গুনাহসমূহের মধ্যে গুনাহে জারিয়া খুবই ভয়ানক ও পরকালবিনাশী পাপ। একারণেই গুনাহে জারিয়ার ব্যাপারে বান্দাকে বেশি সচেতন করা হয়েছে। মানুষ ব্যক্তিগত অনেক বড় অপরাধ করেও নিমিষেই আন্তরিক তাওবার মাধ্যমে সেই পাপ থেকে রেহাই পেতে পারে। কিন্তু একটা গুনাহে জারিয়ার দায় শোধ করা খুবই কঠিন।
মুনযির ইবন জারীর থেকে বর্ণিত, তাঁর পিতা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
« مَنْ سَنَّ سُنَّةً حَسَنَةً فَعُمِلَ بِهَا كَانَ لَهُ أَجْرُهَا وَمِثْلُ أَجْرِ مَنْ عَمِلَ بِهَا لاَ يَنْقُصُ مِنْ أُجُورِهِمْ شَىْءٌ ، وَمَنْ سَنَّ سُنَّةً سَيِّئَةً فَعُمِلَ بِهَا كَانَ لَهُ وِزْرُهَا وَمِثْلُ وِزْرِ مَنْ عَمِلَ بِهَا لاَ يَنْقُصُ مِنْ أَوْزَارِهِمْ شَىْءٌ ».
‘যে ব্যক্তি কোনো ভালো কাজের প্রচলন ঘটাবে এবং অন্যরা সেটার অনুসরণ করবে তবে তার জন্য এর প্রতিদান লেখা হবে এবং এর অনুসরণকারীর অনুরূপ নেকীও লেখা হবে। অথচ তাদের প্রতিদান থেকে এতটুকু কমানো হবে না। অনুরূপ যে ব্যক্তি কোনো পাপ কাজের প্রচলন ঘটাবে এবং অন্যরা সেটার অনুসরণও করবে তবে সেই পাপের অন্য প্রচলনকারীর আমলনামায় যুক্ত হতে থাকবে। অথচ যে পাপ করবে তার পাপের সামান্য অংশও তাতে হ্রাস পাবে না।’
[ইবন মাজাহ্ : ২০৩; সহীহ ইবন হিব্বান : ৩৩০৮]
এক হাদীসে ইরশাদ হয়েছে-
« وَمَا مِنْ دَاعٍ يَدْعُو إِلَى ضَلاَلَةٍ إِلاَّ كَانَ عَلَيْهِ مِثْلُ أَوْزَارِهِمْ لاَ يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ أَوْزَارِهِمْ شَيْئًا ».
‘যে ব্যক্তি পাপের দিকে আহ্বান করবে সেই পাপের দায়ভার তার ওপরেও বর্তাবে। অথচ পাপকারীরও পাপের মধ্যে কোনো ঘাটতি হবে না।’
[মুয়াত্তা মালেক : ৫১৩, সহীহ]
এই হাদীসের আলোকে বিখ্যাত হাদীস ভাষ্যকার ইমাম নববী রহিমাহুল্লাহ বলেন, এই হাদীসে ভালো কাজের প্রচলন ঘটানোর প্রতি তাগিদ এবং মন্দকাজের প্রচলন ঘটানোর ভয়াবহতা উল্লেখ করা হয়েছে। এমনকি কারো কৃতপাপ অন্যরা অনুসরণ করতে থাকলে এবং তা যতদিন চলবে ততদিন সে ওই পাপের ভাগী হবে। এমনকি কেয়ামত পর্যন্ত চললে পাপও হবে কেয়ামত পর্যন্ত। সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হচ্ছে, শুধু মৃত্যুর পরেই নয়, জীবদ্দশাতেও সেই পাপগুলো সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির আমলনামায় যুক্ত হতে থাকবে।
ইমাম নববী রহিমাহুল্লাহ বলেন,
معناه إن سنها سواء كان العمل في حياته أو بعد موته والله اعلم
‘হাদীসের ব্যাখ্যা হচ্ছে, যে ব্যক্তি পাপ করে ও পাপের প্রচলন ঘটায় এবং অন্যরা তার অনুসরণ করে তবে তার জীবদ্দশা ও মরণের পর তার আমলনামায় ওই পাপ যুক্ত হতে থাকে।’
[শরহে নববী]
কাযী ইয়াজ রহিমাহুল্লাহ বলেন,
وهذا أصل فى أن المعونة على مالا يحل لاتحل ، قال الله تعالى : وَلاَ تَعَاوَنُواْ عَلَى الإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ وقد جعل الدال على الخير كفاعله وهكذا الدال على الشر كفاعله
‘এটাই মূলনীতি যে, হারাম কাজে কাউকে সহযোগিতা করা বৈধ নয়। কেননা আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন, তোমরা একে অপরকে পাপের কাজে সহযোগিতা করবে না। আর আল্লাহ তা‘আলা ভালো কাজের সহযোগীকে ভালোকাজের কর্তা এবং অনুরূপভাবে খারাপ কাজের সহযোগীকে খারাপ কাজের কর্তার অনুরূপ আখ্যায়িত করেছেন।’
[ইকমালুল মু‘লিম]
জনৈক কবি বলেন,
وَالمَرْءُ في مِيزانِه أتْباعُهُ
‘মানুষ কেয়ামতের ময়দানে তার আমলনামায় স্বীয় অনুসারীদেরকে দেখতে পাবে।’