাকি করে বিক্রি করা, ক্রেতাকে কিনতে প্রভাবিত করা – হারাম ইসলামে। এভাবে ইসলামী আইন মুসলিম সমাজে অন্যায় নিয়ন্ত্রণ করে, প্রতিরোধ করে।

অ্যামেরিকা এখন ছেলে-মেয়েদের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করছে। কারণ এতে বিশ্ববিদ্যালয় গুলো আরো সফলতা অর্জন করবে। আর অপরদিকে কাতার ছেলে-মেয়েদের জন্য নতুন করে সহশিক্ষা সম্বলিত বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করছে। আমরা মুসলিমরা আসলে এখন পশ্চিমাদের দ্বারা মানসিকভাবে শাসিত হচ্ছি।

আর আল্লাহ আযযা ওয়াজাল কুর’আনুল কারীমে আমাদের কি বলেছেন?

“যিনার কাছেও যেও না” 

কাছেও যেও না এর অর্থ কী? – এর অর্থ হারামের দিকে পা বাড়ানোও হারাম। তাই, আমাদের কাছে আল্লাহ প্রদত্ত এই আইনগুলো রয়েছে যেগুলো ধর্মনিরপেক্ষ উদার সমাজে নেই। এছাড়াও আমাদের একটি সুন্দর ন্যায়সঙ্গত বিচার ব্যবস্থা রয়েছে। ইসলামী বিচার ব্যবস্থায় শুধু ঠুনকো সন্দেহের বশে একজনকে শাস্তি দেয়ার মত কোন আইন নেই। শাস্তির জন্য বেশ সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও প্রমাণ থাকতে হবে। হাদীসে উল্লেখ রয়েছে যে, রসূল ﷺ বলেছেন ” একজন নির্দোষ ব্যক্তিকে শাস্তি দেয়ার চেয়ে নয়জন দোষী ব্যক্তিকে ছেড়ে দেয়া উত্তম।” তাই একজনকে দোষী সাব্যস্ত করতে হলে তার অপরাধের যথেষ্ট প্রমাণ ও সাক্ষীর দরকার হয়।আবার শরীয়াহ আইনের অনেক ক্ষেত্রেই আইন সম্পর্কে অজ্ঞতা একটি বৈধ অজুহাত। কোন দোষী ব্যক্তি যদি আইন সম্পর্কে না জানে, তাহলে তাকে শরীয়াহ উক্ত অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে না। একজন অপরাধীকে উপযুক্ত কঠোর শাস্তি পেতে হলে তার নিজেরও আইন সম্পর্কে জানতে হবে এবং অপরাধের যথেষ্ট প্রমাণ ও সাক্ষী থাকতে হবে। ইবনে তায়্যিমিয়া বলেছিলেন, ” তুমি যদি কাউকে কোন অপরাধ করতে দেখো, তাহলে শুরুতেই কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করো না। তাকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে ও তাওবাহ করতে বলো”।

উমর (রাঃ) এর একটি ঘটনা আছে যে, তিনি যখন খলীফা ছিলেন, সে সময় তিনি হঠাৎ করে একজনের বাসায় প্রবেশ করেন। তিনি দেখতে পান ঐ ব্যাক্তি মদপান করছে এবং তার সামনে কিছু নারী নৃত্য পরিবেশন করছে। উমর (রাঃ) খুবই অপ্রস্তুত হয়ে গেলেন। তিনি আমীরুল মু’মিনিন ছিলেন। এরকম কাজের জন্য ঐ ব্যক্তিকে তিনি শাস্তি দিতে পারতেন। কিন্তু তিনি সেখান থেকে চলে আসলেন। তিনি নিজেও আসলে অনুমতি ব্যাতীত প্রবেশ করে ভুল করেছিলেন। কারণ কারো বাড়িতে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করাও ইসলামে হারাম। কিছুদিন পরে ঐ ব্যক্তির সাথে উমর (রাঃ) এর আবার দেখা হল। ঐ ব্যক্তি উমর (রাঃ) এর কাছে গিয়ে বলল, “আমি আমার কৃতকাজের জন্য আল্লাহর নিকট তাওবাহ করেছি।” উমর (রাঃ) এ কথা শুনে খুশি হয়ে গেলেন। তিনিও বললেন “আমিও তোমার বাড়িতে বিনা অনুমতিতে প্রবেশের জন্য তাওবাহ করেছি”। তাওবাহ এখানে মূল বিষয়। অন্য সবকিছুর চেয়ে এটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমরা কেউই চাইনা একজন মানুষের হাত কাটা হোক, কিংবা একজনকে পাথর মেরে হত্যা করা হোক।

রসুল ﷺ এর সময়কার সেই নারীর কথা আমরা সবাই জানি, যে যিনা করার পর নিজের অপরাধ স্বীকার করে আল্লাহর রসূল ﷺ এর কাছে এসেছিল এবং শাস্তি ভিক্ষা করছিল। আর রসূল ﷺ তাকে বলছিলেন যে “তুমি চলে যাও। তোমার সন্তান প্রসবের পর আসো।” সন্তান প্রসবের পর তাকে বলা হয় “তোমার বাচ্চাকে আগে লালন পালন করো, দুধ পান করাও।” ২ বছর দুধ পান করানোর পর সেই নারী আবার আসলে তখন তাকে শাস্তি দেয়া হয়। কিছু উলামা বলেন এই ২ বছর পর সেই নারী যদি না আসত, তাহলে কেউ তাকে ধরে আনতো না। রসুল ﷺ ব্যাপারটিকে অগ্রাহ্য করতেন।

আবার কেউ যদি কাউকে যিনার অপরাধে অভিযুক্ত করে, তাহলে সেই অপরাধের জন্য চারজন সত্য সাক্ষীর প্রয়োজন হবে, যারা কখনও মিথ্যা কথা বলে না, যারা ধার্মিক ও সচ্চরিত্রের অধিকারী। কোন সাক্ষী যদি মিথ্যুক হয়, তবে তার সাক্ষী গ্রহণযোগ্য হবে না। সাক্ষীদের দেয়া সাক্ষ্যের একে অপরের সাথে মিল থাকতে হবে। সাক্ষ্যের মধ্যে অমিল পেলেও তা গ্রহণযোগ্য হবে না। বরং তখন মিথ্যা সাক্ষ্যের জন্য সাক্ষীদের শাস্তি দেয়া হবে। আবার এই সাক্ষীদের কেউ অপরাধীর বাড়িতে গুপ্তচরগিরি করতে পারবে না। আমরা এই হাদীসও জানি যে, “কেউ যদি কারো বাড়িতে কোন ছিদ্র দিয়ে দেখো, তাহলে সেই বাড়ির মালিকের অধিকার রয়েছে তার চোখ কানা করে দেয়ার।” কারো বাড়িতে গুপ্তচরগিরি করা হারাম ইসলামে। তাহলে উপরোক্ত অপরাধ জনসম্মুখে ঘটতে হবে। কিন্তু এটা আসলে কখনই হয় না। এমনকি পশ্চিমা বিশ্বেরও কোন জায়গায় যিনার মত অপরাধ সাধারণত জনসম্মুখে ঘটে না। তাহলে ইসলাম শাস্তি কার্যকরের ক্ষেত্রে প্রথমে কতটা ছাড় দেয়ার মানসিকতা রাখে। উপযুক্ত প্রমাণ ও সাক্ষীর ঘাটতি থাকলে শাস্তি দেয়া কখনই সম্ভব নয়। কিন্তু পশ্চিমা মতাদর্শিক প্রেক্ষাপট থেকে অপারেশান মাইন্ডফ্রেম মানুষকে শিখাতে চায় যে, শরীয়াহ আইন বর্বর। শরীয়াহ আইনের কঠোরতম শাস্তিও যেভাবে কাজ করে, সুব হানাল্লাহ এটি একটি গভীর অনন্য আদর্শ বা কাঠামো যেটি পুরো মানব জাতিকে রক্ষা করবে।

অপরদিকে ধর্মনিরপেক্ষ উদারতা মানবতা এবং মানবজাতিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। উদারতা মানুষের আত্মকেন্দ্রিকতার উপর ভিত্তি করে চলে। আর আত্মকেন্দ্রিকতা আসলে এমন একটি ধারণা যেখানে ব্যক্তি নিজেকে এমন একজন আনমনা স্বত্ত্বা ভাবতে শুরু করে যে সমাজের সমস্ত বিষয়াদি থেকে বিচ্ছিন্ন। এমনকি নারীবাদী অ্যামেরিকান দার্শনিক অধ্যাপক ম্যারিলিন ফ্রীডম্যান বলেছেন যে, “আমরা ব্যক্তিবাদী বা আত্মকেন্দ্রিক হতে পারি না। যুক্তিগতভাবে এটা ভুল।” কারণ প্রকৃতিগতভাবেই সমাজে ব্যক্তিত্ববাদ বা আত্মকেন্দ্রিকতার কোন মানে হয় না। মানুষ মাত্রই সামাজিক জীব এবং মানুষ সবকিছু শেখেই সামাজিক অনুশীলনের মাধ্যমে।

এ ব্যাপারে সহীহ বুখারিতে একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে যেই হাদীসে মুসলিমদের অপরাধ, শাস্তি এবং সামাজিক শৃংখলার প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির একটা চিত্র পাওয়া যায়। আল্লাহর রসূল ﷺ বলেন, “আল্লাহর হুকুম ও বিধি-নিষেধ যারা মেনে চলে আর যারা সীমালংঘন করে তাদের দৃষ্টান্ত সেই ব্যক্তিদের মতো যাদের একদল একটি নৌকার উপরের পাটাতনে রয়েছে আরেক দল নিচের পাটাতনে রয়েছে। এখন নীচের পাটাতনে অবস্থিত লোকেদের পানির প্রয়োজন হলে তাদের বার বার উপরের পাটাতনে উঠে পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছিল। তারা একসময় বিরক্ত হয়ে ভাবলো যে তারা নীচের পাটাতনে পানির জন্য নৌকায় একটি ছিদ্র তৈরি করবে। এতে উপরের পাটাতনের কাউকে বিরক্ত করা বা তাদের কোন ক্ষতি করা হবে না। এখন ছিদ্র করলে আসলে কি ঘটবে? একসময় নৌকাটি ডুবে যাবে। আর উপরের পাটাতনের লোকেরা যদি নীচের পাটাতনের লোকদের বাঁধা না দেয়, তাহলে তারা সবাই একসাথে ডুবে যাবে, আর বাঁধা দিলে সবাই একসাথে রক্ষা পাবে।”

এখানে নৌকাটি আমাদের সমাজের একটি রূপক। আর উপরের পাটাতনের লোকেরা আল্লাহর হুকুম ও বিধি-নিষেধ মেনে চলা এবং নীচের পাটাতনের লোকেদের সীমালংঘনকারীদের রূপক হিসেবে বোঝানো হয়েছে। তাহলে মুসলিমদের কোন আত্মকেন্দ্রিক সমাজ ব্যবস্থা নেই। মুসলিমদের অপরাধ ও শাস্তি দেয়ার উপরও সমাজে নির্দিষ্ট কাঠামো ও ব্যবস্থা রয়েছে।

তাই আমাদের বুঝতে হবে যে আমরা আসলে কোন চশমা পড়ে জিনিসগুলোকে দেখছি।

এই আত্মকেন্দ্রিক সমাজগুলোতে নানামুখী সমস্যা রয়েছে। Amnesty International UK এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী ইংল্যান্ডে প্রতিদিন গড়ে ১৬৭ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়। আর বছরে ধর্ষণের শিকার নারীদের সংখ্যা প্রায় ৯০ হাজার। NSPCC – National Society for the Prevention of Cruelty to Children ইংল্যান্ডে শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে কাজ করে এমন একটি সংস্থা। তাদের গবেষণা অনুযায়ী প্রতি ৭ জন শিশুর মধ্যে ১ জন শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। প্রতিদিন প্রায় ১৪ জন শিশু গড়ে নির্যাতনের শিকার হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। আর মজার ব্যাপার হচ্ছে ইংল্যান্ডেই ২০০৯ সালে Children Society একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। যেই প্রতিবেদনের চতুর্থ পৃষ্ঠার শেষে তারা লিখেছে, “আমাদের সমস্ত সামাজিক অসুস্থতার মূল কারণ আত্মকেন্দ্রিকতা বা ব্যক্তিত্ববাদ।” এটা খুবই সূক্ষ একটা বিষয়। এছাড়াও সামাজিক বিচ্ছিন্নতার কারণে পাশ্চাত্য সমাজে এরকম বহুবার হয়েছে যে – একজন বৃদ্ধ পুরুষ বা মহিলা তার নিজের ঘরে মরে পড়ে আছে। আর আশেপাশের প্রতিবেশীরা কেউ জানে না। মাস পার হয়ে যায়, তারপর তারা একমাত্র তখনই জানতে পারে যখন লাশ পচে দুর্গন্ধ ছড়ায়।

অ্যামেরিকাতেও খুব কঠোর ব্যক্তিত্ববাদের অনুশীলন রয়েছে। আর ব্যক্তিত্ববাদের অ্যামেরিকান মডেল এখন কাতারের মত মুসলিম দেশগুলোও গ্রহণ করছে। অ্যামেরিকার অনেক জায়গাতেই এক কাপ কফি খাওয়ার জন্য প্রায় ১০ মিনিট গাড়ি চালিয়ে যেতে হয়। সে রাস্তাগুলোতে কোন ফুটপাথ নেই। সেখানে কোন সাম্প্রদায়িকতা বোধ, গোত্র বোধ নেই। নেই কোন মানবিকতাবোধ। কতটা ভয়ংকর!! এবং এর একমাত্র কারণ আত্মকেন্দ্রিকতা বা ব্যক্তিত্ববাদ। এটা এমন এক ধরণের মূল্যবোধ যেটা খুবই সূক্ষ এবং ধীরে ধীরে আমাদের মধ্যে প্রবেশ করানো হচ্ছে।

লন্ডনের আন্ডারগ্রাউন্ড টিউব স্টেশনগুলোতে দেখা যায় সেখানে নোটিশ টাঙ্গিয়ে দেয়া আছে যে, “দয়া করে গর্ভবতী মহিলা ও বৃদ্ধ ব্যক্তির জন্য আপনার আসনটি ছেড়ে দেন।” কিছু কিছু জায়গায় এই নোটিশের সাথে আরো সংযুক্তি থাকে যে – এটি আইন দ্বারা বাধ্যতামূলক। আপাতদৃষ্টিতে এটি খুবই সুন্দর একটি নোটিশ। কিন্তু মূল বিষয় হচ্ছে এই নোটিশটি তাদের কেন টাঙ্গাতে হয়েছে? কেন বলে দিতে হচ্ছে গর্ভবতী মহিলা ও বৃদ্ধ ব্যক্তির জন্য আপনার আসন ছাড়ুন। এর একমাত্র কারণ আত্মকেন্দ্রিকতা। আত্মকেন্দ্রিকতায় সবাই এতটাই মগ্ন যে এই সামান্য বিনীত কাজটাও কেউ বলে না দিলে করে না।

আর এই রোগ আমাদের মুসলিমদের মধ্যেও ঢুকে গেছে। অথচ আমরা রসূল ﷺ এর হাদীস ভুলে গেছি। যেখানে তিনি বলেছেন,”মুমিনরা একে অপরের আয়না স্বরূপ”। কোন মুসলিম যদি দুঃখ পেয়ে থাকে তাহলে তার অপর মুসলিম ভাইও তার দুঃখে কষ্ট পাবে। কেউ যদি আনন্দিত হয়, তবে তার আনন্দে অপর ভাইও আনন্দ পাবে। যদি কেউ কারো সামনে গুনাহ করে, তবে সেই গুনাহ এর দায়ভার অপর ভাই নিজের মনে করে গুনাহগার ভাইকে সংশোধন করে দিবে এবং তাওবাহ করতে বলবে। 

কিন্তু আমাদের মধ্যে কি দেখা যায় এখন? ধরুন কোন বোন পর্দা করা ছেড়ে দিয়েছে, পর্দা করা অন্য আরেক বোন তাকে সংশোধন করার পরিবর্তে তার পিছনে কথা বলতে শুরু করবে। সে আত্মতৃপ্ততায় ভুগবে যে আমি তো পর্দা করছি। আমাদের মানসিকতাই যেন এমন হয়ে গেছে অন্য কারো সাথে নিজেকে তুলনা করে অপর মানুষটার কোন দোষ খুঁজে পেলে নিজেকে নিয়ে আত্মতৃপ্ততায় ভোগা। কিন্তু একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের কিভাবে ভাবা উচিত? একজন মুসলিমা হিসেবে ঐ বোনের ভাবা উচিত ছিল যে আমার এক বোন পর্দা করা ছেড়ে দিয়েছে মানে আমি নিজে পর্দা করা ছেড়ে দিয়েছি। এ ব্যাপারে সে খুবই উদ্বিগ্ন ও চিন্তিত হবে। কারণ মুমিনরা তথা মুসলিমরা একে অপরের আয়না স্বরূপ। মুসলিমরা সকলেই একটি দেহের মত। দেহের এক জায়গায় ব্যথা অনুভব হলে যেমন পুরো শরীর উদ্বিগ্ন হয়, ঠিক একই ভাবে এক ভাই বা বোন সীমালঙ্ঘন করলে অপর ভাই বা বোনও সে ব্যপারে উদ্বিগ্ন – চিন্তিত হবে। তাকে সংশোধন করে দিবে। সংশোধন করার ক্ষেত্রেও আবার অনেক সময় দেখা যায়, যে গুনাহ করে ফেলেছে তাকে গিয়ে আমরা খুব রুক্ষভাবে বলা শুরু করি যে এটা তুমি কি করেছো? এটা হারাম, এটা বিদ’আত, তুমি শিরক করে ফেলেছো ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু এভাবে বলাটা সংশোধনের জন্য খুব কমই সহায়ক হয়। অপরদিকে আমরা আমাদের গুনাহগার ভাই বা বোনকে নসিয়াহ করার সময় যদি এমনভাবে তার সাথে কথা বলি বা আচরণ করি যেন আমরা আমাদের মায়ের সাথে কথা বলছি। তাহলে আমাদের নসীয়াহ করাটা আরও সুন্দর হবে। আর নসীয়াহ করা যদি শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যেই হয়, তবে সে ব্যক্তি নিজে আরো উত্তম ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। এটা খুবই সহজ। কিন্তু এই আত্মকেন্দ্রিকতা আমাদের এসব থেকে দূরে সরিয়ে রাখছে। আত্মকেন্দ্রিকতা অন্তরের অনেক বড় ধরণের একটা রোগ। এটা আমাদেরকে নিজেকে বড় ভাবতে শেখায়। এটা আমাদের সাদাকাহর কাজগুলোকে প্রভাবিত করে, আমাদের আচরণ এবং অন্য সবকিছুকেই প্রভাবিত করে।

তাহলে আমরা দেখলাম যে কিভাবে মতাদর্শিক প্রেক্ষাপট থেকে পশ্চিমারা শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে শুরু করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অন্যান্য সংস্থা, গণমাধ্যম, রাষ্ট্র ব্যাবস্থা ইত্যাদির ব্যবহার করে মুক্তচিন্তা, বাকস্বাধীনতা, ব্যক্তিত্ববাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, উদারতা এসবের নামে ভয়ংকর সব মতাদর্শ প্রচার করছে। এসব মতাদর্শের মাধ্যমে তারা ইসলামকে, বিশেষ করে শরীয়াহ আইনকে আক্রমণ করছে। আর আমরা মুসলিমরা তাদের দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছি। আমাদের মধ্যেও এসব মতাদর্শের বিষ ছড়িয়ে পড়েছে। আমাদের চলাফেরা, বেশ-ভূষা, কথা-বার্তা, চিন্তা চেতনা এমনকি খাওয়া দাওয়াও এখন পাশ্চাত্যের আদলে হয়ে গেছে।

এই অপারেশান মাইন্ডফ্রেমকে মোকাবেলা করতে হলে আমাদের মুসলিমদের মাইন্ডফ্রেমকে আগে ঠিক করতে হবে। সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। তাদের সকল অসৎ উদ্দেশ্য ও মতাদর্শের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। আমাদের দেখাতে হবে যে মুসলিমরা সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত। সকলের কাছে তুলে ধরতে হবে যে মুসলিমদের সমাজ কাঠামো থেকে শুরু করে প্রতিটা বিষয়ে ইসলামী-শরীয়াহ আইন সবচেয়ে উপযুক্ত। কারণ এসব আইন আল্লাহ প্রদত্ত ও এগুলো কিভাবে বাস্তবায়ন হবে তার উদাহরণ স্বয়ং আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ ﷺ আমাদেরকে দেখিয়ে দিয়ে গেছেন। আমাদের আরো আত্মবিশ্বাসী হতে হবে, স্পষ্টভাষী হতে হবে। মুসলিমরা নম্র ও বিনয়ী হবে, কিন্তু হক্ব প্রতিষ্ঠায় ও আল্লাহর আইন বাস্তবায়নে তারা হবে দৃঢ়প্রত্যয় ও বলিষ্ঠ কণ্ঠের অধিকারী। এখানে নম্রতা দেখালে চলবে না। ঠিক যেমনটা ছিলেন সাহাবীগণ। যার যার অবস্থান থেকে আমাদের একে অপরকে নসীয়াহ করতে হবে এবং স্মরণ করিয়ে দিতে হবে। 

আল্লাহ আমাদের সকলকে হক্বের উপর প্রতিষ্ঠিত করুন এবং ঈমানের উপর দৃঢ়পদ থাকার তৌফিক দান করুন।

শেয়ার করুন:

সাম্প্রতিক ব্লগ

ট্যাগ

অশ্লীলতা6 আকিদাহ বিষয়ক প্রশ্নোত্তর2 আখলাক1 আনুগত্য1 আমল31 আমল কবুলের শর্ত1 আসমা ওয়াস সিফাত11 ইবনে তাইমিয়াহ রহি.17 ইবনে তায়্যিমিয়া রহি.1 ইমাম আহমাদ ইবনে হামবাল রহি.3 ইশকে রাসুল স.3 ঈমান17 ঈমাম শাফিঈ রহি.1 উলামাকথন18 উসুলুস সুন্নাহ1 কবর1 কিয়ামত1 কুফর1 ক্বুরআন10 গাইরত2 জান্নাত2 জাহান্নাম2 জুমু'আ5 তাওহীদ14 তাফসীর4 দরসগাহ ম্যাগাজিন ২6 দাম্পত্য1 নারীবাদ1 পুঁজিবাদ1 প্রবন্ধ4 বদর1 বারাকাহ1 বাংলায় মুসলিম শাসনের ইতিহাস0 বিচার ফয়সালা5 বিজ্ঞানবাদ1 বিবিধ প্রশ্নোত্তর1 বিশুদ্ধ তাওবাহ3 বিশ্বকাপ1 মাজমুঊল ফাতওয়া2 মানহাজ1 ম্যাগাজিন1 যাকাত1 রমাদান1 রামাদান হাদিস2 রোযা2 শয়তানের চক্রান্ত1 শাইখ আহমাদ মুসা জীবরিল হাফি.1 শাইখ উসাইমিন রহি.1 শায়েস্তা খান0 শাস্তি1 শিরক1 সমকামীতা1 সাওম3 সাম্প্রদায়িকতা1 সালাত1 সাহাবী1 সিয়াম2 সিরাত1 সূরা আন নাবা1 সূরা আল আনককবুত1 সূরা আল হাজ্জ1 সূরা মাউন1 সূরা হূদ1 হত্যা1 হদ1 হাদিসে কুদসী3 হামজা জর্জিস1 হাশর1

সাবস্ক্রাইব করুন